একটা যুদ্ধ কখনই শান্তির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে না। একটা যুদ্ধ কেবলই আর্তনাদ, ধ্বংসজজ্ঞ আর সহিংসতা। যে সহিংসতা থেকে বাদ যায় খেলাধুলাও। এই যে বর্তমান বিশ্ব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক যুদ্ধ প্রভাব ফেলছে ফুটবল অঙ্গনে। এই যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব চেলসির কথাই ধরা যাক না কেন। কি এক দোলাচলের মধ্যে দিন পার করছে গত মৌসুমের ইউরোপিয়ান শিরোপা জেতা ক্লাবটি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার গোটা ইউরোপ। একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হচ্ছে দেশটি। সেই নিষেধাজ্ঞার বলি এবার চেলসির সত্ত্বাধিকারি রোমান আব্রামোভিচ। রাশিয়ান এই বিলিনিয়রের সবধরণের অর্থনৈতিক লেনদেন স্থগিত করেছে ইংল্যান্ড সরকার। তাছাড়া ইংল্যান্ডে থাকা তাঁর সকল সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে ইংলিশ সরকার। এমতবস্থায় চেলসি নিমজ্জিত গভীর শঙ্কায়।
ক্লাবের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার সময় পার করছেন ভক্ত সমর্থক থেকে শুরু করে খেলোয়াড় , কর্মকর্তা সকলেই। ক্লাবকে বিক্রি করে দেওয়ার একটি ঘোষণা এসেছিলো আব্রামোভিচের কাছ থেকে। তবে সেটাও হচ্ছে না এখন। এমন অবস্থায় সবার মনেই হয়ত প্রশ্ন জেগেছে মৌসুমের মাঝ পথে এমন এক পরিস্থিতি সামলে নিবে কি করে চেলসি। তাছাড়া ক্লাব পরিচালনা হবেই বা কি করে।
তবে দুশ্চিন্তা খুব বেশি কারণ নেই। পৃথিবী নন্দিত ম্যাগাজিন ফোর্বসের মতে পৃথিবী মধ্যে সপ্তম দামী ক্লাব চেলসি। এর মূল্য প্রাইয় ৩.২ বিলিয়ন পাউন্ড। আর এত গুরুত্বপূর্ণ এক ক্লাবকে তো আর অথৈ সমুদ্রে ফেলে দিতে পারে না ইংলিশ সরকার। তাই তাঁরা চেলসির পুরো দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন সাময়িক সময়ের জন্য। সরকার প্রদত্ত বিশেষ অনুমতি মেনেই পরিচালিত হবে ক্লাবটি। এই বিশেষ অনুপতির প্রধান লক্ষ্য ফুটবল ও এর সংশ্লিষ্ট সকল সেক্টরকে বাঁচিয়ে রাখা।
তবে এর আওতাধীন থাকাকালীন সময়ে ক্লাবের সমস্ত ধরণের আর্থিক লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হবেন রাশিয়ান নাগরিক রোমার আব্রমোভিচ। যেহেতু ইউরোপের বাকি দেশগুলোর মতো ইংল্যান্ডও রাশিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা ক্লাব পরিচালনায় কেমন প্রভাব ফেলবে সে বিষয়ে একটা সংক্ষিপ্ত আলোচনা থাকছে আজ।
- বিক্রি এবং বেতনাদি
বিশেষ অনুমতি মোতাবেক এবং নিষেধাজ্ঞার ফলস্বরুপ ক্লাবটিকে আপাতত বিক্রি করতে পারছেন না রোমার আব্রামোভিচ। তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন হয়ত অদূর ভবিষ্যতে ক্লাবটিকে বিক্রির আলাদা এক অনুপতিপত্র প্রদান করা হবে সরকারে পক্ষ থেকে। সেই সাথে খেলোয়াড়দের বেতন-ভাতা, ক্লাবের খরচ ও পেনশনের পেছনে স্বাভাবিকভাবেই অর্থ খরচ করতে পারবে ক্লাবটি।
তাছাড়া লোনে থাকা কিংবা বিক্রি করে দেওয়া খেলোয়াড়দের বিনিময়ে বাকি থাকা অর্থ গ্রহণ করতে পারবে চেলসি। পাশাপাশি টেলিভিশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ এবং পারফর্মেন্স অর্থপুরষ্কার গ্রহণ করতে পারবে। তাছাড়া পুরো মৌসুমের টিকিট কিনে ফেলা দর্শকরা মাঠে বসে দেখতে পারবেন চেলসির খেলা।
- ট্রান্সফার মার্কেট
নতুন এই বিশেষ অনুমতি মোতাবেক চলতে গেলে ক্লাবটি সবচেয়ে বেশি যে সমস্যার মুখোমুখি হবে তা হচ্ছে নতুন করে খেলোয়াড় কেনাবেঁচায়। কোন নতুন খেলোয়াড় কিনতে কিংবা বেঁচতে পারবে না চেলসি। অতএব এমন পরিস্থিতে চুক্তি শেষের দিকে থাকা খেলোয়াড়দের সাথেও আলাপ-আলোচনায় যেতে পারবে না চেলসি। দলের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের চুক্তির মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। তাঁদের সাথে চুক্তি নবায়নে বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখতে হবে চেলসি ম্যানেজমেন্টকে।
- ভ্রমণ খরচ
সাধারণত ইউরোপে হোম এবং অ্যাওয়ে ভিত্তিতে ম্যাচগুলো হয়ে থাকে। তাই দলগুলোকে প্রতিপক্ষের শহর কিংবা মাঠে গিয়ে খেলতে হয়। সেজন্যে ভ্রমণের জন্যের অর্থ ব্যয় করতে হয় ক্লাবকে।
সেদিক থেকে খানিকটা বিপাকে পড়ে গেলো চেলসি। সর্বোচ্চ ২০ হাজার পাউন্ড অবধি ভ্রমণে খরচ করতে পারবে চেলসি। অন্যদিকে ঘরের মাঠে ম্যাচ আয়োজনে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ পাউন্ড খরচ করার অনুমতি পেয়েছে ক্লাবটি।
- মার্চেন্ডাইজ
ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে ক্লাব জার্সি এবং নানানরকম দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা রয়েছে । সেই সব মার্চেন্ডাইজ বিক্রি করেও অর্থ উপার্জন করে থাকে ক্লাবটি। তবে নতুন নিয়মে এই মার্চেন্ডাইজ বিক্রির কোন লভ্যাংশ পাবে না ক্লাব কিংবা আব্রামোভিচ। এমনকি নতুন করে কোন মার্চেন্ডাইজ সরাসরি বিক্রি করতে পারবে না ক্লাব। তাছাড়া ১০ মার্চের আগে তৃতীয় কোন পক্ষের তৈরি করা মার্চেন্ডাইজ বিক্রির অনুমতি রয়েছে। সেই বিক্রির কোন ধরণের লভ্যাংশও পাবে না চেলসি।
এমন এখন কঠিন পরিস্থিতি মুখে চেলসির মতো এক প্রতাপশালী ক্লাবকে ঠেলে দিয়েছে এক যুদ্ধ। হয়ত এই পরিস্থিতির সমাধান মিলবে অচিরেই। তবে ক্লাবের খেলোয়াড়দের মানসিকতায় প্রভাব ফেলবে না তা বলে দেওয়া দুষ্কর। এই পৃথিবী কাটিয়ে উঠুক এমন সংকটময় সময়। এই পৃথিবী হোক শান্তির এবং খেলাধুলার।