ঠিক এ কারণেই শামীমেই আস্থা রংপুরের

থার্ড ম্যান অঞ্চলে ফিল্ডার। তবুও শামীম হোসেন পাটোয়ারি সেই সাহস দেখালেন। রিভার্স স্কুপ শটে বল পাঠালেন উইকেটের ঠিক পেছন থেকে সীমানার বাইরে। এরপরই একটা ঝড় বয়ে গেল ফরচুন বরিশালের বোলার ওবেদ ম্যাককয়ের উপর দিয়ে। এক ওভারে তিন ছক্কা ও দুই চারে শামীম নিয়ে নিলেন ২৬ রান।

সেই ওভারের শেষের বলটায় চার মেরে নিজের ব্যক্তিগত ফিফটিও আদায় করে নেন শামীম। এবারের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের দ্রুততম হাফসেঞ্চুরিতেও ভাগ বসালেন তিনি। সতীর্থ সাকিব আল হাসান ২০ বলে ফিফটি করেছিলেন এবারের আসরেই। শামীমও ঠিক ২০ বলই খরচ করলেন অর্ধশতক ছুঁয়ে দেখতে। কিন্তু শামীমের ইনিংসটি যে আরও মহিমান্বিত। সে বিষয়টি ম্যাচের স্কোরকার্ড দেখলেও আন্দাজ করে নেওয়া যাবে অনায়াসে।

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে হারলেই বিদায় নিশ্চিত। এমন এক ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ের সামনে পড়ে যায় রংপুর রাইডার্স। দলীয় ১৮ রানের মাথায় রংপুরের নেই তিন উইকেট। পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোলাটে হতে থাকে সেই মুহূর্ত থেকেই। রানের গতি ক্রমশ নিচের দিকেই হয়েছে ধাবিত। দ্রুত রান তোলার চাইতেও তো প্রয়োজন ছিল উইকেট বাঁচিয়ে রাখা।

তা অবশ্য রংপুরের ব্যাটাররা করতে পেরেছেন তা বলার উপায় নেই। কেননা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে গ্রুপ পর্বে দাপট দেখানো রাইডার্সরা। তাতে করে স্বল্প রানেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছিল রংপুরের সামনে। তাছাড়াও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও ক্রমশ হচ্ছিল প্রবল। ১৫ তম ওভারের শেষ বলের আগেই ৭৭ রানে ৭ উইকেট হারানো দলের মাঝে নিশ্চয়ই নেতিবাচক ভাবনা এসে ভর করে।

তবে সকল নেতিবাচকতাকে স্রেফ উড়িয়ে দিলেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। দিনের পর দিন প্রত্যাশিত পারফরমেন্স না করতে পারলেও কেন তাকে দলে রাখা হয়, সে প্রমাণই যেন দিয়ে গেলেন চাঁদপুরের ছেলে। একা হাতে ম্যাচের পুরো মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি। তার আগ্রসনে জয়ের সুবাতাস পেতে থাকা ফরচুন বরিশাল যেন হতাশার নোনা স্বাদ পেতে শুরু করে।

৭৭ রান থেকে যে শামীম দলীয় সংগ্রহ নিয়ে গেছেন ১৪৯ অবধি। শেষ পাঁচ ওভারে দলের পক্ষে ৭২ রান যোগ করেছেন তিনি। তাকে যোগ্য সঙ্গটাই অবশ্য দিয়ে গেছেন আবু হায়দার রনি। স্রেফ স্ট্রাইক রোটেট করে শামীমকে রেখেছেন স্ট্রাইক প্রান্তে।

আর ব্যাটিং প্রান্ত থেকে শামীম দেখিয়ে গেছেন নিজের সক্ষমতা। তার হাতের দ্রুত মুভমেন্টের সহয়তায় অসাধারণ সব শট খেলেছেন তিনি। সাহসিকতারও পরিচয় দিয়ে গেছেন তিনি। ওবেদ ম্যাকয়দের দ্রুতগতির বলগুলোতেও কি অনায়াসে তিনি রিভার্স স্কুপ খেলেছেন। বিহাইন্ড দ্য স্ট্যাম্প থেকেই অধিকাংশ রান আদায় করেছেন শামীম। তাছাড়া মিডউইকেট, লং অন, আম্পায়ারের মাথার উপর দিয়েও শট চালিয়েছেন।

নিথর এক ম্যাচে যেন মুহূর্তের মধ্যেই জান ঢেলে দেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। শেষ অবধি ২৪ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। সমান পাঁচটি করে ছক্কা ও বাউন্ডারি আদায় করেছেন শামীম। তার খেলা ২৪৫.৮৩ স্ট্রাইকরেটের ইনিংসটিই আসলে রংপুরকে পুনঃরায় ভাবতে বাধ্য করেছে। নতুন এক ভাবনার সূচনাই যেন এনে দিয়েছেন শামীম হোসেন পাটোরইয়ারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link