ব্যর্থতার বৃত্তে সাকিব ও মোহামেডান

ভেন্যু পরিবর্তন হচ্ছে, প্রতিপক্ষ পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে না সাকিব আল হাসানের ভাগ্য। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের ষষ্ঠ রাউন্ড শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত বড় ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। আজও ব্যাট হাতে এই অলরাউন্ডার ফিরেছেন শূন্য হাতে। অধিনায়কের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবও ঘুরপাক খাচ্ছে হারের বৃত্তে।

এবারের আসরের প্রথম তিন রাউন্ডের ম্যাচ জিতে উড়তে থাকা মোহামেডান পরের তিন ম্যাচে হেরে পয়েন্ট টেবিলের ষষ্ঠ স্থানে অবস্থান করছে এখন। মোহামেডানের টানা তিন হারের দিনে ষষ্ঠ রাউন্ডের শেষ তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে আবাহনী লিমিটেড, লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি।

ষষ্ট রাউন্ডের শেষ তিন ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করে দলের জয়ে অবদান রেখেছেন পিনাক ঘোষ, নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে হাফসেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেননি মিজানুর রহমান। আগের দুই ম্যাচের মত বল হাতে আজও দুর্দান্ত ছিলেন তানভির ইসলাম। দল হারলেও চার উইকেট শিকার করেছেন এই স্পিনার।

বিকেএসপিতে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে বৃষ্টি আইনে ২৫ রানে হারিয়ে ষষ্ট রাউন্ড শেষে এখন পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে আবাহনী। এই ম্যাচে নূন্যতম লড়াইও করতে পারেনি শাইনপুকুর। ১৮৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের তোপের মুখে পড়ে শাইনপুকুর।

ইনিংসের প্রথম ওভারে ওপেনার রহমত আলী সাইফউদ্দিনের প্রথম শিকার হয়ে শূন্য রানে ফিরে যাওয়ার পর একেএস স্বাধীনের বলে ২২ রান করে আউট হয়ে যান রবিউল ইসলাম। এরপর এক প্রান্ত আগলিয়ে রাখা তানজিদ হাসানকে (২৯) মোসাদ্দেক ফিরিয়ে দিলে চাপে পড়ে শাইনপুকুর।

৭২ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর শাইনপুকুর যখন ঘুঁড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখনই জোড়া আঘাত হানেন সাইফউদ্দিন। ৩২ বলে ৩৬ রান করা তৌহিদ হৃদয় ফিরে যাওয়ার পর ২ রান করে বিদায় নেন সাব্বির হোসেন। ১৭ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করার পর বৃষ্টি আসলে বৃষ্টি আইনে ২৫ রানের জয় পায় আবাহনী। তিনটি উইকেট শিকার করেন সাইফউদ্দিন।

এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আবাহনী লিমিটেডকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও আফিফ হোসেন। ১২.১ বলে উদ্বোধনী জুটিতেই দুই জন তুলে ফেলেন ১১১রান। এবারের আসরের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি  তুলে নিয়ে ৪২ বলে ৫৪ রান করে আফিফ ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি।

আফিফ ফিরে গেলে উইকেটে এসে নাঈমের সাথে জুটি বাঁধেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দুই জনই শাইনপুকুরের বোলারদের উপর চড়া হয়ে দ্রুত গতিতে রান তুলতে থাকেন। তবে এই জুটিকে বেশি বড় হতে দেননি তানভির ইসলাম। এই স্পিনার জোড়া আঘাতে ফিরিয়ে দেন দুই জনকেই।

৯ বলে ১৮ রান করে শান্ত ফিরে যাওয়ার পর ৫০ বলে ৭০ রান করে ফিরে যান নাঈম শেখ। এরপর শেষের দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১৪ ও একেএস স্বাধীনের ১২ রানে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮৩ রান সংগ্রহ করে আবাহনী। শাইনপুকুরের পক্ষে চারটি উইকেট শিকার করেন তানভির ইসলাম।

মিরপুরে দিনের আরেক ম্যাচে মোহামেডানকে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে রূপগঞ্জ। মোহামেডানের দেওয়া ১১৪ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় রূপগঞ্জ। মেহেদী মারুফ ৪৬ বলে ৪১ রান করে আউট হয়ে গেলেও পিনাক ঘোষ ৫১ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন।  রূপগঞ্জের পতন হওয়া একটি উইকেট শিকার করেন মাহমুদুল হাসান।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বোলারদের তোপের মুখে পড়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।  মোহাম্মদ শহীদ, নাঈম ইসলাম এবং সোহাগ গাজীর বোলিং তোপে একে একে ফিরে যান মাহমুদুল হাসান, শামসুর রহমান, সাকিব আল হাসান, নাদিফ চোধুরি, পারভেজ হোসেন ইমন ও ইরফান শুকুর।

পারভেজ ১০ রান, শামসুর ৫ রান ও ইরফান ৯ রান করলেও রানের খাতাই খুলতে পারেননি বাকি তিন জন। ২৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পর সপ্তম উইকেটে  দলের হাল ধরেন শুভাগত হোম চোধুরি ও আবু হায়দার রনি। ৭২ রান যোগ করেন দুজন। ২৫ বলে ১৫ রান করে রনি ফিরে যাওয়ার পর ৩২ বলে ৫২ রান করে ফিরে যান শুভাগত।

শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১১৩ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। রূপগঞ্জের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ শহীদ, নাঈম ইসলাম, সোহাগ গাজী ও জাকির আলী। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন মুক্তার আলী।

বিকেএসপিতে দিনের আরেক ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি। ১৩৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৫ রানে ২ উইকেট হারালেও জহুরুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ ও ফরহাদ হোসেনের ব্যাটে জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল খেলাঘর।

কিন্তু ১৬.২ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রান সংগ্রহ করার পরই আসে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে খেলা আর শুরু না হলে বৃষ্টি আইনে খেলাঘরকে ৫ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়। মিরাজ ৪০ রানে ও ফরহাদ ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। ব্রাদার্সের পক্ষে একটি করে উইকেট শিকার করেন রাতুল ফেরদৌস ও সাকলাইন সজিব।

এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মিজানুর রহমানের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রান সংগ্রহ করে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ৬১ বলে ৬৬ রান করেন মিজানুর। এছাড়া রাতুল ফেরদৌস ২৪ রান ও জুনায়েদ সিদ্দিকী ১৯ রান করেন। খেলাঘরের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন খালেদ আহমেদ ও রিশাদ হোসেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

  • আবাহনী-শাইনপুকুর

আবাহনী লিমিটেড: ১৮৩/৫ (ওভার: ২০; নাঈম- ৭০, আফিফ- ৫৪, নাজমুল- ১৮) (তানভির- ৪-০-২৩-৪)

শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ১২৩/৫ (ওভার: ১৭; তানজিদ- ২৯, রবিউল- ২২, তৌহিদ- ৩৬, মাহিদুল- ২৯*) (সাইফউদ্দিন- ৩-০-১২-৩)

ফলাফল: আবাহনী লিমিটেড ২৫ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)।

  • মোহামেডান-রূপগঞ্জ

মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ১১৩/৯ (ওভার: ২০; পারভেজ- ১০, সাকিব- ০, শুভাগত- ৫২, রনি- ১৫) (সোহাগ- ৪-২-৮-২, নাঈম- ২-০-৬-২, শহীদ- ৪-০-২১-২, অনিক- ৩-০-২৯-২)

লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ: ১১৭/১ (ওভার: ১৮.১; মারুফ- ৪১, ঘোষ- ৫১*) (মাহমুদুল- ৩-০-১১-১, সাকিব- ৩.১-০-১৭-০)

ফলাফল: লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৯ উইকেটে জয়ী।

  • ব্রাদার্স-খেলাঘর

ব্রাদার্স ইউনিয়ন: ১৩৪/৫ (ওভার: ২০; মিজানুর- ৬৬, জুনায়েদ- ১৯, রাতুল- ২৪) (খালেদ- ৪-০-২৭-২, রিশাদ- ৩-০-১৪-২)

খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি: ১০৯/৩ (ওভার: ১৬.২; মিরাজ- ৪০*, জহুরুল- ২৬, ফরহাদ- ৩৬*) (রাতুল- ৪-০-১৭-১)

ফলাফল: খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি ৫ রানে জয়ী (বৃষ্টি আইনে)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link