বাস্তবতার শিকার মাশরাফি

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য প্রাথমিক দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। ২৪ সদস্যের ওয়ানডে দলে জায়গা হয়নি মাশরাফি বিন মর্তুজার। এই নিয়ে গরম এখন ক্রিকেট পাড়া। দল ঘোষনার পর নির্বাচক হাবিবুল বাশার অবশ্য বলেছেন, মাশরাফি এখনো যথেষ্ট ভালো ক্রিকেটার, তবে বাস্তবতার কাছে হার মানতে হয়েছে তাকে।

করোনা বিপর্যয়ে দীর্ঘ দিন হলো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে রয়েছে বাংলাদেশ। গত মার্চে মাশরাফির নেতৃত্বেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছিলো টাইগাররা। সেই সিরিজেই ওয়ানডের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মাশরাফি। তবে ঘোষণা দিয়েছিলেন অধিনায়কত্ব ছাড়লেও খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি। অধিনায়কত্ব ছাড়ার পরই সবাই অনুমান করেছিলো এটিই বুঝি মাশরাফির শেষ অধ্যায়। অবশেষে সেই অনুমানই অনেকটা সত্যি হয়ে দাঁড়াল।

বঙ্গুবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শেষের দিকে ফিরে বল হাতে ভালো করলেও দলে জায়গা হয়নি সাবেক এই অধিনায়কের। মাশরাফি যথেষ্ট ফিট থাকলেও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রাথমিক দলে রাখা হয়নি বলে জানিয়েছেন হাবিবুল বাশার সুমন।

তিনি বলেন, ‘দেখেন মাশরাফি ২০ বছর ধরে আমাদের সার্ভিস দিয়ে আসছে। মাশরাফি কি করেছে আমরা সবাই জানি। সো ওর সাথে কারো কম্পেয়ার আমি করব না। ও সবসময় আমাদের জন্য আইকনিক প্লেয়ার ছিল। যেটা বললাম ওভার দ্যা ইয়ারস সে আমাদের দেশকে সার্ভিস দিয়ে এসেছে। যেহেতু আমাদের প্রধান নির্বাচক বলেছেন আমাদের ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে। দেখুন এখনো আমি মনে করি হি ইজ স্টিল গুড বাট এক বছর এটা কঠিন হয়ে যাবে এটাই বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে আমরা যদি সামনের দিকে তাকাই নতুন কাউকে সুযোগ দেই। আমরা মনে হয়না ওর সাথে এখনই কাউকে কমপেয়ার করাটা ঠিক হবে। এটা এক্সপেরিমেন্টাল না; সামনের জন্য ওদেরকে তৈরি করে দেয়া।’

প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও মাশরাফির বাদ পড়ার কারণ হিসাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাই জানিয়েছেন। তিনি বলেন,  ‘তরুণ ক্রিকেটারদের তো আমাদের জায়গা দিতে হবে। আমাদেরকে তো ওদেরও একটা সুযোগের জায়গা দিতে হবে। সুতরাং ২০২১ সালে আমরা নতুনভাবে শুরু করছি, ১০ মাস পরে সবাই কিন্তু নতুন করে শুরু করছে। ১০ মাসে কিন্তু অনেক পিছিয়ে গেছি এই মহামারীতে। সেই হিসেবে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, রিফ্রেশলি শুরু করছি ইনশাআল্লাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে ভালো ক্রিকেট শুরু করতে চাই।’

তবে মাশরাফির বিষয়ে সিদ্বান্ত শুধু দুই নির্বাচকই নেননি। বরং টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে প্ল্যানের কথা বলা হয়েছে তাদের। এবং সিদ্বান্ত যৌথ ভাবেই নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক কিছই ইস্যু এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে টিম ম্যানেজম্যান্ট আমাদেরকে অনেক কিছুর প্লান দিয়েছে এবং আমরাও আমাদের প্লান নিয়ে অনেক আলোচনা করেছি। যেটা বললাম যে, অনেক আলোচনার পরেই সিদ্ধান্তের মাঝে এসেছি এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমরা আমাদের দেশের ক্রিকেটের কথা চিন্তা করে, আগামীতে এগিয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

নান্নুর পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সবাই সবকিছু জেনে ও বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘এখানে সব কিছু নিয়েই আলোচনা হয়েছে। কোন কিছুই গ্যাপ রাখা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্টের প্ল্যান, ওর ফিটনেস ট্রেইনার, বোলিং কোচ সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পুরো টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা বলে , সব ডিপার্ট্মেন্টের সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তবে মাশরাফিকে বাদ দেওয়া কঠিন ছিলো বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক। দল ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘আমাদের রেস্পেক্ট ওর প্রতি আছেই এবং আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু দিয়েছে। এটা একটা কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল। তাহলেও বাস্তবতা আমাদের মানতেই হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সবাই সম্মিলিত ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মাশরাফিকে বাদ দিতে হয়েছে। সেই হিসেবে আমি মনে করি যে নতুন ভাবে যে চলা ওর জায়গায় যেই খেলবে অর জন্য অবশ্যই এটা অনেক বড় সুযোগ।’

মাশরাফির সাথে আলোচনা করেই সিদ্বান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি। নান্নু বলেন, ‘আমি কথা বলেছি তার সাথে। ওর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমার যতটুকু মনে আছে ওকে আমি বলে দিয়েছি। ওর সাথে আমার আলোচনা হয়েছে আপনাদের সাথে তো বলতে পারবো না। আমরা সঙ্গে ভালোই কথা হয়েছে। মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের কিছু নাই।’

মাশরাফির আর কখনো ফিরে আসার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘ও খেলা চালিয়ে যাবে ও সেটা বলেছেই। এটা পুরোপুরি তো ওর ওপর। ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবে দেখা যাক কি হয়।  এটা তো আমরা বলতে পারি না ওর পারফরম্যান্স কি হবে না হবে। তখন দেখা যাবে সেটা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link