এবারও সমস্যার নাম ডটবল!

২০৯ রানে অল আউট। স্কোর দেখে বোঝার উপায় নাই, রানটা অনায়াসেই আড়াইশো ছাড়ানো যেত। কিংবা ৩০০ এর আশে পাশে একটা ধাক্কা দেওয়া যেত। অন্তত ইনিংসের শুরুর চিত্র তাই-ই বলে। ইনিংসের প্রথম ১০ ওভার শেষে ৫৪ রান। আর ২০ ওভার শেষে প্রায় ৫ রান রেটে ৯৫ রান।

কিন্তু এরপরই ছন্দপতন। মন্থর গতিতে ব্যাটিংটাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনল কিনা! তামিম থেকে শুরু করে শান্ত, মুশফিক, রিয়াদ, সবাই নিজেদের উইকেট বাঁচাতেই যেন ইনিংসের শুরুটা করেছিলেন। তামিম তবুও একটু ভাল শুরুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেই পুরনো অভ্যাসেই বন্দী থেকেছেন তিনি। স্ট্রাইক রোটেট না করে বাউন্ডারির ওপর নজর দিয়েছেন বেশি। অতিরিক্ত ডট বলের বিপরীতে ইংলিশ পেসাররাও একটা সময়ে আগ্রাসী হয়ে উঠতে শুরু করে।

আর তাতেই মার্ক উডের গতিতে পরাস্ত হন তামিম ইকবাল। ৩২ বলে ২৩ রানের ইনিংসেই শেষ হয় তামিমের ইনিংস। কিন্তু সাদা চোখে যেটা ধরা পড়ে না, তা হচ্ছে ৩২ বলের ২০ টিতেই তিনি ডট দিয়েছেন।

শুধু যে তামিম ইকবাল একাই ডটবল খেলেছেন, সেটি নয়। দলের অন্য ব্যাটাররাও তামিমেরই পথ ধরে সমানে বল খুইয়েছেন। কোনো ব্যাটারই স্ট্রাইক রোটেট করতে পারেননি। ইংলিশ ফিল্ডারদের ব্যস্ত রাখতে পারেননি। কোনোভাবে গ্যাপে টানা সিঙ্গেল, ডাবলস তুলে নিতে পারেননি। মোদ্দাকথা, ইংলিশ বোলারদের উপর স্ট্রাইক রোটেট করে মাঠ সরগরম করতে পারেননি কোনো ব্যাটার।

বাংলাদেশ অল আউট হয়েছে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষ হওয়ার ১৬ বল আগেই। অর্থাৎ ২৮৪ বলে সর্ব সাকুল্যে ২০৯ রান জমা হয়েছে স্কোরবোর্ডে । তবে অবাক করা ব্যাপার হল, বাংলাদেশের ইনিংসে ২৮৪ বলের মধ্যে ১৫৮ বলে কোনো রানই আসেনি। অর্থাৎ ১৫৮ টা বল ডট! শতাংশের হিসেবে যা ৫৫.৬৩%।

দলীয় ইনিংস পাশে রেখে ব্যক্তিগত ইনিংসে চোখ দিলে এই চিত্রটা আরো ভয়াবহ। তামিম ইকবাল তাঁর খেলা ৩২ বলের মধ্য ৬২.৫ শতাংশ বলেই ডট দিয়েছেন। লিটন কুমার দাস এ দিন মাত্র ৭ রান করেই ফিরে গেছেন। কিন্তু নিজের খেলা ১৫ টা বলের মধ্যে মাত্র ২ টা বলে রান করতে পেরেছেন।

বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রানের ইনিংস খেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু এ ইনিংস খেলার পথে ৮২ বলের মধ্যে ৪৩ টিতেই তিনি ডট দিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁর খেলা প্রায় ৫২ শতাংশ বলে কোনো রান আসেনি। নিজের প্রথম ওয়ানডে ফিফটির দিনে তাই ব্যক্তিগত পরিসংখ্যানই কিছুটা সমৃদ্ধ হয়েছে, দলের তেমন বড় কোনো কাজে আসেনি। অন্তত অন্যান্য ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ইনিংস মেরামতের যে দায়িত্বটা তিনি পেয়েছিলেন, তা ঠিকঠাক ভাবে করে আসতে পারেননি।

মুশফিকুর রহিমের ক্ষেত্রে চিত্রটা আরো বাজে। ইনিংসের শুরু থেকেই ইংলিশ পেসারদের পেস সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। তবে ধরা দিয়েছেন আদিল রশিদের স্পিন ভেলকিতে। ৩৪ বলে ১৭ রান করে ফিরে যান তিনি। তবে এই ছোট্ট ইনিংস খেলার পথে তিনি বল খুইয়েছেন ২১ টা। যা মোট বলের প্রায় ৬২ শতাংশ।

মুশফিকের মতো একই সুইপ শট খেলতে গিয়ে মইন আলীর বলে বোল্ড হয়েছেন সাকিব। মাত্র ৮ রানেই প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দিতে হয় তাঁকে। তবে এর পিছনেও রয়েছে ডট বলের চোখ রাঙানি। সাকিব বরাবরই স্ট্রাইক রোটেট করে খেলতে পছন্দ করেন। কিন্তু এ ম্যাচে ক্রিজে এসে কয়েকটা ডট বল খেলাতেই চাপে পড়ে যান তিনি। আর সেই চাপ থেকে বের হতেই তিনি শট খেলতে উদ্যত হন। যার পরিণামে ছোট ইনিংস খেলেই বিদায় নিতে হয় তাঁকে।

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শুরুর ব্যাটিংয়ে সব সময় একটা ভঙ্গি স্পষ্ট। সেটা রক্ষণাত্বক। এ ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ৪৮ বলের অর্ধেক বলই তিনি খুইয়েছেন। ব্যাট হাতে ৩১ রান করছেন। তবে যে সময়ে তিনি আউট হলেন, সে সময়ে তাঁর উইকেটে থাকা খুব জরুরি ছিল। কিন্তু দিন শেষে, অতিরিক্ত ডট বলের চাপেই তিনি পরাস্ত হয়েছেন। আর একই সাথে বাংলাদেশের সম্ভাব্য একটা সুন্দর সংগ্রহেরও অপমৃত্যু হয়।

ডট বল নিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের উপর অভিযোগ নতুন কিছু নয়। খুব কম ব্যাটারই রয়েছেন যারা স্ট্রাইক রোটেট করে খেলেন। কিন্তু একটা ইনিংসের অর্ধেক বলই নষ্ট করা মানে এই সময়ের ক্রিকেট অনেক খানি পিছিয়ে যাওয়া।

শুধু বাউন্ডারির উপর ভরসা রেখে উন্নতি স্রেফ অসম্ভব। আসন্ন ওয়ানডে বিশ্বকাপে ব্যাটিং সহায়ক পিচে খেলা হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাটারদের এমন এপ্রোচ বদলাতে না পারলে সেখানে একটা ভরাডুবি ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link