দলের জয় নয়, শান্তর ‘ইগো’র লড়াই!

বোর্ড সিরিজের ঠিক আগে যেমন ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে শান্তকে সরিয়ে দিয়ে বাজে একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল, এবার শান্তই ঠিক সেই বোর্ডের দেখানো পথেই হাঁটল - যেমন বোর্ড, তেমন অধিনায়ক! সরি, সাবেক অধিনায়ক!

নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেই বলেছিলেন, দলের অধিনায়কত্ব নিয়ে এত আলোচনা দলের মোরালিটিতে আঘাত করে, দলকে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে। দাবি করেছিলে, অন্তত টেস্ট শুরুর সাত-আটদিন আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে কোনো আলাপ হওয়া উচিৎ না।

আর সেই মানসিকতাকে আঘাত করার কাজটা এবার সেই শান্তই করলেন। ক্রিকেট অপারেশন্সকে তিনি নিজেই বলে এসেছিলেন, টেস্টে তিনি আর অধিনায়কত্ব করতে চান না। মানে, নিজে যে কথাটা বড় গলায় কলম্বো টেস্ট শুরুর আগে বলেছিলেন – সেই কথা আগেই ভঙ্গ করে ফেলেছেন সদ্য বিদায় নেওয়া এই অধিনায়ক।

স্রেফ নিজের দম্ভে আঘাত হেনেছে বলে, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ শুরুর ঠিক আগেই তিনি নেতৃত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত বোর্ডকে অবগত করেন। মজার ব্যাপার হল, আসছে নভেম্বরের আগে বাংলাদেশের জন্য কোনো টেস্ট সূচি নেই। ফলে, আস্তে ধীরেও তিনি দেশে ফিরে বোর্ডকে নিজের ইচ্ছার কথা জানাতে পারতেন।

শান্ত সেই পথে হাঁটেননি। বরং, তিনি দলকে টেস্ট সিরিজের মাঝপথে একটা নেতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। যার প্রভাবে জাতীয় দল মুথ থুবড়ে পড়েছে কলম্বো টেস্টে। সেখানে ইনিংস ও ৭৮ রানের ব্যবধানে হারার পর টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন।

টেস্ট শুরুর আগেই এর আভাস ছিল, শান্তর ঘোষণা স্রেফ সেই আভাসের পূর্ণতা দিল। যদিও, সংবাদ সম্মেলনে তিনি এটাও স্পষ্ট করে জানান, কারও প্রতি কোনো ক্ষোভ বা রাগ তাঁকে নেতৃত্ব ছাড়তে উৎসাহিত করেনি।

বললেন, ‘আমি একটা বার্তা পরিষ্কারভাবে সবাইকে দিতে চাই। এটা ব্যক্তিগত কিছু না। দলের ভালোর জন্য এই সিদ্ধান্ত আমি নিয়েছি। আমি মনে করি এটাতে দলের ভালো কিছুই হবে।’

তাহলে কেন ছাড়লেন নেতৃত্ব? শান্তর জবাব পরিস্কার। আর সেই জবাবেই বোঝা গেল তাঁর ক্ষোভটা খোদ বোর্ডের দিকেই। বললেন, ‘বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে আমি অনেকদিন ধরে আছি। আমি মনে করি না, একটা দলের ড্রেসিংরুমে তিনজন আলাদা অধিনায়ক দরকার আছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে তিনটা অধিনায়ক দলের জন্য একটু কঠিন হতে পারে। দলের ভালোর জন্য আমি এখান থেকে সরে এসেছি। তবে, এটা বোর্ডের ব্যাপার। তাঁরা চাইলে তিনজন অধিনায়ক রাখতেই পারে।’

চলতি বছরেই আর মাত্র দু’টো টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ দল। সেটাও আবার দেশের মাটিতে, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশও না এই সিরিজ। নিতান্ত অগুরুত্বপূর্ণ দু’টি ম্যাচ। তাই, শান্ত যতই বলুন তিনি দলের স্বার্থে অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন – সেটা কার্যত ধোপে টিকছে না।

দল বাজে ভাবে হেরেছে। শান্ত জিতে গেছেন তাঁর ইগোর লড়াইয়ে। বোর্ড সিরিজের ঠিক আগে যেমন ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে শান্তকে সরিয়ে দিয়ে বাজে একটা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছিল, শান্তও ঠিক তেমনই বোর্ডের দেখানো পথেই হাঁটলেন – যেমন বোর্ড, তেমন অধিনায়ক! সরি, সাবেক অধিনায়ক!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Share via
Copy link