লাল সাগরের পাড়ে, সৌদি আরবের জেদ্দায় হয়ে গেল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মেগা নিলাম। ধনকুবেরদের দেশে দু’দিনে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো খরচ করল ৬৩৯ কোটি ১৫ লাখ রুপি। জনমনে তাই কৌতূহল, নিলামের জন্য কেন জেদ্দাকে বেছে নিল ভারত?
প্রবাদে আছে – উঠন্তি মূলা পত্তনেই চেনা যায়। সোজা বাংলায়, সৌদি যে ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকছে তা এখন দিনের আলোর মত স্পষ্ট। ২০২৩ আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই ভারতের ক্রিকেট কর্তা জয় শাহের সাথে দেখা গিয়েছিল সৌদি আরব ক্রিকেট ফেডারেশনের (এসএসিএফ) সভাপতিকেও।
এসএসিএফের সভাপতি রাজপুত্র মিশাল বিন সৌদ আল সৌদ আলোড়ন তোলা সব চুক্তির জন্য বেশ খ্যাত। ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল কোম্পানি আরামকোর সাথে চুক্তি করেছে আইসিসি। এবার তাদের নজর আইপিএলে।
নিজেদের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চায় সৌদি। তেলের উপরে নির্ভরতা কমাতে ট্যুরিজম আর খেলাধুলায় চোখ তাদের। জনবহুল দেশ ভারতকেই মূল লক্ষ্য ধরেছে তারা, গত আইপিএলের নিলাম শুধু স্টার স্পোর্টসেই দেখেছিল ২০ মিলিয়নের উপরে মানুষ। পাবলিসিটির জন্যই তাই পা বাড়িয়েছে সৌদি।
ক্রিকেটটা এখনও আনাড়ি সৌদিতে। পুরুষ জাতীয় দল প্রাক বাছাইপর্বেও হেরেছে বাজে ভাবে, আইসিসি র্যাংকিং ৩৩। নারী দলের অবস্থা আরও বাজে। তবে সৌদির বিনিয়োগের দিকে তাকালে সহজেই অনুমেয় যে, তারা এখানেও উন্নয়ন করতে যাচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে।
ওলেক্সান্ডার ইউসিক, মাইক টাইসনদের বক্সিং কম্পিটিশনও আয়োজন করছে তারা। ফুটবলে তো বিপ্লবই নিয়ে এসেছে তারা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, করিম বেনজেমা, নেইমার জুনিয়রদের মত জগতজয়ী তারকাদের এনে সৌদি ফুটবল লিগের চেহারাই বদলে দিয়েছে তারা।
দুই বছর আগেও গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেওয়া সৌদির পরিকল্পনা এখন ‘ভিশন ২০২৩’। যার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে খেলাধুলা। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশেরই প্রতিচ্ছবি এগুলো। এমনকি এই ধারাবাহিকতায় তারা কিনেছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল নিউক্যাসেল উইনাইটেডও। তেলসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত।
যদিও বাস্তবতা বলছে খুব দ্রুত চাইলেও ক্রিকেটে উন্নতি করতে পারবে না, কারণ আইসিসির রুলসের বাঁধা। নিয়ম অনুযায়ী লিগে একদলের হয়ে সর্বোচ্চ চারজন বিদেশি খেলতে পারবেন। সৌদির তাই ক্রিকেট লিগ জনপ্রিয় করতে চাইলে বাড়াতে হবে নিজেদের আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়।
ইংলিশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি রিচার্ড থম্পসন ও। সানডে টাইমসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তাদের এমন লিগ আয়োজন করার ক্ষমতাই ক্রিকেটের জন্য ক্ষতিকর। দেখেন তারা আমাদের বা অন্যদের খেলোয়াড় নিয়ে কি ছেলেখেলাটাই নয়া করছে!’
তার কথার সত্যতা মিলে ইংলিশ তারকা বেন স্টোকসের কথায়। তিনি বলেন, ‘টাকার সাথে আপনি আপোষ করতে পারবেননা, বিশেষ করে সৌদি যে পরিমান টাকা অফার করে।’
টাকার ঝনঝনানি আছে আইপিএলেও , তবে তারও আছে সীমাবদ্ধতা। ১২০ কোটির উপরে খরচ করতে পারবে না কোন দল। যে পরিমান টাকা গলফ,ফুটবলে সৌদি খরচ করে তার কাছে এটি মামুলিই বটে। তাই রাতারাতি ক্রিকেটে ভালো করার সম্ভাবনা আপাতত সৌদি আরবের নেই।