বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়ায় একটি কথা প্রচলিত আছে- স্পিনারদের যদি কোনো সমস্যা হয় তা হলে তাঁর একটি সমাধানও আছে। আর সেই সমাধান হলো স্পিন বোলিং কোচ সোহেল ইসলাম।
অভিজ্ঞ তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ থেকে শুরু করে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের রকিবুল হাসান সবার মধ্যেই একটি বিষয়ে মিল আছে। তা হলো কঠিন সময়ে তাঁদের উদ্ধার করতে পারেন একজনই, আর তিনি হলেন সোহেল ইসলাম।
তাই এটা অবাক হবার কোনো বিষয় নয় যে, তাইজুল ইসলাম ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নিয়ে সোহেল ইসলামের সাথে কাজ করছেন। বাংলাদেশের বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরির পরামর্শের বোলিং অ্যাকশনজনিত পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘ সময় সোহেল ইসলামের সাথে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু নতুন অ্যাকশন তাইজুল ইসলামের জন্য কার্যকর হয় নাই। কারণ এই অ্যাকশনের ফলে তাইজুলের অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে তাঁর কার্যকর অস্ত্র আর্ম বল হারিয়ে গিয়েছে। তাই আবারো নতুন অ্যাকশনে ফিরে এসেছেন তাইজুল ইসলাম।
গেল জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে সোহেল ইসলামের সাথে কাজ করেছিলেন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ। এছাড়াও আরেক নবীন স্পিনার নাঈম হাসানও কাজ করেছিলেন সোহেল ইসলামের সাথে।
শ্রীলঙ্কা সিরিজের আগমুহুর্তে তাইজুল ইসলামের সাথে কাজ করার পর সোহেল ইসলাম ক্রিকবাজকে বলেন, ‘সবার জন্য সবকিছু উপযুক্ত নয়। এটা স্পিনারদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমি ওদের উপর কিছু চাপানোর চেষ্টা করি না। আমি কাজ করি ওদের শক্তির জায়গা নিয়ে। যাতে তাঁরা শক্তির জায়গা দিয়ে খেলতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তাঁদেরকে (স্পিনার) ছোটো থেকে চেনার কারণে সহজেই তাঁদের মানসিকতা বুঝতে পারি। এর ফলে আমি ওদের জন্য বিকল্পগুলো ঠিক করতে পারি, যা ওরা সহজেই বুঝতে পারে।’
সোহেল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব ১৯ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দেশে আসতে অস্বীকৃতি জানালে সেই সিরিজে স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে ড্যানিয়েল ভেট্টোরিকে নিয়ে আসে। বিসিবি মাঝে মাঝে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত সিরিজে সোহেল ইসলামকে স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে রাখে। আর বিদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত সিরিজে নিয়ে আসে বিদেশী কোচকে।
সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও চলতি শ্রীলংকা সিরিজে টিম লিডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তাঁকে সোহেল ইসলামের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের স্পিনাররা যখনই সমস্যায় পড়ে তখনই সোহেলের কাছে যায়। এমনকি যখন আমাদের হাই প্রোফাইল স্পিন কোচ আছে বলে আমরা বিবেচনা করি।’
আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আসতে অস্বীকৃতি জানালে বিসিবির জন্য সোহেল ইসলাম ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। মেহেদী হাসান মিরাজের মতে এটি আশীর্বাদ স্বরুপ। কারণ বিশ্বের অন্য যেকোনো কোচের চেয়ে শৈশবের কোচ সোহেল আহমেদের সাথে বেশ ভালোভাবে কাজ করতে পারেন তাঁরা।
মিরাজ বলেন, ‘আমরা দুইজনই (মিরাজ এবং তাইজুল) সোহেল স্যারের সাথে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতেছি। আমি ছোটবেলা থেকেই সোহেল স্যারের সাথে কাজ করি আর তাইজুল ভাইও অনেক দিন ধরে কাজ করতেছেন। উনি আমাদেরকে বেশ ভালোভাবে জানে এবং এটা আমাদের জন্য সুবিধা।’
শুক্রবার কাতুনায়ার সিএমসিতে অনুশীলন শেষে মিরাজ আরো বলেন, ‘সে আমাদের উন্নতির জায়গাটা জানেন। সর্বশেষ দুই-তিন ধরে আমরা তাঁর সাথে অনুশীলন করছি। যেমনটা আমরা দেশে থাকলে করতাম। এর আগে আমরা কখনো তাঁকে বিদেশের সফরে পাই নি। এটা এবার আমাদের জন্য সুবিধা। এবার আমরা তাঁর সাথে ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে পারবো না।’
মিরাজ শ্রীলঙ্কার উইকেট সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা মনে স্পিনারদের জন্য লাইন-লেন্থ খুবই গুরুত্বপূর্ন। এখানকার উইকেট বেশ ভালো। আমার মনে হয় এখানকার উইকেট প্রথম এক বা দুই দিন স্পিনারদের পক্ষে কথা না বললেও তৃতীয় কিংবা চতুর্থ দিনে স্পিনারদের সাহায্য করতে শুরু করবে। আমার মনে হয়, আমাদের স্পিনাররা এটার সুবিধা নেবে। আমি এবং তাইজুল ভাই আগে যা করেছি তা এখানেও করার চেষ্টা করবো।’
তিনি বাংলাদেশের ১০০ তম টেস্ট ম্যাচ সম্পর্কে বলেন, ‘এটা অন্য ধরনের অনুভূতি ছিলো নিজেদের ১০০ তম টেস্টে জয় পাওয়া। আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এটা আমারদের প্রথম জয় ছিল। দল ভালো পারফর্ম করার জন্য মুখিয়ে ছিল এবং ম্যাচ জয়ের জন্য সর্বাত্মক চেষ্ট করেছে। টিম মিটিংয়ে সবাই বলেছিলো ম্যাচ জয়ের জন্য শতভাগ দেওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। খেলা শুরুর পর থেকে সবার একই মনোভাব ছিলো। ম্যাচের মধ্যে অনেক উত্থান পতন থাকা সত্ত্বেও আমরা জিতেছিলাম।’
মিরাজ শ্রীলঙ্কা সিরিজ নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা জানান সংবাদ মাধ্যমের কাছে। তিনি বলেন, ‘দেখেন সর্বশেষ কয়েকটি শ্রীলঙ্কা সফরে আমরা বেশ ভালো খেলেছি। দুর্ভাগ্যবশত আমরা নিদাহাস ট্রফি মিস করে গিয়েছি। কিন্তু আমরা টেস্ট এবং ওয়ানডে সিরিজ ড্র করেছিলাম। সর্বশেষ তিন-চার বছরে আমরা শ্রীলঙ্কার থেকে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। যদি আমাদের আগের মত প্রতিশ্রুতি থাকে তাহলে আমরা ম্যাচ জিততে পারবো।’
টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আজকে দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচের উপর ভিত্তি করে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করে টিম ম্যানেজমেন্ট। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট শুরু হবে ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৯ এপ্রিল। দুটি টেস্টই অনুষ্ঠিত হবে পালেকেল্লে স্টেডিয়ামে।
– ক্রিকবাজ অবলম্বনে