বিশ্বকাপে ‘ছোটদের’ উত্থান: কিভাবে ও কেন?

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যার শুরুটাই হয়েছিল নামিবিয়ার কাছে শ্রীলঙ্কার হার দিয়ে। সেই যে অঘটনের অবতারণা। এরপর পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই চলতে থাকলো। এমনকি শেষ পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত থাকলো। সুপার টুয়েলভ পর্বের শেষ দিনে এসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দিল নেদারল্যান্ডস।

এর মাঝে আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে হারালো, স্কটল্যান্ডের কাছে পরাজয় বরণ করলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এরপর আবার আইরিশদের কাছে হেরে বিশ্বকাপের প্রথম পর্ব থেকেই বাদ পড়লো দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। সব মিলিয়ে এ বিশ্বকাপটি ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যক আপসেট ঘটানোর বিশ্বকাপ। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এর আগে এত অঘটনের সাক্ষী হয়নি পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। 

ক্রিকেটে সম্ভবত টি-টোয়েন্টিই একমাত্র ফরম্যাট যেটিতে সম্ভাব্য ফল নিয়ে কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না। ক্রিকেটের এমন ক্ষুদ্র সংস্করণে আসলে বড় দল, ছোট দল-এগুলো খুব একটা বিবেচনায় আসে না। নিজেদের দিনে যে কোনো দল জিততে পারে। আর এটির উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকছে এবারের বিশ্বকাপ। তারপরও তুলনামূলক খর্বশক্তির দল গুলোর এমন উত্থানের কারণ কী, তাদের ম্যাচ জয়ের ক্ষেত্রে কোন কোন ফ্যাক্টরগুলো কাজ করেছে তা নিয়ে কিছু বিশ্লেষণ হতেই পারে। 

  • ফ্রাঞ্চাইজি লিগের বিশ্বায়ন

ফ্রাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে অনেকের অনেক মতবাদ থাকতেই পারে। এটার বিপরীতে কথা বলা মানুষের সংখ্যাও কম হবে না। তবে যে যাই বলুক, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের বিপ্লবের ক্ষেত্রে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ দারুণ ভূমিকা রেখেছে। এমনকি ক্রিকেটকে বিশ্বায়ন করার ক্ষেত্রেও এমন লিগের অবদান অনেক। প্রতিবছরই এখন নতুন নতুন লিগ শুরু হচ্ছে। সেখানে সুযোগ পাচ্ছে শত শত ক্রিকেটার।

আর এখানেই নিজেদের প্রমাণ করার একটা মঞ্চ পেয়েছে সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেটাররা। এই যেমন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এবার বিশ্বকাপ খেলছেন টিম ডেভিড। অথচ তাঁর ক্রিকেটের শুরুটা হয়েছিল সিঙ্গাপুরের হয়ে । ফ্রাঞ্চাইজি লিগে ক্রমাগত পারফর্ম করতে লাগলেন।

আর এরপরেই মিলল অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার সুযোগ। টিম ডেভিডের মতো আরো অনেকেই বছর জুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলে বেড়ান। মূলত প্রচুর টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুবাদেই খর্বশক্তির দলগুলো পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এবার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল। আর এ কারণেই এ আসরে অঘটনের সংখ্যাও ছিল বেশি। 

  • অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন

ভারতের স্পিনার রবিচন্দন আশ্বিন প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়া সফরেও এসেছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু তিনি এবারে এসে অস্ট্রেলিয়ার উইকেট দেখে তিনি কিছুটা বিস্মিতই হয়েছিল। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার উইকেট আগে এমন ছিল না। এর আগে নির্দিষ্ট করে বোলার বা ব্যাটারদের জন্য সহায়ক পিচ বানানো হতো। কিন্তু এবার পুরোটাই ভিন্ন। 

আশ্বিনের কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ার এবারের উইকেটগুলো ছিল একদম স্পোর্টিং উইকেট। আইসিসি যে কোনো ইভেন্টেই স্পোর্টিং পিচ তৈরি করার চেষ্টা করে। কিন্তু এবার কোনো উইকেটই নির্দিষ্ট করে ব্যাটিং বা বোলারদের জন্য সহায়ক ছিল না। এ কারণে অনেক বড় দল নিজেদের শক্তিমত্তার জায়গার ফায়দা নিতে পারেনি। আর এ কারণেই ছোট দল গুলোর সাথে তাদের লড়াইও হয়েছে সমানে সমান। কিছু ক্ষেত্রে বরং ছোট দলগুলোই ছাপিয়ে গিয়েছে। 

  • রেইন ফ্যাক্টর

এ বারের বিশ্বকাপে অনেক হিসেব নিকেশে বাগড়া বাধিয়েছে বৃষ্টি। অনেক ক্ষেত্রে বৃষ্টি আইনেই কপাল পুড়েছে অনেকের। ছোট দলগুলোর উত্থানের আরেকটা কারণও এই রেইন ফ্যাক্টর। বৃষ্টির কারণে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে যায়।

একই সাথে ফলাফলের ক্ষেত্রেও প্রভাবিত হয়। এই যেমন, ইংল্যান্ড আয়ারল্যান্ডের কাছে হেরেছিল বৃষ্টি আইনেই। শুধু বৃষ্টির এই ফ্যাক্টরের কারণেই যে ছোট দল সফল হয়েছে, ঠিক তা নয়। তবে ম্যাচের ফলাফলে অনেকখানি প্রভাব রেখেছে।

  • অভিজ্ঞ কোচিং স্টাফ

ছোট দলগুলোর এমন পারফর্মেন্সের সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে অভিজ্ঞ কোচিং স্টাফ। যেমন নেদারল্যান্ডসের এবার সাপোর্ট স্টাফে ছিলেন ২০১১ বিশ্বকাপজয়ী কোচ গ্যারি কার্স্টেন। আর সেই নেদারল্যান্ডসই নিজেদের শেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে।

শুধু নেদারল্যান্ডস নয়, খেলোয়াড়ী জীবনে সর্বোচ্চ লেভেলে ক্রিকেট খেলেছেন এমন কিছু প্রাক্তন ক্রিকেটারদেরও কোচিং প্যানেলে যুক্ত করেছিল সহযোগী দেশগুলো। আর বড় আসরের বড় মঞ্চে দারুণ কিছু করার বারুদটাও খেলোয়াড়রা পেয়েছিল এমন কিছু প্রাক্তন ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই। যেটা এবারের আসরে ছোট দলগুলোর ভাল করার ক্ষেত্রে বড় একটা নিয়ামক ছিল।       

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link