ছোটবেলায় ছিলেন পেস বোলার। স্বপ্ন দেখতেন পূর্বসূরি ওয়াকার ইউনূস, ওয়াসিম আকরাম, শোয়েব আখতারদের মতো বল হাতে আগুন ঝড়াবেন বাইশ গজে। অথচ জাতীয় পর্যায়ে তাঁর আগমণ লেগস্পিনার হিসেবে, অনুসরণ করেছেন আব্দুল কাদির, দানিশ কানেরিয়াদের পথ।
ব্যাট হাতেও কম যান না, প্রয়োজনীয় সময়ে জ্বলে উঠেছেন ব্যাট হাতেও। পাকিস্তান আনপ্রেডিক্টেবল হলেও তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন ভরসার পাত্র হিসেবে। তিনি শাদাব খান, বল এবং ব্যাট হাতে পাকিস্তানের ভরসা।
পাকিস্তানের মিলানওয়ালে জন্ম বেড়ে ওঠা শাদাবের। পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসে মিলানওয়ালের রয়েছে সমৃদ্ধ এক ইতিহাস। তাঁদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ইমরান খান এবং মিসবাহ উল হকের উঠে আসা এই শহর থেকেই। এই শহরের ছেলে শাদাব ক্রিকেটে আগ্রহী হবেন এটাই স্বাভাবিক। ছোটবেলা থেকেই বড় ভাইদের সাথে মাঠে যেতে যেতেই ক্রিকেটে আগ্রহী হয়ে ওঠা।
শুরুতে বাকি দশটা পাকিস্তানি বালকের মতো টেপ টেনিসে পেস বোলিং করলেও এগারো বছর বয়সে রাওয়ালপিন্ডিতে চলে আসার পর ক্রিকেট বলের সাথে পরিচয় শাদাবের। সেখানে স্থানীয় ক্লাবে নেট প্রাকটিস করতে করতেই একদিন নজরে আসেন সাদিক-ই- আকবার ক্রিকেট ক্লাবের মালিক সাজ্জাদ আহমেদের। তিনি বুঝতে পারেন শাদাবের প্রতিভা এবং তাঁর ক্লাবে নিয়ে নেন।
দ্রুতই পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক পেয়ে যান তিনি। যদিও শুরুতে ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন তিনি, প্রবল প্রতাপে ফিরে আসেন পরের বছরেই। কোচের সাথে পরামর্শ করে পেস বোলিং ছেড়ে শেন ওয়ার্নকে আদর্শ মেনে শুরু করেন লেগস্পিন।
দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি নিযুক্ত হন পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অধিনায়ক হিসেবে। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ঘরোয়া টুর্নামেন্টে ৩৪ উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে করেন ৩৫০ রান। তাঁর এই পারফরম্যান্সের বদৌলতে জায়গা করে নেন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপগামী পাকিস্তান দলে।
আলো ছড়ান সেখানেও। ১১ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে হন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তবে ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে পরিবার থেকে কিছুটা বাঁধার সম্মুখীন হন তিনি। তাঁর বাবা-মা চেয়েছিলেন ক্রিকেট ছেড়ে পড়ালেখায় মন দিক তাঁদের ছেলে। পরে শাদাবের বড় ভাই বুঝিয়ে রাজি করান তাঁদেরকে। ভাগ্যিস তাঁরা রাজি হয়েছিলেন, নইলে পাকিস্তান কি করে পেত তাঁদের ভরসার পাত্রকে!
ছোটদের বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্মের সুবাদে নজর কাড়েন পাকিস্তান সুপার লিগের দল ইসলামাবাদ ইউনাইটেডের ম্যানেজার রেহানুল হকের। শাদাবের প্রতিভা বুঝতে পেরেই কিনা শাদাবের সাথে বড় অংকের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি সেরে ফেলতে দেরি করেননি।
শুরুতে কেবল লেগস্পিনার থাকলেও ইসলামাবাদে এসেই প্রথম নিজের ব্যাটিং নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ইসলামাবাদও ভরসা রেখেছিল তাঁর উপর, চার নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পান তিনি। আস্থার প্রতিদান দিতে দেরি করেননি শাদাব, ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করে শিরোপা জেতান ইসলামাবাদকে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে এমন দারুণ খেলার সুবাদে পাকিস্তান জাতীয় দলে ডাক পেতেও সময় লাগেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে স্বপ্নের মতো এক অভিষেক ঘটে তাঁর, মাত্র সাত রানে তুলে নেন তিন উইকেট। ফর্মটা ধরে রাখেন পরের ম্যাচেও, এবারে আরো বিধ্বংসী শাদাব। মাত্র ১৪ রান খরচায় প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান চার ক্যারিবীয় ব্যাটারকে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী পাকিস্তান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন শাদাব খান। এছাড়া অভিষেকের পর থেকে বড় টুর্নামেন্টগুলোতে পাকিস্তানের নিয়মিত মুখ তিনি। যদিও, প্রায় এক যুগের বেশি সময় কেটে গিয়েছে পাকিস্তান ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতেনি।
ট্রফি ক্যাবিনেটে সবেধন নীলমণি হয়ে রয়েছে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আর একালে এসে শাদাব হলেন সীমিত ওভারে পাকিস্তানের স্পিন বোলিংয়ের প্রাণভোমরা। নিশ্চয়ই ট্রফি দিয়ে ক্যারিয়ারটা আরও সমৃদ্ধ করতেই চাইবেন তিনি।