সংগ্রাম থেকে শিখরে, এক অমর স্টিভেন স্মিথ কাব্য

স্টিভেন স্মিথ, ক্রিকেটের এই অধ্যায়ের এক অমর নাম। তাঁর লড়াইয়ের গল্প শুধু টেস্ট ক্রিকেট নয়, যেকোনো ক্ষেত্রেই অনুপ্রেরণা। কারণ তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কখনো হার মানা যাবে না। তাঁর ব্যাট থেকে পরবর্তী ইনিংসগুলোতেও আরও নতুন নতুন ইতিহাসের জন্ম হবে, সেটাই ক্রিকেটপ্রেমীদের একান্ত চাওয়া।

নিজের ইনিংসের প্রথম বল, মিড অনে বল ঠেলেই তরিঘরি করে ছুটলেন নন স্ট্রাইক প্রান্তে। একটা রান, কেবলমাত্র একটা রানেই স্টিভেন স্মিথ অভিবাদনে সিক্ত হলেন দর্শক, সতীর্থ, এমনকি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের থেকেও। ১০ হাজার টেস্ট রান! মহারথীদের এলিট ক্লাব, রোজ রোজ তো আর এমন দৃশ্য টেস্ট ক্রিকেটে দেখা যায় না।

ক্রিকেটের ফ্রেম যদি কোনো শিল্পীর তুলির আঁচড়ে আঁকা ছবি রাখা হয়, তবে স্টিভেন স্মিথ সেই তুলির অনন্য এক আঁচড়। টেস্ট ক্রিকেটের আকাশে তাঁর নামটা এখন আরও উজ্জ্বল, দ্য বেস্ট অব দিস জেনারেশন। স্টিভ ওয়াহ, রিকি পন্টিং অধিনায়ক হিসেবেই ১০০০০ রান করেছিলেন, স্মিথ ও সেই সুযোগ পেলেন। ভাগ্য তো এমনই হওয়া চাই।

কিন্তু, এই শিখরে পৌঁছানোর গল্পটা কখনোই সহজ ছিল না। ২০১০ সালে যখন স্মিথ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন, তখন তিনি ছিলেন লেগ-স্পিনিং অলরাউন্ডার। তাঁর ব্যাটিং অবস্থান ছিল টেল এন্ডারে, আর বোলিংই ছিল তাঁর প্রধান অস্ত্র। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে এবং নিজের অসীম পরিশ্রমের ফলেই তিনি হয়ে উঠলেন আধুনিক ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন।

২০১৩ অ্যাশেজ ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের প্রথম মোড়। লন্ডন ওভালের সেই শতক যেন তাঁর জন্য নতুন দিগন্তের বার্তা ছিল। তারপর থেকে তিনি থেমে থাকেননি। ক্রিজে তাঁর উপস্থিতি যেন প্রতিপক্ষ বোলারদের দুঃস্বপ্ন। ব্যাট হাতে তাঁর নড়াচড়া, বলের লাইনে যাওয়ার অদ্ভুত ভঙ্গি, আর স্কোয়ার লেগ থেকে কাভারে বল পাঠানোর সুনিপুণ দক্ষতা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দেয়।

তবে স্মিথের ক্যারিয়ারটা শুধুই শিখরে ওঠার গল্প নয়; এর মাঝে আছে চরম অন্ধকারও। ২০১৮ সালে বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির কারণে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা যেন তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। তখন অনেকেই ভেবেছিল, হয়তো শেষ হয়ে গেল তাঁর অধ্যায়। কিন্তু স্মিথ ফিরে এলেন আরও শক্তিশালী হয়ে। ২০১৯ অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭৪ রানের মহাকাব্যিক পারফরম্যান্সে তিনি যেন প্রমাণ করলেন, প্রতিভা কখনো হারায় না।

১০ হাজার টেস্ট রানের ক্লাবে স্মিথের প্রবেশ কেবল সংখ্যার নয়, এটা এক লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। ১১৫ টেস্টে ৫৫ এর উপড়ে গড়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করা তাঁকে তুলনা করার সুযোগ দেয় সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে।

স্টিভেন স্মিথের ব্যাটিং কেবল রান তোলার যন্ত্র নয়; এটা এক শিল্প। তাঁর প্রতিটি ইনিংসই যেন একটা গল্প। প্রতিকূল পিচ, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ কিংবা চাপের মুহূর্ত—স্মিথ সবসময় দাঁড়িয়েছেন সামনে থেকে। তাঁর ব্যাট কথা বলেছে, যখন বাকিরা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এখন, ১০ হাজার টেস্ট রান পূরণের পর, স্মিথের জন্য অপেক্ষা করছে আরও বড় স্বীকৃতি। হয়তো তিনি আরেকটি অ্যাশেজ জয় করবেন, হয়তো তিনি আরও অনেক রেকর্ড ভাঙবেন। কিন্তু তাঁর ক্যারিয়ার ইতিমধ্যেই ক্রিকেট বিশ্বকে শিখিয়েছে, সাফল্য শুধু প্রতিভার ফল নয়, এটা সংগ্রামের, পরিশ্রমের এবং নিজের প্রতি অগাধ বিশ্বাসের ফসল।

স্টিভেন স্মিথ, ক্রিকেটের এই অধ্যায়ের এক অমর নাম। তাঁর লড়াইয়ের গল্প শুধু টেস্ট ক্রিকেট নয়, যেকোনো ক্ষেত্রেই অনুপ্রেরণা। কারণ তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কখনো হার মানা যাবে না। তাঁর ব্যাট থেকে পরবর্তী ইনিংসগুলোতেও আরও নতুন নতুন ইতিহাসের জন্ম হবে, সেটাই ক্রিকেটপ্রেমীদের একান্ত চাওয়া।

Share via
Copy link