সাকিব অধিনায়ক দেখে পারফর্ম করেন না!

সাত বছর বাদেও সেই পুরনো দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি, আরো একবার বাংলাদেশ থেকে সিরিজ জিতে ফিরল ইংল্যান্ড। তবে সাগরিকায় শেষ ওয়ানডেতে সাকিবময় এক ম্যাচে সান্ত্বনার জয় পায় স্বাগতিকরা। সিরিজ শুরুর আগে সাকিব এবং তামিমের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সে সেটা বোঝা দায়!

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা দুই নক্ষত্র সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় জুড়ে একসাথে খেলেছেন জাতীয় দলে। শুরুর দিকে দুজনের মাঝে ভালো বন্ধুত্ব থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা পরিণত হয়েছে অস্বাস্থ্যকর এক সম্পর্কে। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে খোদ বিসিবি সভাপতি জানান সাকিব এবং তামিমের সম্পর্কের টানাপোড়েনে ড্রেসিরুমে আর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নেই। 

সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের হারের পর সেই গুঞ্জন যেন আরো পালে হাওয়া পায়। তামিম এখন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক, তিনি ভালো করলে নাকি সাকিবের ক্ষতি! সেই কারণেই একজনের নেতৃত্বে আরেকজন ইচ্ছা করেই খারাপ খেলেন, নিজের পারফরম্যান্স বাজে করেন। তবে তামিমের দাবি মাঠের বাইরের সম্পর্কের প্রভাব কখনোই মাঠে পড়তে দেননি এ দুজন। সব সময়ই খেলেছেন নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই। 

শেষ ওয়ানডেতে অধিনায়ক তামিম অনুজ্জ্বল থাকলেও সাকিব ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। বলতে গেলে এক সাকিবের কাছেই হেরেছে ইংল্যান্ড। অথচ সমালোচকদের দাবি মতে, তামিমের অধিনায়কত্বে সাকিব ইচ্ছে করে খারাপ খেলেন! সেই ভিত্তিহীন দাবি যেন এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিলেন এই অলরাউন্ডার। 

প্রথম ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন লড়াই করার মতো এক সংগ্রহ। বাকিরা যেখানে খানিকটা ধীরগতিতে ব্যাট করেছেন, সেখানে সাকিব শুরু থেকেই সাবলীল। তাঁর ৭১ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে কোনো ছক্কার মার না থাকলেও ছিল সাতটি চারের মার। এরপর বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকরী।

ওপেনিংয়ে নেমে ক্রমশই ভয়ংকর হয়ে ওঠা ফিল সল্টকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচে পরিণত করেছেন, আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয়কেও ভয়ংকর হতে দেননি। তাঁর আন্ডার কাটার বুঝতেই পারেননি এই ইংলিশ ওপেনার। দ্বিতীয় স্পেলেও সমান ভয়ংকর সাকিব, ফেরান ৩৮ রানে থাকা জেমস ভিন্সকে।

এরপর রেহান আহমেদকে আউট করে ইংলিশদের লেজটাও গুটিয়ে দিয়েছেন সাকিবই। ম্যাচে দশ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে চার উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন সাকিব। সব মিলিয়ে পুরো ম্যাচের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই অলরাউন্ডার। ম্যাচশেষে দুই দলের অধিনায়কের মুখেও শোনা গেছে সাকিব বন্দনা। 

এই ম্যাচ দিয়ে বেশকিছু ব্যক্তিগত মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন এই তারকা। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওডিয়াইতে ৩০০ উইকেটের দেখা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ৩০০ উইকেট এবং ৬০০০ রানের বিরল এক রেকর্ডের অংশীদার হয়েছেন তিনি। এই তালিকার বাকি দুই ক্রিকেটার সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং শহীদ আফ্রিদি।

শুধু রেকর্ড কিংবা জয় এনে দেওয়াই নয়, নিজের নামের যে দূর্নাম সেটাও এক নিমিষেই যেন উড়িয়ে দিলেন সাকিব। চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন, তিনি অধিনায়ক দেখে খেলেন না। অধিনায়ক তামিম হোক বা অন্য কেউ পারফর‌ম্যান্সে ছাড় দেন না সাকিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link