দলে না থেকেও যিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে লিওনেল মেসি; তাঁকে ঘিরে নাচছে উল্লসিত আর্জেন্টিনা ফুটবল দল। আকাশি-সাদা জার্সিধারীরা একে অপরের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছেন; আর লাউতারো মার্টিনেজ তো মাইক হাতে পুরোদস্তুর গায়ক বনে গিয়েছেন। আর উপর থেকে ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছিলো শ্যাম্পেন – সবমিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ।

আর এই উদযাপনে আর্জেন্টাইন দলের সঙ্গী হয়েছিলেন এমন একজন যিনি আসলে ছিলেনই না বিশ্বকাপ জয়ে। স্কোয়াডে না থেকেও ট্রফি উঁচিয়ে ধরা সেই তারকার নাম সার্জিও আগুয়েরো – আলবিসেলেস্তাদের কাছে তো বটেই ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকদের কাছেও তিনি কিংবদন্তির চেয়ে বেশি কিছু। আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়দের কাছেও আগুয়েরোর মর্যাদা অন্য রকম, এজন্যই দলের সাথে একসঙ্গেই মেতে উঠেছিলেন বিশ্ব জয়ের আনন্দে।

হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে ফুটবল থেকেই অকালেই অবসর নিয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। তবে ফুটবলের প্রতি, দলের প্রতি আবেগ-ভালবাসা একটুও কমেনি তাঁর। তাই তো আর্জেন্টিনার ফুটবলার অনেকের চেয়ে বেশি মাত্রায় উচ্ছ্বসিত ছিলেন এই স্ট্রাইকার। আর এসব মুহূর্তের গল্পই এবার প্রকাশ করেছেন তিনি।

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম টুইচ-এ সার্জিও আগুয়েরো কাতার বিশ্বকাপের বেশ কয়েকটি গল্প বলেছেন। এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে দুইটি ঘটনা।

প্রথমটি ছিল যখন বন্ধু লিওনেল মেসি এই তারকাকে মদ্যপান বন্ধ করতে বলেছিলেন, কেননা হার্টের সমস্যার কারণেই এখন ফুটবল মাঠে দেখা যায় না তাঁকে। সার্জিও আগুয়েরো বলেন, ‘আমি প্রচুর ড্রিঙ্ক করছিলাম তখন, এমনকি খাবার খেতেও ভুলে গিয়েছিলাম। আমার ভিতরে অদ্ভুত এক ঘোরের সৃষ্টি হয়েছিল; মনে হচ্ছিলো আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, আমার কিছু হলে কাতারেই হোক, সমস্যা কি।’

এই স্ট্রাইকার আরো যোগ করেন, ‘একটা সময় লিও খুবই রাগান্বিত হয়ে পড়ে। সে আমাকে থামতে বলে। আমি তাঁকে পাল্টা জিজ্ঞেস করে সে কি বোঝাতে চায়? আমরা তখন বিশ্বজয়ী দল, আমি তাই খুবই ভাল বোধ করছিলাম। এমনকি আমার মনে হচ্ছিল যে আমার হৃদপিণ্ড সুস্থ হয়ে গিয়েছে।’

অন্য গল্পটি আরো আইকনিক আর রোমাঞ্চকর। লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেয়ার পর টুর্নামেন্টের অন্যতম স্মরণীয় একটি মুহুর্তের জন্ম হয়েছিল মেসি আর আগুয়েরোর হাত ধরে। এসময় আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে কাঁধে তুলে মাঠে ঘুরেছিলেন সাবেক সিটি তারকা।

সে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সার্জিও আগুয়েরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে আমি বিশ্বকাপ শিরোপা স্পর্শ করেছি; আমি বিশ্বাস করতে পারিনি যে ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে আমি কাঁধে তুলেছি। সত্যি বলতে আমি পিঠে তখন ব্যাথা পেয়েছিলাম। আবার মেসি যাতে উল্লাস করতে পারে এজন্য কাঁধ নড়াচড়া করতে হয়েছিল।’

তবে বন্ধুর চোখের দিকে তাকিয়ে সেই কষ্ট বুঝতে পেরে তখনই নেমে গিয়েছিলেন পিএসজি ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি। সেই সাথে পনেরো মিনিটের মত বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরে রেখেছিলেন তিনি। প্রায় ছয় কেজি ওজনের এই ট্রফি ধরে রাখার সময়ও ব্যাথা পেয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার।

ঘটনা সেখানেই শেষ হয়নি। বিশ্বকাপ উন্মাদনায় নিজের ছেলের কথাও ভুলে গিয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। তিনি জানান, “আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা আমাকে তাদের সাথে আর্জেন্টিনায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তারা আমাকে তাড়াহুড়ো করতে বলেছিল কারণ বিমান উড্ডয়নের সময় কাছাকাছি ছিল। তাদের প্রস্তাবে আমিও রাজি হয়ে যাই। এরপর পাসপোর্ট দেখিয়ে উঠে পড়ি বিমানে।”

এরপরই নিজের সন্তানের কথা মনে পড়ে সার্জিও আগুয়েরোর। তিনি বিমানে উঠলেও তাঁর ছেলে রয়ে গিয়েছিল অ্যাপার্টমেন্টে। বাধ্য হয়ে তাই ফিরে আসতে হয় তাঁকে কেননা পিতার পুত্রের ভালবাসার কাছে বাকি সবকিছুই তুচ্ছ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link