দুই প্রজন্ম, দুই দেশ! একটি স্বপ্ন!

তবে শুধু ক্রিকেটই নয়, ফুটবলেও সমান আগ্রহ ছিল আব্বাসের। স্কুল ও ক্লাব ফুটবল খেলেছেন নিয়মিত। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘ট্যালেন্ট পাথওয়ে প্রোগ্রাম’ এ ডাক পেয়ে যায় সে। আজন্মকাল ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখা বাবা আজহার সুযোগটা আর মিস করেননি। ওয়েলিংটনে চলে যান সাথে সাথে। ছেলের চুক্তির সাথে, নিজেও নিয়ে নেন সেখানে সহকারী কোচের দায়িত্ব।

বাবার দেশের বিপক্ষেই আন্তর্জাতিক অভিষেক! আজহার আব্বাস ছিলেন ৯০ এর দশকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের বোলার। অথচ তার ছেলের আন্তজার্তিক অভিষেক হল নিউজিল্যান্ডের হয়ে! মুহাম্মাদ আব্বাসের ক্রিকেটীয় যাত্রাটা শুরু হলে পাকিস্তানের বিপক্ষেই। বাবা-ছেলের ক্রিকেটীয় যাত্রা আলাদা হলেও শিকড়টা এক। তার জন্মও যে লাহোরেই।

তিন বছর বয়সেই বাবা আজহার আব্বাসের হাত ধরে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। জীবিকার তাগিদে বাবা অকল্যান্ডে এসে ছেড়ে দেন নিজের পছন্দের ক্রিকেটটা। তবে ছেলেকে প্রথম দিন থেকেই হাতে ব্যাট আর বল তুলে দেন। ছোট্ট বারান্দা হোক কিংবা পার্কের কোণ, বাবা-ছেলের ক্রিকেট খেলা চলত নিয়মিত।

তবে ২১ বছরের আব্বাসের আন্তর্জাতিক অভিষেকটা হয়ে গেল অপ্রত্যাশিতভাবেই। হঠাৎই ফোন আসে নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের প্রধান কোচ গ্যারি স্টেডের কাছ থেকে। সদ্য লিস্ট-এ ক্রিকেটে ১০৪ ও ৫০ রানের ইনিংস খেলার পর, নির্বাচিত হলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দলে। নিজ দেশ নয়, বরং নিজের জন্মভূমির বিপক্ষেই অভিষেক হল তার। দারুণ এক ঝড়ো ফিফটিও তুলে নিলেন তিনি। পেয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটটাও।

আজহার আব্বাস বলেন, ‘ছেলে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিল, সাথে আমিও। ওর খেলা বরাবরই উপভোগ করি, কিন্তু এত ভালো খেলোয়াড়দের মাঝে ওর ডাক পাওয়া সত্যিই বিস্ময়ের। এটা আমাদের বাবা-ছেলের সেই ছোটবেলার খেলারই এক বড় ফলাফল।’

এই মুহূর্তে ব্যাটিংই আব্বাসের মূল শক্তি। নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ওয়ানডে প্রতিযোগিতা ফোর্ড ট্রফিতে তিনি আছেন সেরা রান সংগ্রাহকদের তালিকায়। কোচ গ্যারি স্টিডও প্রশংসা করতে ভোলেননি, বললেন, ‘স্পিন খেলার দক্ষতা অসাধারণ, আর সঙ্গে কিছুটা বাঁ-হাতি পেস বলও করে যা আমাদের অলরাউন্ডারদের গভীরতা বাড়াতে সহায়তা করবে।’

বাবা সিনিয়র আব্বাস বলেন, ‘জেলাভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে কয়েক মাসেই সাতটা সেঞ্চুরি করল ও, তখনই বুঝলাম এই ছেলের মধ্যে কিছু আছে। ১৩ বছর বয়সেই বুঝেছিলাম, ও অনেক দূর যেতে পারবে।’

তবে শুধু ক্রিকেটই নয়, ফুটবলেও সমান আগ্রহ ছিল আব্বাসের। স্কুল ও ক্লাব ফুটবল খেলেছেন নিয়মিত। কিন্তু ১৬ বছর বয়সে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ‘ট্যালেন্ট পাথওয়ে প্রোগ্রাম’ এ ডাক পেয়ে যায় সে। আজন্মকাল ক্রিকেটার হবার স্বপ্ন দেখা বাবা আজহার সুযোগটা আর মিস করেননি। ওয়েলিংটনে চলে যান সাথে সাথে। ছেলের চুক্তির সাথে, নিজেও নিয়ে নেন সেখানে সহকারী কোচের দায়িত্ব।

আজহার আব্বাস বললেন, ‘নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ও ওয়েলিংটন যেভাবে ওকে সাহায্য করেছে, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। শুধু খেলার দিক দিয়েই না, পড়াশোনা, পরিবেশ সব কিছুতেই নজর রাখে তারা। এটা দেখে একজন অভিভাবক হিসেবে আমি খুবই কৃতজ্ঞ।’

বাবা আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ও একদিন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার হবে। এখন ও একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার, কিন্তু বোলিংয়েও দারুণ সম্ভাবনা আছে। সবকিছু নির্ভর করছে ওর আত্মনিয়ন্ত্রণ, পরিশ্রম আর ধারাবাহিকতার ওপর। যদি এগুলো ধরে রাখতে পারে, তাহলে অনেক দূর যাবে।’

এই গল্পটা শুধুই ক্রিকেটের নয়, এটি একটি পরিবার, একটি সংস্কৃতি আর এক নতুন আশার গল্প। ক্রিকেটে এক নতুন সম্ভাবনার নাম মুহাম্মাদ আব্বাস।

Share via
Copy link