বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) শুরু হলেই আক্ষেপের গান শুরু হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায়। বিপিএল যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে সার্কাস লিগ। এবার সাকিব আল হাসান আঙুল তুললেন বিপিএল কর্তাদের দিকেই। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের স্বদিচ্ছার অভাবেই বিপিএলের এমন হাল বলেই মনে করেন সাকিব। বিপিএলের দায়িত্বে এলে মাত্র এক থেকে দুই মাসেই বিপিএলকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করতে পারবেন বলেও দাবি সাকিবের।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান গাল্ফ ওয়েলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে একদিনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হয়েছেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু সাকিব আল হাসান কোথাও যাবেন আর সেখানে ক্রিকেট নিয়ে কথা হবে না তা তো হতে পারে না। গাল্ফ ওয়েলের প্রধান নির্বাহির চেয়ারে বসেই সাকিব শোনালেন বিপিএল নিয়ে তার আফসোসের কথা।
আইপিএলের পরপরই এ ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে আটটি মৌসুম মাঠে গড়ালেও জনপ্রিয়তা আর খেলার মানের বিচারে বিশ্বের অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট গুলোর তুলনায় বেশ পিছিয়ে গেছে বিপিএল। বরাবরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কর্তারা দাবী করে এসেছেন আইপিএলের পরেই দ্বিতীয় সেরা ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিপিএল। কিন্তু এসব বক্তব্য হাস্যরসের খোড়াক যুগিয়েছে দর্শকদের জন্য।
বিশ্বের প্রায় সবকটি ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলা সাকিব অবশ্য এর আগেও বলে এসেছেন মানের বিচারে বেশ পিছিয়ে বিপিএল৷ এবার বিপিএলের এমন পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে কর্তাদের স্বদিচ্ছাকেই দায়ী করলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার, ‘আমরা পারিনি নাকি চাইনি জানি না। চাইলে বিপিএলকে আরো উন্নতমানের করতে না পারার কোনো কারণ আমি দেখি না। আমার ধারণা আমরা সৎ মনে চাইনি কখনো ওরকম কিছু করতে। একারণেই এখন পর্যন্ত বিপিএল সেই মানে পৌঁছাতে পারে নাই।’
বিপিএল এলেই যেন ‘নাই নাই’ রব ওঠে বিসিবি কর্তাদের মুখে। আধুনিক প্রযুক্তি, ব্রডকাস্টিং, হোম-এওয়ে ভিত্তিতে খেলাসহ আরো অনেক কিছু অনুস্থিতির কারণ হিসেবে বিসিবি কর্তারা অযুহাত হিসেবে দাড় করান বাজেটকে। বিপিএল একটি ব্রান্ড হিসেবে না দাঁড়াতে পারেনি এখনো। মানসম্মত বিদেশি ক্রিকেটারদের বিপিএলের প্রথম কয়েকটি আসরে দেখা গেলেও ধীরে ধীরে বিপিএলের বিদেশি ক্রিকেটারদের মান একবারেই পড়তির দিকে।
দল মালিকরা বাজেটের ঘাটতি আর অন্যান্য ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের সাথে সিডিউল জটিলতাকে দায়ী করেন মানসম্মত বিদেশী খেলোয়াড় না আসার কারণ হিসেবে। তবে সাকিব আল হাসান মনে করেন ক্রিকেটের বাজার তৈরিতে ব্যর্থ ক্রিকেট প্রসাশন, ‘আমরা ক্রিকেটের বাজার তৈরি করতে পারি নি। আমরা যদি বাজার তৈরি করতে পারতাম, ভ্যালু অ্যাড করতে পারতাম তাহলে অবশ্যই এই বাজারটা অনেক বড় হবার কথা ছিলো। প্রায় ২০ কোটি মানুষের দেশে যেখানে ক্রিকেট এত জনপ্রিয় একটা খেলা সেখানে বাজার থাকবে না এটা বিশ্বাস করা খুবই দু:খজনক। আমি অন্তত বিশ্বাস করি না।’
বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার আরো বলেন, ‘বিপিএল একটি ব্রান্ড হিসেবে না দাড় করাতে পারা এবং এর বাজার তৈরি করতে না পারা মার্কেটিং এর জায়গা থেকে একটা বিশাল ব্যর্থতা ক্রিকেট বোর্ডের জন্য।’ বিপিএলে এবারো নেই ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম বা ডিআরএস। বিপিএলের কোচদের মুখেও এই নিয়ে আক্ষেপ। দুদিন আগে কোচ সালাউদ্দিনও বলেছিলেন, ‘বিসিবির যেহেতু অনেক টাকা তাই বিপিএলে ডিআরএস থাকা উচিত ছিল।’
এবার সাকিবও সুর মেলালেন তার সাথে, ‘স্বদিচ্ছা থাকলে কোনো কিছু থেমে থাকার কোনো কারণ আমি দেখি না। স্বদিচ্ছা থাকলে আমি কোনো কারণই দেখি না যার কারণে আমাদের ডিআরএস থাকবে না, তিন মাস আগে ড্রাফট বা অকশন হবে না, টিম গুলো দুই মাস আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করবে না।’
সর্বপোরি বিপিএল যে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে তা আবার উঠে এলো সাকিবের কথায়, ‘খবরে দেখলাম খেলোয়াড়রা এখনো জার্সি পাচ্ছে না। একটা যা তা অবস্থা। এর থেকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও ভালো ভাবে হয়।’
আন্তর্জাতিক মান থেকে বিপিএল যে অনেকটাই পিছিয়ে এখনো তাই আবার মনে করিয়ে দিলেন সাকিব, ‘আমার ধারণা বিপিএল খুব বেশি দেশ দেখে না। আসলে কেউ ওইভাবে ফোকাস করে না বিপিএলকে। অন্য কোনো দেশে জাতীয় দলে না খেলা খেলোয়াড়রা বিগ ব্যাশ বা পিএসএলে ভালো করলে তাদের জাতীয় দলে ডাকা হয়। কিন্তু বিপিএল তো বাইরের দেশের কেউ দেখে না যে কেউ এভাবে প্যারামিটার ঠিক করবে। খুবই হতাশাজনক যে আমরা এখনো ওই পর্যায়ে রয়ে গেছি।’
এই চরম অব্যবস্থাপনার বিপিএলকে সঠিক কক্ষপথে আনতে স্বদিচ্ছা থাকলে বেশিদিন লাগবে লাগবে না বলেই মনে করেন সাকিব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, ‘আমাকে যদি বিপিএলের সিইও এর দায়িত্ব দেয়া হয়, আমার ধারণা সর্বোচ্চ এক থেকে দুই মাস লাগবে সব কিছু ঠিক করতে। যে করতে পারে তার জন্য একদিনেই অনেক কিছু করা সম্ভব। আমি সিইও হলে সব কিছু বাদ দিয়ে নতুন করে আবার ড্রাফট বা অকশন হবে, ফ্রি টাইমে অকশন হবে, সব আধুনিক টেকনোলজি থাকবে, ব্রডকাস্ট ভালো থাকবে, হোম অ্যান্ড এওয়ে ভেন্যু থাকবে।’
বরাবরই সাকিবের বক্তব্য আলোচনার খোড়াক সংবাদমাধ্যমের জন্য। বিসিবি কর্তাদের সমালোচনা করে এর আগেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছেন সাকিব। এবার বিপিএলের দায়িত্বরত কর্তাদের যেভাবে তুলোধুনো করলেন সাকিব তাতে বিপিএল গর্ভানিং কাউন্সিল কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।