সিঙ্গার কাপ ১৯৯৬: অস্বাভাবিক, অকল্পনীয়, অসাধ্য!

যখনকার কথা তখন প্রথম ৫ ওভারে ১৫-২০ রান হতো। ২৫-৩০ হলেই ধরে নেওয়া হতো ব্যাটার ফর্মে এবং মেজাজে আছেন আজকে। প্রবল ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং করছেন। কিন্তু তাই বলে ৫ ওভারে ৭০ স্রেফ অস্বাভাবিক, অকল্পনীয়, অসাধ্য। হয় না, হতে পারে না। কিছুতেই না। কোনো হিসেবেই না। আচ্ছা, বল কারা করছিলো? ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ। সেই মুহূর্তে উপমহাদেশের ত্রাস।

টিভি খুলতে আধঘন্টা দেরি হয়ে গেছে। ভারত ফুটে গেছে তাই খেলা দেখার আগ্রহ কম। সিঙ্গার কাপ ফাইনাল। কলম্বো ১৯৯৬। ভারত না থাকলেও, বুক কাঁপিয়ে দেওয়া পাকিস্তানি পেসারেরা আছেন। পাকিস্তান বল করছে। টিভি খুলে দেখি সে এক অদ্ভুত স্কোরকার্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষ টিম ৫ ওভারে ৭০ রান করেছে – একজন ওপেনার ৬৬, আরেকজন ০, এক্সট্রা ৪। ইউটিউব জন্ম নেয় নি। বাড়িতে ইন্টারনেট আসতে আরো দু বছর বাকি। তাই ম্যাচ শেষ অব্দি অপেক্ষা করে তবেই হাইলাইটস দেখতে পেলাম।

যখনকার কথা তখন প্রথম ৫ ওভারে ১৫-২০ রান হতো। ২৫-৩০ হলেই ধরে নেওয়া হতো ব্যাটার ফর্মে এবং মেজাজে আছেন আজকে। প্রবল ধ্বংসাত্মক ব্যাটিং করছেন। কিন্তু তাই বলে ৫ ওভারে ৭০ স্রেফ অস্বাভাবিক, অকল্পনীয়, অসাধ্য। হয় না, হতে পারে না। কিছুতেই না। কোনো হিসেবেই না। আচ্ছা, বল কারা করছিলো? ওয়াকার ইউনুস, আকিব জাভেদ। সেই মুহূর্তে উপমহাদেশের ত্রাস।

আরেকটা ম্যাচ। ঐ ১৯৯৬ তেই। বিশ্বকাপ। কোটলা। এদিন অবশ্য টিভি ঠিক সময়েই খুলেছিলাম। কিন্তু পরে টের পেলাম না খুললেই ভালো হতো। অথচ দিনের শুরুটা দারুণ হয়েছিলো। আজ্জু-শচীন ১৭৫ রানের বিশাল পার্টনারশিপ করলেন। সচিনের রান-এ-বল সেঞ্চুরি। ১৩৭ – ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। ১৩ বছর আগে, ১৯৮৩ সালে কপিলের ১৭৫* – তার পরেই এই ১৩৭। অর্থাৎ ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

প্রথমে ব্যাট করে পার স্কোরের থেকে অনেক বেশি রান তুলে দিয়েছে ভারত, তাও আবার তিন উইকেটে। জাস্ট পায়ের ওপরে পা তুলে জিতবো। এম্যাচ হারায় কার সাধ্যি?

ও মা। কিছুক্ষণের মধ্যেই বেদম (নাকী উদুম?) মার খেয়ে দেখি ভারতীয় পেসার মনোজ প্রভাকর (সাদা আর্ম ব্যান্ড পরে?) মিষ্টি মিষ্টি অফস্পিন করছেন। মাথা হেঁট বললেও কিছু বলা হয় না। দলের ওপেনিং পেসারকে চার ওভারের বেশি বল করানো যায় নি সেদিন। তারমধ্যে সেকেন্ড স্পেলে দু ওভার অফ স্পিন। কারণ তার আগের স্পেলে দু ওভারে তিনি ৩৩ রান দিয়েছেন। কাঁধ ঝুলে হাঁটুর কাছে চলে এসেছে পুরো টিমের।

স্মৃতিতে এটুকুই বারবার ভেসে আসছিলো। গত কয়েক দিন ধরে। প্রথম ১৫ ওভারে খেলার ব্যাটারদের সতর্ক হয়ে খেলার চেনা পরিচিত নিয়ম ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছেন একজন শ্রীলঙ্কান। অনেক সময় আমার দেশের বিরুদ্ধেই ভালো খেলছেন – কিন্তু খেলছেন তো? তাই ‘আউট হ, আউট হ’ বলতে বলতে নিজেই কখন যে মনের ভেতরে ভেতরে সনাথ জয়াসুরিয়ার সাফল্য কামনা করতে শুরু করে দিয়েছি সেটা নিজেও জানি না।

এই যে নতুন কিছু করতে চাওয়া, নতুন কিছু ভাবা – এটা করতে শুধু স্কিল নয়, কলজে লাগে। এখন ইংল্যান্ড টিম যেমন টেস্টে শুরু করেছে। বড় আগ্রহ লাগে নতুন কিছু দেখতে, নতুন কিছু শিখতে।

আহ! চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাচ্ছি। কালো ওনিডা টিভি । বাড়ির প্রথম কালার টিভি, সাত রাজার ধন এক মানিক। অস্পষ্ট ছবি। ঐ তো সিঙ্গার কাপের লিগ ম্যাচ চলছে। ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কান ওপেনারেরা ২২৭ টার্গেট চেজ করতে নেমে মেরে লাল করে দিচ্ছেন।

২১ ওভারে ১২০ রান হয়ে গেছে। একখানা উইকেট’ও পরে নি। ঝাপসা সচিন বল করতে এলেন। ততোধিক ঝাপসা কালুভিথারানাকে বোল্ড করলেন। মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল। হেলমেটের চাপে তখনো বসে যায় নি। এক হাত ঝাঁকিয়ে সামান্য সেলিব্রেশন। সারা ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ঐ একটিমাত্র উইকেট ভারত ফেলতে পেরেছে এবং ম্যাচটি ৯ উইকেটে হেরেছে। ও হো, ভারতের হয়ে একমাত্র উইকেট নেবার আগে, সচিন আবার সেঞ্চুরি’ও করেছেন। ২৩ বছরের যুবা আর কতো করবেন দেশের জন্য?

ঝাপসা শচীন – সে এক অন্য শচীন। অনন্য শচীন। রূপকথার শচীন। দেশ এবং নিজের ক্যারিয়ার – দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধায় না পরা শচীন। সে শচীনকে নিয়ে ফিরে আসবো অন্য কোনদিন। আজ থাক।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...