ছক্কাও হাঁকালেন, ডাকও মারলেন!

না, কোনো গালগল্প নয়। সত্যিই ক্রিকেটে একই বলে ছক্কা হাঁকানো ও ‘ডাক মারা’র ঘটনা ঘটেছে। যদিও, সেটা মাত্র একবার। চলুন সেই গল্পটাই এবার একদম গোড়া থেকে শুনি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ক্রিকেট মাঠে ফেরাটা অনবার্যই ছিলো। সব সময়ের মত ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া নিশ্চিত করেছিলো যে সব কিছু ঠিকঠাক আছে। তাই অ্যাশেজ আয়োজন করা হয়। ১৯২০-২১ সালে আয়োজিত অ্যাশেজ ছিলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথম কোনো ক্রিকেট আসর। ফলে, ঐতিহাসিক ভাবেই সেই সিরিজের গুরুত্ব ছিল অন্যরকম। অনেকটা আজকের দিনে করোনার পর ক্রিকেট ফেরার মত ব্যাপার, কিংবা তাঁর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

এই অ্যাশেজ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, কারণ এই সিরিজেই প্রথমবারের হোয়াটওয়াশ হয় কোনো দল। অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মত হোয়াটওয়াশ করে ইংল্যান্ডকে। সেই সিরিজের ফলাফল ছিলো ৫-০। ম্যাচের ফলাফলগুলো ছিলো যথাক্রমে ৩৭৭ রান, ইনিংস এবং ৯১ রান, ১১৯ রান, ৮ উইকেট এবং ৯ উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার জয়।

উইজডেন অত্যন্ত দু:খের সাথে লিখে, ‘যুদ্ধের আগের পরিস্থিতিতে ফিরতে পারেনি ইংল্যান্ড ক্রিকেট।’ অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সব বিভাগেই দাপট দেখায়।

যদিও, সেবার যে অ্যাশেজে আটটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে ইংল্যান্ড তার মধ্যে পাঁচটাতে জিতে, হারে একটিতে। সেগুলোও প্রথম শ্রেণির মর্যাদা পায়। তবে, মূল লড়াইয়ে তাঁরা পারেনি।

তবে, যে ঘটনার কথা বলতে চলেছি – সেটা এর কোনোটাতে ঘটেনি।

মেলবোর্নে অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টটা ছিল সেকেলে ‘টাইমলেস’ টেস্ট। তবে, চতুর্থ দিনের শুরুতেই, মানে চার জানুয়ারি সকালে ম্যাচটার ইতি ঘটে। এর ফলে সফরকারী ইংল্যান্ড দল কাছেই ব্যালারাটে একটা দুই দিনের ম্যাচ খেলতে চলে যায়। ১১ জনের দলের সেই ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা থাকলেও সফরকারী দল ১৫ জন সদস্য নিয়ে খেলতে যায়।

ধারণা করা হয়েছিল ম্যাচটি হবে এক পেশে। ব্যালারাট ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। চার উইকেট হারানোর পর এন ফিলিপের সাথে ক্রিজে আসেন বিল উডফুল। বিল তখন একেবারেই তরুণ, ক্যারিয়ারের অভিষেক প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলতে নামেন। তবুও সেবার ৫০ রানের একটি ইনিংস খেলে ফেলেন। এন ফিলিপ ৫৩ রানে আউট হন। এর পরেও দূর্ভাগ্যবশত ব্যালারাট ১৮৩ থেকে ২১১ রানে যেতেই হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট ( ম্যাচ হয়েছিলো ১৪ উইকেটের)।

ব্যাটিং করতে নেমে এমসিসি ১১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। ৪ উইকেট হারানোর পর পার্সি ফেন্ডার ক্রিজে আসেন। জুটি বাধেন ফ্র্যাঙ্ক উললির সাথে। দুই ব্যাটসম্যানই বিখ্যাত ছিলেন তাঁদের মারকাটারি ব্যাটিংয়ের জন্য। ব্যাটিং শুরু করার পর থেকে তাঁরা স্ট্রোক শটের মাধ্যমে দর্শকদের আনন্দ দিতে শুরু করেন।

উলি ২০ চার এবং চার ছয়ের মাধ্যমে করেন ১৫৯ রান। ফেন্ডার ১২ চার এবং তিন ছয়ে করেন ১০৬ রান। চার মাস পর ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরি করেন। এই ম্যাচেরই মাস চারেক আগে মাত্র ৩৫ মিনিটে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেন ফেন্ডার, সেটা আজো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরি হিসেবে টিকে আছে।

উলি কিংবা ফেন্ডার – জুটির সবগুলো ছয়ই মাঠ সংলগ্ন রাস্তায় গিয়ে পড়ে। এই সাতটি ছক্কার মধ্যে একটি মাঠের পাশেই এবডেন স্ট্রিট পেরিয়ে ফার্মে গিয়ে পড়ে। সেই ফার্মে ছিল এক গাঁদা হাঁস। তাঁদের মধ্যে একটা হাঁস মারা যায়। সেই ‘ডাক মারার’ ছক্কাটি হাঁকান পার্সি ফেন্ডার।

ম্যাচে অধিনায়ক ছিলেন রকলি উইলসন, জনি ডগলাসের অনুপস্থিতে এমসিসি একাদশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। ৩৮৪ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর ইনিংস ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৪.৩ ওভার ব্যাট করে ব্যালারাট অল আউট হয় মাত্র ৩০ রানে। এমসিসি একাদশ জিতে ইনিংস ও ১৪৩ রানের বিরাট ব্যবধানে।

তবে, জয় পরাজয় ছাপিয়ে ওই সেই ছক্কা আর হাঁস মারার ঘটনার জন্য ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর হয়ে আছে ম্যাচটি।

 

লেখক পরিচিতি

খেলাকে ভালোবেসে কি-বোর্ডেই ঝড় তুলি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link