অ্যানাদার ব্লাস্টার ফ্রম আফ্রিদি!

শহীদ আফ্রিদি - যতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ততদিন ছিলেন রহস্যের অপর নাম। কখন তাঁর ব্যাট ‘ক্লিক’ করবে - সেটা কারোই জানা ছিল না।

শহীদ আফ্রিদি – যতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছেন ততদিন ছিলেন রহস্যের অপর নাম। কখন তাঁর ব্যাট ‘ক্লিক’ করবে – সেটা কারোই জানা ছিল না। এমনকি শহীদ আফ্রিদি নিজেও জানতেন কি না সন্দেহ! এভাবে ব্যাট করতে গিয়ে কত অসংখ্যবার যে ডাক মেরেছেন – তার কোনো হিসাব নেই!

কিন্তু, যদি কখনও যদি ঝড় তোলা শুরু করতেন – সেই ঝড় কখন থামবেন – সেটা কেউ বলতে পারে না। যত বড় বোলারই হন না কেন, বোর্ডে যত বড় রানই তাড়া করার চ্যালেঞ্জ হোক না কেন – উইকেটে যতক্ষণ ‘লালা’ আছেন ততক্ষণ আশা করতো পাকিস্তান।

সময়টা ২০০৫ সাল, কানপুরে মুখোমুখি দুই চির প্রতিন্দন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান। পাক-ভারত লড়াই মানেই অনন্য উচ্চতার উত্তেজনা। সারা বিশ্বের মানুষের দৃষ্টিতে থাকে এই লড়াই। আর এই সন্মানের লড়াইয়েই ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন শহীদ আফ্রিদি। শুধু চতুর্থ সেঞ্চুরি নয়, তখনকার সময়ে এটি ছিল দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যুগের আগেই এই ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন আফ্রিদি।

কানপুরে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়। তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল করতে বেশি সময় নেয়নি পাকিস্তানী বোলাররা। ইনিংসের শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক দ্রাবিড় এবং কাইফের ব্যাটে ভর করে ২৪৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় ভারত।

২৫০ রানে লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে পাকিস্থান। পাকিস্তানের পক্ষে ওপেনিংয়ে আসেন সালমান বাট এবং শহীদ আফ্রিদি। শহীদ আফ্রিদি ব্যাটিংয়ে নেমেই বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে শুরু করেন। মাত্র ১৪.২ ওভারে সালমান বাটের সাথে গড়ে তোলেন ১৩১ রানের জুটি, যেখানে সালমান বাটের অবদান মাত্র ২১ রান।

২৫ বছর বয়সী আফ্রিদির ব্যাটে ভর করে প্রথম পাঁচ ওভারেই পাকিস্তানের সংগ্রহ ছিলো ৫৫ রান। এর মধ্যে ১৫ বলেই ৪৩ রান করেন আফ্রিদি।

আফ্রিদি এর আগেও দুই বার ১৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু এই ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে ২০ বল খেলেন আফ্রিদি। অষ্টম ওভারে মিড উইকেটের উপর দিয়ে জহির খানকে ছক্কা হাঁকান তিনি। যা ছিলো আফ্রিদির ওয়ানডে ক্রিকেটের ২০০ তম ছক্কা।

পাকিস্তানের দলীয় স্কোর যখন ১০০, তখন আফ্রিদির ব্যক্তিগত সংগ্রহ ছিলো ৭৫ রান। ৮৫ রানে দীনেশ মোঙ্গিয়ার হাতে ধরা পড়েন আফ্রিদি। কিন্তু এই দিন আফ্রিদির ভাগ্য ছিলো সুপ্রসন্ন। ক্যাচ ধরার পর দেখা যায় বলটি ছিলো নো বল।

জীবন পাবার পর সেঞ্চুরি পুর্ণ করতে বাকি রাখেননি তিনি। ৪৫ বলে পূরণ করেন নিজের ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরির মাধ্যমে ব্রায়ান লারার করা দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরির পাশে নাম লেখান শহীদ আফ্রিদি। সেঞ্চুরির করার পরের বলেই হরভজন সিংয়ের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন আফ্রিদি। তখন তাঁর নামের পাশে ছিলো ৪৬ বলের ১০২ রানের এক দূর্দান্ত ইনিংস।

টি-টোয়েন্টির এই যুগে আফ্রিদির এই সেঞ্চুরি পঞ্চম দ্রুততম সেঞ্চুরি হিসেবে বিবেচিত হয়। আফ্রিদি ঝড়ে ৪৭ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। এই ঝড়ো ইনিংসের কারণে এই ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচও নির্বাচিত হন শহীদ আফ্রিদি। যত দিন ছিলেন ক্রিকেটে এভাবেই ছিলেন, নিজের দিনে তিনি যা করতে পারতেন ব্যাট হাতে – সেটা আজকের কেউ সম্ভবত কল্পনাও করতে পারবেন না!

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link