অসময়ে জন্ম নেওয়া এক পার্শ্বনায়ক

ভুল সময়ের আড়ালে কখনো কখনো ঢাকা পড়ে যায় প্রতিভা। স্কট বোল্যান্ড তেমনই এক দুর্ভাগা নাম। স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডদের ভিড়ে মিটিমিটি করে জ্বলে থাকা এক প্রদীপের নাম। যা দমকা বাতাসে নিভে যায় না, সুযোগ পেলেই ছড়িয়ে দেয় আলোর তেজ।

ভুল সময়ের আড়ালে কখনো কখনো ঢাকা পড়ে যায় প্রতিভা। স্কট বোল্যান্ড তেমনই এক দুর্ভাগা নাম। স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউডদের ভিড়ে মিটিমিটি করে জ্বলে থাকা এক প্রদীপের নাম। যা দমকা বাতাসে নিভে যায় না, সুযোগ পেলেই ছড়িয়ে দেয় আলোর তেজ।

অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী অঞ্চল থেকে উঠে এসে বিশ্ব কাঁপানো পেস আক্রমণের অংশ হওয়া তো নেহাৎ চাট্টিখানি কথা নয়। একেকটা বলের পেছনে ঘাম ঝরিয়েছেন, পরিশ্রমের আগুনে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন। দিনশেষে ব্যাটারের উপড়ে ফেলা স্টাম্প হয়তো দেখেছে সেই অদৃশ্য লড়াইয়ের বাস্তবতা।

লাইন, লেংথ বজায় রেখে টানা বোলিং করা, আর নিখুঁত ডেলিভারিতে ব্যাটারদের জন্য ভয়ংকর হয়ে ওঠা—এসবই তাকে আলাদা করেছিল ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে।

 

তবে সেটা ছিল এক সাদামাটা গল্প। জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া চাঞ্চল্যকর মুহূর্ত আসে ২০২১ সালে। অ্যাশেজে সুযোগ পেলেন করলেন বাজিমাত। অভিষেক টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার ওভার বল করে সাত রান দিয়ে তুলে নেন ছয় উইকেট। বদলে যায় সবকিছু, রাতারাতি উঠে এলেন আলোচনার টেবিলে। আড়ালে প্রতিভা ঢাকা পড়লে পরিশ্রম সবকিছুই সামনে নিয়ে আসে। বোল্যান্ডের সাথেও যেন তাই হলো।

তবে একাদশে নিয়মিত সুযোগ পাওয়াটা ছিল সোনার হরিণ। অজিদের  পেস-ত্রয়ীকে ডিঙিয়ে সামনে আসাটা যে এভারেস্ট ডিঙানোর মতোই। তবুও সুযোগ এলো। ২০২৩ ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে খেললেন, দলের জয়ে অবদান রাখলেন। এরপর আবারও চলে গেলেন পর্দার আড়ালে। ধীরে ধীরে তাঁকে ভুলতে বসলো সময়।

তবে যার সক্ষমতা আছে আকাশ ছোঁয়ার, সেটা সে না পারলেও আকাশের বুকে উড়তে তো পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টনে হ্যাটট্রিক করলেন, ডে-নাইট টেস্টে যা প্রথমবার কেউ করলো। স্টার্কের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধসিয়ে দিয়েছিলেন ক্যারিবীয়দের।

আলো-আধারের বাস্তবতায় যতটুকু সুযোগ ছিল, কাজে লাগিয়েছেন বোল্যান্ড। পরিস্থিতি বুঝে বোলিং করা, নিখুঁত লাইন-লেংথের কারুকাজ—প্রায় ১০ বছরের ক্যারিয়ারে এগুলোকেই তো অস্ত্র বানিয়ে লড়ে যাচ্ছেন।

মাত্র ১৪ টেস্টে ১৬.৫৩ গড়ে তুলেছেন ৬২ উইকেট। যা তাঁর সক্ষমতার দলিলপত্র। জীবন কাউকে বারবার সুযোগ দেয়, সেই জীবনই কারো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বোল্যান্ড যেন তেমনই একজন, ঈশ্বরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্ভাগা এক নাম। তবুও নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে  নীরব যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন সময়ের সাথে। দিনশেষে পার্শ্বচরিত্রকে কেউ মনে না রাখলেও, সে চরিত্রের একটা তো প্রভাব থেকেই যায়। স্কট বোল্যান্ড হয়তো ভুল সময়ের সেই শক্তিশালী চরিত্র, যার প্রভাব বাইশ গজে দাগ কেটে দেয়।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link