প্রথম বলটা অফ স্ট্যাম্পের বহু বাইরে দিয়ে ওয়াইডের সীমানা ঘেঁসেই বেড়িয়ে গেল। এরপরের বলের ফলাফলও ওয়াইড। এবার লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে। নাজমুল হোসেন শান্ত নিশ্চয়ই খানিকটা উন্মুখ হয়েছিলেন। ব্যাটে-বলে সংযোগটা তৃতীয় বলেও ঘটল না। এবার আরও খানিকটা মনোযোগ দেওয়ার পালা। শান্ত তাই যেন করলেন।
অবশেষে মিলল দেখা সেই শ্রুতিমধুর আর দৃষ্টিনন্দন শটের। ব্যাটের সাথে বলে মেলবন্ধনটা হলো বেশ। লং অফ অঞ্চল দিয়ে সেটি সীমানা পেরিয়ে যাবে এবং গেছেও। তবুও দারুণ হিট করা বলটা ঠিক কতদূর গিয়ে পড়ল সেটা একটু বাড়তি কৌতুহল নিয়ে দেখলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
তবে এদিন কেবল শান্তই নিজের ব্যাটিংয়ের প্রতি কৌতুহলি ছিলেন না। সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন আরও দু’জন। একজন নাইম শেখ, আরেকজন আফিফ হোসেন ধ্রুব। শান্তর ব্যাটিং যেন নয়ন দিয়ে স্মৃতিতে গেঁথে রাখলেন। এমন তুলির আঁচড় মাখা শটগুল তো রীতিমত মোহ!
শান্ত একের পর এক হাওয়া ভাসিয়ে, পেশি শক্তির ব্যবহার করে দুর্দান্ত সব শট খেলে গেলেন। মাঠে থাকা প্রতিটা মানুষই সম্ভবত সেই শটগুলো উপভোগ করেছেন। নাইম, আফিফরাও করেছেন নিশ্চয়ই। তাইতো নিজেদের পালা আসার অপেক্ষার ফাঁকে একটু বিনোদিতও হয়ে নিয়েছেন শান্তর খেলা শট দেখে। তবে এর পেছনে অবশ্য শেখার তীব্র তেষ্টাও রয়েছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে থাকা ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল সময়ই কাটাচ্ছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বিগত দিনগুলোর গ্লানি আষাঢ়ের জলে ভাসিয়ে, স্নিগ্ধ সবুজ শীতল এক পরিবেশ। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে তিনটি শতকের দেখা পেয়েছেন শান্ত। কি অদ্ভুত এক সময়! দুইটি সাদা পোশাকে ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একই ম্যাচের দুই ইনিংসে।
আরেকটি সুদূর বিলেতে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে রঙিন পোশাকে। বিবর্ণ সময় পার করা নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যারিয়ার জুড়ে এখন শতরঙের আঁকিবুঁকি। সেই রঙের ছোঁয়া পাওয়ার প্রচেষ্টাই যেন করে গেছেন নাইম-আফিফরা।
টেকনিকালি শান্ত বেশ দক্ষ একজন ব্যাটার। সেই সাথে বেশ পরিপাটি ব্যাটিং স্টাইল। যেই ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন দেশের প্রসিদ্ধ সব ক্রিকেট কোচ থেকে শুরু করে ভিনদেশীরাও। স্রেফ সময়টা ছিল না তার পক্ষে। এখন নক্ষত্রেরা সব শান্তর দখলে। নিজেকে রীতিমত রোল মডেলেই পরিণত করেছেন তিনি।
তাইতো কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে তাকে কোন টোটকা দিলেই সেখানে হাজির নাইম শেখ। বাধ্য ছাত্রের মত তিনিও গুরুর তালিম রপ্ত করতে চেয়েছেন। নাইমের সময়টাও তো যাচ্ছে না খুব একটা ভাল। ঘরোয়া ক্রিকেটে রান পেলেও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি পছন্দের তালিকায় বেশ নিচের দিকেই। সেই দশায় একদিন শান্তও ছিলেন। পরিত্রাণ পেয়েছেন। এবার যেন নাইমের পালা।
অন্যদিকে, আফিফ হোসেন ধ্রুব নিজেকে আবারও জাতীয় দলের রঙিন পোশাকে যেন দেখতে শুরু করেছেন। তিনিও তাই শান্তর ব্যাটিং থেকে নিজের জন্যে উপযোগী শিক্ষাটুকুই আহরণ করেছেন অপলক নয়নে। আঁখি জুড়ানো ব্যাটিংটা কি করে করতে হবে, সেই বিদ্যা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টা।
তারা দেখেছেন, তারা শিখেছেন, তারা বাহবাও দিয়েছেন। নিজেরা যখন সেন্টার নেটে পাওয়ার হিটিং অনুশীলন করতে গেলেন, তখন তারাও বল সীমানা ছাড়া করেছেন। দলের ভেতরই যখন অনুপ্রেরণা থাকে, তখন নিশ্চয়ই তা বাড়তি জ্বালানির জোগান দেয়। সেই জ্বালানিই তো একদিন হয়ত বাংলাদেশ দলকে বানাবে তুখোড় সব ব্যাটারদের আড্ডাখানা। তবে এসবকিছু ছাপিয়ে সব প্রস্তুতি তো আফগান বধের।