শামিম পাটোয়ারি বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক স্বপ্ন সারথি হয়ে এসেছিলেন। দেশের ক্রিকেটে একজন স্লগারের অভাব বুঝি তিনিই মেটাবেন। সাথে দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডারের তকমা তো আছে। নামের পাশেও জড়ানো আছে একটা বিশ্বকাপ জয়ের গল্প। গত বছর ডিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে এসেছিলেন। শুরুটাও উড়ন্ত, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচেই নিজের জানান দিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল এবার বুঝি অবশেষে একজন ফিনিশারের অভাব মিটছে। তবে এরপর আবার হতাশার গল্প, জাতীয় দল থেকেও ছিটকে গেলেন।
বিসিবিও তাঁকে কোন পরিকল্পনায় রাখেনি। সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটারকে নিয়ে তাঁদের আলাদা করে কাজ করার আগ্রহও যেন নেই। জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছে, রাখা হয়নি বাংলা টাইগার্সের দলেও। তবে শামিম নীরবেই ফিরে আসার উপখ্যান লিখছিলেন। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আবারো শামিমের ঝড়।
আবাহনীর হয়ে গতকাল ৬৬ বলে ১০৮ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। শামিম জানান দিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি, আছেন। তবুও এভাবে বাদ পড়ায় একটা আক্ষেপ কাজ করে তাঁর মনে। সেসব নিয়ে শামিম কী ভাবেন এবং ফিরে আসার জন্য তিনি কতটা মরিয়া সেসবই জানিয়েছেন খেলা ৭১ কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।
জাতীয় দল, বিপিএল মিলে তো সময়টা ভালো যাচ্ছিল না। এরপর ডিপিএলে এমন ঝড়ো সেঞ্চুরি পেলেন। কেমন লাগছে?
শামিম হোসেন পাটোয়ারি: অবশ্যই ভালো লাগছে। এটা আসলে আমার জন্য অনেক দরকার ছিল। সেঞ্চুরিটা আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস এনে দিয়েছে। আশাকরি জাতীয় দলের জন্য এই ইনিংসটা অনেক কাজে দিবে।
গত ডিপিএলে ভালো খেলেছিলেন। সেখান থেকেই জাতীয় দলে আসা। আবারো কী তেমনই পরিকল্পনা?
– না ওভাবে কোন চিন্তা করিনি আসলে। আমার চিন্তা হচ্ছে এখন ডিপিএল চলতেসে, আমি এখানেই ফোকাস করতে চাই। এটা যেন ভালো ভাবে শেষ করতে পারি, পারফর্ম করতে পারি। জাতীয় দল নিয়ে এখন আমার কোন চিন্তা নাই। বাকিটা যা হবে দেখা যাবে।
জাতীয় দল নিয়ে ভাবছেন না। তাহলে এই ডিপিএল নিয়ে নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা আছে?
– পরিকল্পনা বলতে ভালো ক্রিকেট খেলা। সেভাবে ব্যক্তিগত কোন টার্গেট নেই। আমার টার্গেট এখন শুধু পারফর্ম করে। যেই শুরুটা পেয়েছি সেটা যেন ধরে রাখতে পারি।
একটু যদি ফিরে তাকাই, জাতীয় দলে এসেই দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন। সেই সময়টা মিস করেন?
– হ্যাঁ ভালো তো লাগেই। তখন অনেক ভালো করতেসিলাম। জিম্বাবুয়ের সাথে খেলাগুলো ছিল। আসলে ভালো খেললে তো নিজের কাছেই একটা ভালো লাগা কাজ করে। তবে সবসময় তো আর এক যায়না।
আপনার স্ট্রাইকরেট বেশ স্বপ্ন দেখিয়েছিল। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই দুই ম্যাচেও প্রায় ১৫০ স্ট্রাইকরেটে খেলেছিলেন। কিন্তু এরপর বিশ্বকাপে আবার উল্টো চিত্র। অনেক মন্থর ব্যাটিং করেছেন। ইনিংস বড় করার জন্য কিংবা জাতীয় দলে জায়গা পাকা করার জন্যই কী ব্যাটিংয়ে এমন পরিবর্তন?
– আসলে বিশ্বকাপে আমাকে প্রেশারের সময় খেলানো হয়েছিল। ওই সময়ে আমি দুইটা ম্যাচ খেলসি আর আমি সবার থেকে ভালোই খেলেছিলাম। তেমন কেউই রান করতে পারেনি তারপরও আমি কিন্তু কিছু রান করেছি। আর আমি যেই জায়গাটাতে খেলি সেখানে অনেক সময় দিতে হয়। এভাবে আসলে হয় না। আর নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার সাথে সিরিজে মিরপুরে ১৫০ রান কী হয়েছিল কখনো?
নাহ। ১২০ রানই অনেক মনে হচ্ছল ওই দুইটা সিরিজে। কিন্তু আমি বিশ্বকাপের কথা বলছিলাম।
– ওখানে ১২০ রান ছিল সর্বোচ্চ। তাহলে আপনারা কীভাবে একটা ক্রিকেটারের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেন? অন্য পিচের সাথে এই পিচ মিলালে তো হবেনা। জিম্বাবুয়েতে আমি ভালো খেলেছি কেন? কারণে ওখানে অনেক ভালো উইকেট ছিল।
মিরপুরের উইকেটে কারো ব্যাটিং নিয়েই প্রশ্ন তোলা কঠিন। কিন্তু বিশ্বকাপের উইকেট তো একেবারে খারাপ ছিল না।
– বিশ্বকাপেও আমি ভালো খেলতেসিলাম। কিন্তু আমার খুব বেশি সময় ছিল না। মাত্র দুইটা ম্যাচ খেলেছিলাম। দুইটা ম্যাচ দেখে কী একটা নতুন ক্রিকেটারকে বিচার করা যায়? তাও বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে।
সেটা ঠিক। আর এমন ছয়-সাতে যারা ব্যাটিং করেন তাঁদের একটু বেশি সময় দিতে হয়।
– একদম। এটাই আপনাকে বুঝতে হবে। আপনাদের বোঝাটা খুব জরুরি। এরকম পজিশনে যেই ব্যাটিং করবে তাঁকে অনেক সময় দিতে হবে। আমি কিন্তু সময়টা পাইনি। আমাকে আফগানিস্তান সিরিজে যে রাখেনি এটায় আমি খুবই অবাক হয়েছি। কারণ পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচটায় কিন্তু আমি ভালো খেলেছি। এখন আমি জানিনা আসলে কী হয়েছে। আমি নিজের খেলাতেই ফোকাস করছি।
তবে গত ডিপিএলে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন সেই ছাপটা পরে আর জাতীয় দলের হয়ে দেখা যায়নি। ডিপিএলের সাথে কী আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পার্থক্য অনেক?
– না, পার্থক্য তো আছেই। তবে যেখানেই হোক পারফর্ম করাটাই তো ভালো তাই না? আমি যদি এখানে করতে পারি তখন একটা আত্মবিশ্বাস আসবে যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গিয়েও পারব। পারফর্ম করাটা তো একটা অভ্যাস। আর আমি তো জানি যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে খেলতে হয়। আমি তো ওই স্বাদটা পেয়ে গিয়েছি।
তাহলে এই ডিপিএলে পারফর্ম করেই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদটা ফিরে পেতে চান?
– হ্যাঁ অবশ্যই। আমার টার্গেট থাকবে আবার যদি সুযোগ পাই তাহলে এই ফর্মটা যেন ধরে রাখতে পারি। ডিপিএলে যেভাবে সেঞ্চুরিটা করলাম সেভাবেই যেন ওখানেও ব্যাটিং করতে পারি।
হ্যাঁ আপনার এই ধরনের ব্যাটিং বাংলাদেশের জন্যও খুব প্রয়োজন। আমাদের একজন স্লগারের অভাব তো অনেকদিন ধরেই।
– আমার ক্ষেত্রে হইসে আসলে আমি ভালো মারতে পারি এটা ঠিক তবে আমি কিন্তু মেইনলি ব্যাটসম্যান। এখন আমি মারতে পারি বলে আমারে স্লগার বানায় দেয়া হইসে। এটাই হচ্ছে মূল সমস্য।
তাহলে কী আপনি টপ অর্ডারে ব্যাটিং করলে আরো ভালো করতেন বলে মনে করছেন?
– এখন আর আসলে এভাবে ভাবিনা। এখন সবজায়গায়ই খেলতে পারি। আমাকে যেখানে খেলাবে আমি সেই জায়গাটার জন্যই নিজেকে প্রস্তুত করবো।
আপনি সাত নম্বরের খালি জায়গাটা পূরণ করবেন সেটাই তো আশা করা হয়।
– হ্যাঁ অবশ্যই। আমি ওখানেও পারব আশা করি।
আচ্ছা, শেষ প্রশ্ন। আপনাকে দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ডার ভাবা হয়। এটা কেমন উপভোগ করেন?
– ফিল্ডিংটা আমার আসলে অনেক ভালো লাগে। এটা আমি অনেক মন দিয়ে করি। ফিল্ডিং আমি অনেক উপভোগ করি আসলে। এজন্যই বোধহয় ভালো করতে পারি। আর এমন প্রশ্নংসা পেতে তো ভালোই লাগে।