সাধারণত, প্রতি বছরের শুরুর দিকে ক্রিকেটারদের সাথে এক বছরের চুক্তি করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সেখানে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বোর্ড থেকে প্রাপ্য মাসিক বেতন সহ যাবতীয় সুবিধার দালিলীকরণ করে বিসিবি। তবে ব্যতিক্রম দেখা গেছে এই বছর। বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে এখনো চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ করেনি বোর্ড।
তবে আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হতে পারে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকা। এই বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করা পেসার তাসকিন আহমেদকে রাখা হচ্ছে চুক্তিতে। আর সাকিব আল হাসানও সংশয় উড়িয়ে তিন ফরম্যাটের চুক্তিতে থাকবেন বলে জানা গেছে। গেল ২০১৯ সালের অক্টোবরে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর চুক্তি থেকে জায়গা হারান সাকিব।
এরপর নিষেধাজ্ঞা কেটে গেলেও বিসিবি দাবী করেছিল টেস্ট খেলতে চান না সাকিব। ফলে, তাঁর তিন ফরম্যাটেই চুক্তিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল। তবে, সাকিব সেই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। আর এবার বোঝা গেল, তিন ফরম্যাটেই খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি।
এর বাদেও কেন্দ্রীয় চুক্তিতে কয়েকটা বড় রদবদল আসন্ন বলে জানা গেছে। গেলবার লাল বলের চুক্তিতে জায়গা হয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের। এবার তাঁরা ফিরতে পারেন বলে জানা গেছে। অফ ফর্মে থাকা লিটন দাসও থাকবেন চুক্তিতে। এই ফরম্যাট ভেদে চুক্তির প্রথা ২০২০ সালে চালু করে বিসিবি।
নতুন চুক্তিটা সবেচেয়ে বড় সুসংবাদ নিশ্চিন্ত করেই তাসকিন আহমেদের জন্য। গত তিন বছর চুক্তিতে ছিলেন না পেসার তাসকিন। গত বছর বিসিবির চুক্তিতে ছিল ১৭ জন ক্রিকেটার। যেখানে ৭ জন ছিল সব ফরম্যাটের চুক্তিতে। তবে এবার এই সংখ্যা ১৮ জন। তাসকিন চুক্তিতে ফিরলেও তাকে তিন ফরম্যাটে খেলিয়ে তার দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি করতে চায়না টিম ম্যানেজমেন্ট।
সর্বশেষ দুই সিরিজে দলের টিম লিডারের দায়িত্বে থাকা খালেদ মাহমুদ সুজন ক্রিকেট ভিত্তিক গণমাধ্যম ক্রিকবাজকে জানিয়েছেন তাসকিন ওয়ানডের পরিকল্পনাতেই বেশি রয়েছেন। তার ওপর অতিরিক্ত চাপ দিতে চায় না ডিম ম্যানেজমেন্ট।
তিনি বলেন, ‘দেখুন আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা তাসকিনকে বেশি চাপ পারি না। কারণ এটা করলে সে পিছিয়ে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাসকিন অনেক ওভার বল করেছিল। ওয়ানডে পরিকল্পনাতে অনেক বেশি আছে সে। তবে আমরা যদি তাকে পুরো সময় তিনটি ফরম্যাটে খেলাতে চাই তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হতে পারে। আমাদের ভারসাম্য তৈরি করা দরকার এবং তাসকিনের মতো খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় পারফর্ম পেতে চাইলে তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তাসকিন আহমেদও জানান, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে এমনই বার্তা পেয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘নান্নু ভাই (প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু) আমার সাথে সিরিজের (সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ) পর কথা বলেছে। ব্যাপারটা এমন না যে আমি টি-টোয়েন্টি খেলবো না, তবে মূলত ফোকাস করতে বলা হয়েছে টেস্ট আর ওয়ানডেতে।’
কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের বাছাই ও বেতন গ্রেড ঠিক করে বোর্ডের কাছে সেটা জমা দেওয়ার দায়িত্ব ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের। কিন্তু সঠিক সময়ে এই কাজ করতে পারেননি তারা। কারণ ক্রিকেটারদের পারফরমেন্সের উপর ভিত্তি করে ও ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের তালিকা বোর্ডের কাছে জমা দেয় ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগ।
কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে গত বছর সব ধরণের ক্রিকেট বন্ধ থাকায় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করতে পারেননি তারা। গত জানুয়ারিতে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরে বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ানদের সাথে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলার পর নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ।
এরপর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে টেস্ট সিরিজ খেলার পর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এই চার সিরিজের পারফরম্যান্স বিবেচনা করেই চুক্তির তালিকা করেছে ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজন জানিয়েছেন পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে সব কিছু চূড়ান্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বোর্ডের সর্বশেষ সভাতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমাদের পরবর্তী বোর্ড সভায় কয়জন ক্রিকেটার কেন্দ্রীয় চুক্তিতে নতুন করে আসবে। আপনারা সবাই জানেন যে, আমরা মূলত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তি করি। তবে আমরা এবার আমরা এখন করছি কারণ গত বছর করোন ভাইরাসের জন্য আমরা খুব বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাছাই প্যানেল এবং ক্রিকেট অপারেশনন্স কমিটি সাম্প্রতিক ও আগের পারফরম্যান্সকে বিবেচনায় নিয়ে নাম গুলো চূড়ান্ত করেছে। আমরা যদি পরবর্তী বোর্ডের সভায় নাম গুলো পাই তবে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে বিষয়টি বিবেচনা করবো।’