আজব রাতের আজব ম্যাচ

প্রথম দুই ম্যাচে গোলখরায় ভুগতে থাকা স্পেন কিনা শেষ দুই ম্যাচেই দিলো দশ গোল। ঘটনাবহুল এক ম্যাচে বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে শেষ আটে পা রাখলো লা রোজারা।

স্পেনের সোনালি প্রজন্মের বিদায়ের পর আর সাফল্য পায়নি স্পেন। ২০১২ ইউরোর পর থেকেই বৈশ্বিক ফুটবলে সাফল্য নেই স্পেনের। ২০১৬ ইউরো কিংবা ২০১৮ বিশ্বকাপ দুই টুর্নামেন্টেই বাদ পড়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। এবারো তাই পা হড়কানোর একটা আশঙ্কা ছিলই।

তাছাড়া প্রতিপক্ষও যেন তেন কোনো দল নয়, রীতিমতো বিশ্বকাপের রানার্সআপ দল। ম্যাচের শুরুতেই উনাই সিমনের হাস্যকর ভুলে পিছিয়ে পড়ার পর মনে কু ডাক শুরু হয়ে গিয়েছিল স্প্যানিশ ভক্তদের। কিন্তু সারাবিয়া এবং আসপিলিকুয়েতার গোলে যখন শাপমুক্তির আভাস পাচ্ছে তারা, ঠিক তখনি দৃশ্যপটে আবির্ভাব ক্রোয়াটদের।

শেষ দশ মিনিটে দুই গোল ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে ফিরে তারা। এমনকি জিতেই যাচ্ছিল, যদি না অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে রেবিচের শট অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন শুরুতে খলনায়ক বনে যাওয়া উনাই সিমন। পরবর্তীতে আলভারো মোরাতা এবং মিকেল ওইয়ারজাবালের গোলে ম্যাচ জিতে নেয় স্প্যানিশরা।

আলভারো মোরাতা, সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ এই ফরোয়ার্ড যেন ইউরো শুরুর পর থেকে গোলের রাস্তাই ভুলে গিয়েছিলেন। প্রথম দুই ম্যাচেই শিশুতোষ সব গোল মিস করেন, এমন সব গোল মিস করেছেন যেখান থেকে গোল করার চাইতে মিস করাই দু:সাধ্য। অথচ অবলীলায় হেলায় হারিয়েছেন সেসব সুযোগ, এমনকি পেনাল্টি থেকেও বল জালে জড়াতে পারেননি।

ফলশ্রুতিতে চারদিকে থেকে ধেয়ে আসে সমালোচনার ঝড়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পায় হাস্যরসাত্নক সব ভিডিও। কিন্তু এ চরম দুঃসময়ের মোরাতা পাশে পেয়েছিলেন একজনকে, তিনি স্পেনের কোচ লুইস এনরিকে। যিনি নিজেও টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই হয়েছিলেন সংবাদমাধ্যম-ভক্তদের চক্ষুশূল। দলে রিয়াল মাদ্রিদের কাউকে না ডাকার ফলে তীব্র সমালোচিত হয়েছেন, এমনকি রেহাই দেয়নি তার মৃত মেয়েকেও।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রতিকূল সময় পার করে আসা এনরিকে জানতেন কি করে খারাপ সময় পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হয়, প্রিয় শিষ্যকে তাই আগলে রেখেছিলেন সবকিছু থেকে। সামান্য স্নেহ পাওয়া মোরাতাও তাই প্রতিদান দিতে দেরি করলেন নাহ, গোলের নেশায় উন্মুখ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে স্রোতের বিপরীতে দারুণ এক গোল করে দলকে তুলে আনলেন কোয়ার্টার ফাইনালে।

এই এক গোলেই যেন সমালোচকদের সব জবাব দিয়ে দিলেন তিনি। উনাই সিমন কাটিয়েছেন উত্থান-পতনের এক ম্যাচ, ম্যাচের শুরুতে শিশুতোষ ভুলে দলকে পিছিয়ে দেবার পর দারুণ সব সেভ করে দলকে টিকিয়ে রেখেছেন। স্পেন কখনোই ব্যক্তিনির্ভর ফুটবল খেলেনি, ছোট ছোট পাসে দলগত সুন্দর ফুটবলই তাদের একমাত্র দর্শন।

এ ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হয়নি, পাঁচটি গোল এসেছে পাঁচজন ভিন্ন ভিন্ন ফুটবলারের পা থেকে। ম্যাচের আগেই বড় দু:সংবাদ পায় ক্রোয়েশিয়া, করোনা পজিটিভ হয়ে দল থেকে ছিটকে যান টুর্নামেন্টে তাদের সবচেয়ে সফল তারকা ইভান পেরিসিচ।

পুরো ম্যাচে তার অভাব অনুভব করেছে ক্রোয়াটরা। তার পজিশনে আন্দ্রে রেবিচ খেললেও প্রত্যাশার ছিঁটেফোঁটাও মেটাতে পারেননি। লুকা মদ্রিচ চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তার একাকী বুড়ো হাড়ের ভেলকি ফিকে হয়ে গেছে স্প্যানিশ দলগত প্রচেষ্টার সামনে।

শেষ আটে স্প্যানিশরা মুখোমুখি হবে ফ্রান্সকে হারানো সুইজারল্যান্ডের। ইউরোর এই আসরে স্প্যানিশ সুবাস কতক্ষণ টিকে থাকে তা নির্ভর করবে শনিবারের ম্যাচের উপরেই।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link