প্রত্যাবর্তনের মঞ্চে আফ্রিদির অপেক্ষা

‘কাম বিফোর দ্য স্টর্ম’, চার শব্দের এক টুইট। সেটিতেই যেন জানান দিয়ে দিলেন, তিনি ফিরছেন। পাকিস্তানের স্কোয়াডে পূর্ণতা দিতে খুব শীঘ্রই মাঠের ক্রিকেটে ফিরছেন পেস বোলিং সেনসেশন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এমনটাই জানিয়েছেন নিজের করা টুইটে। 

হাঁটুর ইনজুরিতে এশিয়া কাপের স্কোয়াড থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি৷ এরপর আর বাইশ গজে দেখা যায়নি তাঁর দৌরাত্ম্য। নব উদ্যমে তাই আবারো প্রত্যাবর্তন হতে যাচ্ছে আফ্রিদির। নিউজিল্যান্ডে চলমান ত্রি-দেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই মাঠে ফেরার কথা ছিল শাহিন শাহর। তবে এ দিনে পাকিস্তান একাদশে দেখা যায়নি। হয়তো ইনজুরি থেকে ফিরে এসেই তাকে অতিরিক্ত কোনো ধকলে ফেলতে চাচ্ছে না পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট।

এ বছরের জুলাইতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে ফিল্ডিংয়ের সময় হাঁটুর লিগামেন্টের চোটে পড়েন আফ্রিদি। এরপর থেকেই আছেন মাঠের বাইরে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারেননি, ছিটকে যান এশিয়া কাপ থেকেও। এশিয়া কাপ পর্যন্ত শাহিন আফ্রিদি পুনর্বাসনের জন্য দলের সাথেই ছিলেন। তবে পরের অর্ধে পুনর্বাসনের জন্য তাকে লন্ডনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরে এসে ঘরের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ ম্যাচের সিরিজ খেলতে পারতেন আফ্রিদি। তবে ম্যানেজমেন্ট সেই ঝুঁকিটা নিতে চায় নি। তাই এ সিরিজেও বাইরে থাকতে হয় তাকে। 

তবে এর মধ্যে আফ্রিদির পুনর্বাসন নিয়ে তৈরি হয়েছিল বিতর্কও। শাহিন আফ্রিদির হবু শ্বশুর সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি দাবি করেছিলেন, ‘শাহিনের চিকিৎসার ব্যাপারে পিসিবি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। শাহিনকে নিজে থেকে টিকিট ও ডাক্তার ম্যানেজ করতে হয়েছে। সেখানে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে তার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’

পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য শহীদ আফ্রিদির এমন মন্তব্যের পরই শাহিন শাহের সমস্ত খরচ পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছে। এ নিয়ে পিসিবি তাদের বিবৃতিতে বলে, ‘তাঁরা সব সময়ই সব খেলোয়াড়দের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে।’

হারিস রউফ, নাসিম শাহ, মোহাম্মদ হাসনাইদের নিয়ে এমনিতেই পাকিস্তানের পেস আক্রমণ বেশ শক্তিশালী। তারপরও শাহিন শাহর অনুপস্থিতি পাকিস্তান টের পেয়েছিল এশিয়া কাপের ফাইনালে। বিশ্বকাপে তাই আফ্রিদির সংযুক্তি পাকিস্তানকে আগের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী করবে। যদিও বিশ্বকাপের আগেই ত্রি-দেশীয় সিরিজ দিয়ে মাঠে ফিরবেন তিনি। 

টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি- তিন ফরম্যাটেই দারুণ ধারাবাহিক শাহিন আফ্রিদি। বয়স কেবল ২২। এর মাঝেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পেয়েছেন দুই শতাধিক উইকেট। গত বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের টপ অর্ডারকে বলতে গেলে একাই গুড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা যেন সেদিন শাহিন আফ্রিদির পেসই ধরতে পারেননি।  তাছাড়া, তাঁর প্রায় ১৫০ কিলো/ঘন্টা গতির সাথে সুইং, ইয়র্কার ভীতি ছড়ায় পুরো ক্রিকেট বিশ্বে।  

শাহিন আফ্রিদির জন্য প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ এখন প্রস্তুত। বেশ কিছু দিন পর পাকিস্তান দলে তাঁর সংযুক্তি নিশ্চিতভাবেই পেস বোলিং ইউনিটকে করে তুলবে আরো শক্তিশালী এবং আরো স্বস্তিদায়ক। দলের অন্যান্য ক্রিকেটারদের মত আফ্রিদিরও শিরোপার দিকে চোখ আছে নিশ্চয়। তবে সে স্বপ্নের পথে পা বাড়াতে হলে প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের বিপরীতে একেকটা ভয়ংকর গোলা তাঁকেই ছুঁড়তে হবে। তবেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটা রঙিন হবে। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link