মানসিকতার দুই মেরু

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মানসিকতাটাই তো ক্রিকেট। আর সেই মানসিকতার লড়াইয়ে বিরাট কোহলির কাছে হেরে গেলেন শাহীন আফ্রিদি।

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মানসিকতাটাই তো ক্রিকেট। আর সেই মানসিকতার লড়াইয়ে বিরাট কোহলির কাছে হেরে গেলেন শাহীন আফ্রিদি। তেমনই এক ছোট্ট গল্পের সাক্ষী দ্বিতীয় ইনিংসের ৪২তম ওভার—একটি ওভারে ধরা পড়ল দুই বিপরীত মেরুর মানসিকতা।

ভারতের জিততে তখন দরকার মাত্র ১৭ রান। বিরাট কোহলি ক্রিজে, আর তাঁর শতক পেতে চাই ১৩ রান। শাহীন শাহ আফ্রিদি এলেন বল করতে। প্রথম বল, অক্ষর প্যাটেল এক রান নিয়ে বিরাটকে স্ট্রাইকে দিলেন। পরের বলে বিরাটও ঠাণ্ডা মাথায় সিঙ্গেল নিলেন। ওভারের তৃতীয় বলে শাহীন একটা বড়ো ওয়াইড করলেন লেগ সাইডে, এতটাই বড়ো যে উইকেটরক্ষকও আটকাতে পারলেন না। বল গড়িয়ে গেল ডিপ ফাইন লেগের দিকে। অন্তত দুই রান অনায়াসেই সম্ভব ছিল।

বিরাট যেন বিদ্যুৎবেগে দৌড় দিলেন প্রথম রানটা নিতে, দ্বিতীয় রান নেওয়ার জন্যও তৈরি। কিন্তু অক্ষর দ্বিতীয় রানটা নিলেন না। ক্যামেরায় ভেসে উঠল বিরাটের কপালে ভাঁজ, স্পষ্ট হতাশার ছাপ! কিন্তু কেন?

অক্ষর আসলে বিরাটের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ, ওয়াইডের সঙ্গে দুই রান নিলে দলের প্রয়োজনীয় রান দাঁড়াত ১২, বিরাটের শতকেও তখন চাই ১২ রান। অক্ষর স্ট্রাইরে রাখতে চেয়েছিলেন বিরাটকে। কিন্তু, সেটা না হলে আর শতকের সমীকরণ কঠিন হয়ে যেত। তাই, তিনি একদম ঠাণ্ডা মাথায় দ্বিতীয় রানটা নেননি।

কিন্তু, বিরাট কোহলির চোখে তখন শতকের চেয়ে দলের জয়টাই বড়ো হয়ে ধরা পড়েছিল। সেটাই তো তিনি বারবার করে দেখিয়ে এসেছেন! চাইলে তিনিও দ্বিতীয় রানটা প্রত্যাখ্যান করতে পারতেন, নিজের শতকের দিকে তাকিয়ে অক্ষরের সিদ্ধান্তে সায় দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। কারণ, তিনি চ্যাম্পিয়ন। কারণ, তিনি বিরাট কোহলি। বরং তিনি ছিলেন বিরক্ত, রান নেওয়ার সুযোগ কেন মিস হবে!

অন্যদিকে, ওভারেই ধরা পড়ল শাহিন শাহ আফ্রিদির নেতিবাচক মানসিকতা। পরপর দুইটা ওয়াইড, এরপর আরেকটা বাজে ওয়াইড! যে কেউ দেখলেই বুঝতে পারত, শাহিন তখন বিরাটের শতক আটকানোর চেষ্টা করছিলেন, রান আটকে দেওয়ার বদলে লাইনে বল না রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওয়াইড দিয়ে যাচ্ছিলেন। ওই একটা ওভারে শাহীন তিনটা ওয়াইড করেছিলেন।

স্টেডিয়ামে তখন দর্শকদের দুয়ো, ‘লুজার লুজার’ চিৎকার! মুহূর্তের জন্য হলেও শাহিন যেন ভুলে গিয়েছিলেন, তিনি সময়ের অন্যতম সেরা সিমার। এমন নেতিবাচক মানসিকতা কি তাঁকে মানায়?

এক ওভারেই ধরা দিল ক্রিকেটের দুই চেহারা। একদিকে দলের জয়কে নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে বড় করে দেখা বিরাট, অন্যদিকে একজন প্রতিপক্ষের ব্যক্তিগত অর্জন আটকাতে মরিয়া হয়ে পড়া শাহীন! ইতিহাস এসব মুহূর্ত মনে রাখে, আর আমাদের শেখায়—মানসিকতাই সব।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link