ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের সপ্তম রাউন্ডের ম্যাচে বিতর্কিত আচারণের জন্য শাস্তি পেলেন সাকিব আল হাসান। তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে মোহামেডানের অধিনায়ককে। সাথে জরিমানা করা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। এই অলরাউন্ডারের শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা আসে।
ম্যাচের দুই আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান এবং ইমরান পারভেজ ও ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল আলম প্রতিবেদন জমা দেন আজ। যেখানে তারা সাকিবের বিপক্ষে লেভেল থ্রি ভাঙার অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের দেওয়া সেই প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করেই সাকিবকে এই শাস্তি দেওয়া হয়।
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভা শেষে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ এই শাস্তির কথা জানান। সাকিব নিজে নিজের দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় কোনো আনুষ্ঠানিক শুনানির দরকার হয়নি।
গতকাল ঘটনাটি ঘটে আবাহনীর ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে। ১৪৬ রান তাড়া করতে নেমে ৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল আবাহনী। তখন প্রথম বারের মত আক্রমণে আসেন সাকিব। সাকিবের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে মুশফিকুর রহিম চার ও ছয় মারার পর শেষ বলে মুশফিক লাইন মিস করলে বল লাগে তাঁর প্যাডে।
কিন্তু সাকিবের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে লাথি মেরে ভেঙে ফেলেন বোলিং প্রান্তের স্টাম্প। এরপর বেশ কিছুক্ষণ আম্পায়ারের সাথে তর্ক করেন সাকিব। কিছুক্ষণ তর্ক চলার পর সাকিবকে আম্পায়ারের কাছে থেকে সরিয়ে নেন সতীর্থরা।
এরপর আবার খেলা শুরু হয়। পরের ওভারে পাঁচ বল হওয়ার পর বৃষ্টি আসার সম্ভবনা তৈরি হলে মাঠকর্মীদের মাঠে কাভার আনতে বলেন আম্পায়ার মাহফুজুর রহমান। এরপর আবার আম্পায়ারের দিকে এগিয়ে গিয়ে কিছু একটা বলেন সাকিব। কিন্তু বৃষ্টি আসার আগেই খেলা বন্ধ করায় স্টাম্প তুলে আছাড় মারেন তিনি।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়। সাকিব তর্কে জড়ান আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের সাথেও। মাঠ ছাড়ার সময় আবাহনীর ড্রেসিং রুমের দিকে কিছু একটা বলেন সাকিব। সেটা শুনেই তেড়ে আসেন সুজন। সুজনকে থামান শামসুর রহমান শুভ ও সাকিবে সরিয়ে নিয়ে যান তার সতীর্থরা।
চলতি প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টিতে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন সাকিব। জৈব সুরক্ষা বলয়ের নিয়ম ভেঙে অনুশীলনে বাইরের বোলার এনে ছিলেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) এক ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্বান্তে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে আম্পায়ারের সাথে তর্কে জড়িয়ে ছিলেন এই অলরাউন্ডার।
ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার পর গতকাল রান পেয়েছেন সাকিব। ২৭ বলে ৩৭ রান করেন মোহামেডানের অধিনায়ক। টানা তিন ম্যাচে হারের পর বিতর্কিত ঐ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ৩১ রানের জয় পেয়েছে সাকিবের দল। এই জয়ের ফলে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে মোহামেডান।
এমন ঘটনার পর নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভক্ত, শুভাকাঙ্ক্ষী ও আয়োজকদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে ছিলেন সাকিব। তবে ক্ষমা চেয়েও শেষ রক্ষা হয়নি এই অলরাউন্ডারের।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাকিব লিখেছেন, ‘প্রিয় ভক্ত ও অনুসারীরা, নিজের মেজাজ হারানোর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সেই সঙ্গে ম্যাচের আবহ নষ্ট করার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। বিশেষ করে যারা বাড়িতে বসে খেলা দেখছেন। আমার মতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছে এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু মাঝে মাঝে দুর্ভাগ্যবশত এ রকম হয়ে যায়। এই মানবিক ভুলের কারণে আমি দল, ম্যানেজমেন্ট ও টুর্নামেন্টের কমিটির কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আশা করছি ভবিষ্যতে আর এমনটা হবে না। ধন্যবাদ, সবার জন্য ভালোবাসা।’