স্বপ্ন ছিল আকাশ সমান। তবে চোখের পলকে সে স্বপ্ন হয়েছে ধূলিসাৎ। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভাল করার প্রত্যয়ই দেখিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে হয়েছে একেবারে উল্টো। তবুও বছরটা নেহায়েত খারাপ কাটেনি শরিফুল ইসলামের।
অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য শরিফুল ইসলাম। সেই দল থেকে জাতীয় দলের সুযোগ পাওয়াদের তালিকায় শুরুর দিকেই অবস্থান শরিফুলের। বেশ একটা লম্বা সময় ধরেই তিনি জাতীয় দলের জার্সিতে নিয়মিত। যদিও হাতে পর্যাপ্ত বিকল্প থাকায় ‘রোটেশন’ করে তাকে খেলিয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। তবুও সবচেয়ে উজ্জ্বল আলোই বিকিরণ করেছেন শরিফুল ইসলাম। ওয়ানডে ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি উইকেট বাগিয়েছেন বা-হাতি এই পেসার।
এমনকি পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটে উইকেট শিকারি বোলারদের তালিকায় সেরা দশেও রয়েছে শরিফুল ইসলাম। এ বছর স্রেফ ১৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন শরিফুল। প্রায় ২৪.৩৭ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ৩২টি। অথচ একটা সময় তিনি যেন ছিলেন ‘রানমেশিন’। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের কাছে প্রথম পছন্দ।
সেই সময়টা পেছনে ফেলেছেন শরিফুল ইসলাম। আগের বছর ১০ ওয়ানডেতে স্রেফ ১২ উইকেটই নিজের করে নিতে পেরেছিলেন শরিফুল ইসলাম। সেখানে তার গড় ছিল ৩৩.৬৬। অর্থাৎ প্রায় ৩৪ রান খরচের পর একটি করে উইকেটের দেখা পেয়েছেন শরিফুল। সেই সংখ্যাটা বেশ কমিয়ে আনতে পেরেছেন শরিফুল ইসলাম। প্রায় দশ রান কম খরচ করেছেন তিনি এই বছর প্রতিটি উইকেটের পেছনে।
ইকোনমি রেটেও রয়েছে যথেষ্ট তারতম্য। ৫.৭১ থেকে সেটা নেমেছেন ৫.৫০-তে। পরিসংখ্যানের দিক থেকে আরও একটি বিষয় নজরকাড়ার মতই। ২০২২ সালে শরিফুল প্রায় ৩৫ বল পরপর একটি করে উইকেট নিজের করে নিতে পেরেছিলেন। অন্যদিকে ২০২৩ সালে সেই সংখ্যাটা ২৭ এর ঘরে।
নিজের বোলিংয়ে উন্নতি করেছেন শরিফুল সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সেই সাথে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য, সঠিক লাইন আর লেন্থে ক্রমাগত বল করে যাওয়ার দীক্ষাই শরিফুলকে করেছে আরও পরিণত। বাংলাদেশে চলা পেস বিপ্লবের আরও এক পথিকৃৎ তিনি। পেসারদের জয়যাত্রায় সম্মুখভাগেই রয়েছেন ২২ বছর বয়সী এই পেসার।
বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছেন তাসকিন। ২৬ উইকেট নিয়ে তাসকিনের অবস্থান দ্বিতীয়তে। এক ম্যাচের ফারাক দু’জনের মাঝে। যদিও তাসকিনকে ইনজুরির সাথে লড়াই করেই পারফরম করে যেতে হয়েছে এই পুরোটা বছরজুড়ে। পূর্ণ ফিট তাসকিন নিশ্চয়ই ছাপিয়ে যেতে পারতেন অনুজ শরিফুলকে।
তবে তাসকিনের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার কাজটা ষোলআনাই করেছেন শরিফুল। তাছাড়া তিন ফরম্যাটে উইকেট শিকারে দু’জনই যে রয়েছেন যৌথভাবে সবার উপরে। বাংলাদেশী বোলারদের মধ্যে তাসকিন ও শরিফুল এই বছর তিন ফরম্যাট মিলিয়ে উইকেট বাগিয়েছেন ৪৬টি। সেদিক থেকে এই দুইজনের যুগলবন্দী সফল বলাই চলে।
ওয়ানডেতে পুরো বিশ্বে উইকেট শিকারের দিক থেকে এক নম্বরে রয়েছেন কুলদ্বীপ যাদব। ভারতের এই বোলার ২৯টি ইনিংসে হাত ঘুরিয়েছেন। উইকেট শিকার করেছেন ৪৯টি। চায়নাম্যান স্পিনারের থেকে বেশ পিছিয়ে আছেন শরিফুল। তবে সেটাও অবশ্য তার জন্যে বেশ ইতিবাচক। সমান সংখ্যক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে শরিফুলের পরিসংখ্যানও নিশ্চয়ই আরও খানিকটা সমৃদ্ধ হতে পারত।
সে যাইহোক, শরিফুল নিশ্চয়ই সেসব নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। নিজের অস্ত্রাগার আরও একটু সমৃদ্ধ করাই হওয়া উচিৎ তার মূল লক্ষ্য। শরিফুল বেজায় তরুণ। এখনও লম্বা সময় পাড়ি দিতে হবে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে। তাছাড়া ইনজুরি প্রবণতাও অন্যসব টাইগার পেসারদের তূলনায় বেশ সীমিত শরিফুলের। সেটাও তার জন্যে যথেষ্ট ইতিবাচক।
এই সব সামগ্রিক চিত্রের কারণেই ভারতের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে তার খেলার গুঞ্জন রটেছিল। যদিও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শরিফুলকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হওয়া টেস্ট সিরিজের জন্যে ছাড়তে নারাজ। ঠিক সে কারণেই এবার নিলাম থেকেও নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন শরিফুল। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে খেলা হচ্ছে না সবচেয়ে জমকালো আয়োজন।
শরিফুল হয়ত সেই আক্ষেপ দূরে ঠেলে দিতে চাইবেন। হতে চাইবেন দুর্নিবার। রোল মডেল হিসেবে মিচেল স্টার্ক হতেই পারেন আদর্শ। জাতীয় দলের জন্যে তিনি পিছু হটেছিলেন ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট থেকে। এরপর তো রেকর্ড গড়া পারিশ্রমিকে আইপিএল মাতাবেন এই তারকা। শরিফুলও নিশ্চয়ই সেই পথে হাটতে চাইবেন। তার সেই পথ চলা বাধাহীন হোক, সেটাই তো প্রত্যাশিত।