রিচার্ড এঙ্গারাভার শেষ বলে পাকিস্তানের মোহাম্মদ মুসার স্ট্রোকটা যখন মিড অফে দাঁড়িয়ে টেন্ডাই চিসোরো মিস করলেন তখনই ম্যাচের ভাগ্য যে সুপার ওভারে যাবে তা নির্ধারিত হয়ে যায়। আর শেষের আগের ওভারে মুজারাবানির করা দুর্দান্ত বোলিংয়ে বাবর আজমের উইকেটটা তুলে জিম্বাবুয়ের ম্যাচে দারুণ ভাবে ফিরে আসার পরেও জিততে না পেরে হতাশা তখন যেন গ্রাস করেছে জিম্বাবুয়ে শিবিরে।
কিন্তু, সুপার ওভারের আগে বোধহয় মনে মনে প্রমাদ গুনছিলেন জিম্বাবুয়ের জার্সি গায়ে বছর ২৪ এর যুবকটি। যার ফলে সুপার ওভারের প্রথম বলেই পাক ব্যাটসম্যান ইফতিখার আহমেদকে স্লোয়ারে পরাস্ত করলেন বছর দুয়েক বাদে আবার জাতীয় দলে ফেরা মুজারাবানি, তিন বল পরে আবারো একটা স্লোয়ার বল, কাট করতে গিয়ে বলটাকে উইকেটে টেনে আনলেন খুশদিল শাহ, ব্যাস জিম্বাবুয়ে সমর্থকদের দিল খুশ করে দেওয়ার জন্য বোধহয় এটুকুই যথেষ্ট ছিল।
তিনটি মাত্র রানের টার্গেট সুপার ওভারে অতি সহজেই তাড়া করে জয় এলো জিম্বাবুয়ের। আর এ জয় তো যেমন তেমন জয় নয়, পাকিস্তানের মাটিতে তাদের হারানো তাও একেবারে ২২ বছর পরে। ঐতিহাসিক তো বটেই, আর সেই দুর্দান্ত জয়ের এক নায়ক যদি ব্যাট হাতে অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস হন, তাহলে বল হাতে মূল ম্যাচ ও সুপার ওভার মিলিয়ে সাত উইকেট নেওয়া ব্লেসিং মুজারাবানি।
মুজারাবানি নামটা ক্রিকেট বিশ্বে খুব পরিচিত তা কিন্তু নয়, জিম্বাবোয়ে ক্রিকেটের খবর রাখলে নামটা অবশ্যই পরিচিত। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হল এই যে, ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটে কলপাক নিয়মের কড়াকড়ি না করলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই সিরিজটাই হয়ত খেলা হতো না মুজারাবানির।
২০১৮ সালে জিম্বাবোয়ের জার্সির মায়া ত্যাগ করে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়ে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন, কিন্তু এ বছরে কাউন্টি দলটি তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় কলপাক নিয়মের কড়াকড়িতে। জিম্বাবোয়ের ক্রিকেট সার্কিটে ২০১৭ থেকেই বেশ পরিচিতি পায় ব্লেসিং মুজারাবানি নামটা। সে বছরে লোগান কাপে প্রথম শ্রেণির দল রাইসিং স্টার্স এর হয়ে খেলার জন্য ডাক পান তিনি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরমেন্স বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাঁকে টেস্ট দলে জায়গা করে দেয়। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে ভালো করতে না পারলেও মাস খানেক পরে বাংলাদেশে ত্রিদেশীয় সিরিজে একদিনের ক্রিকেটের জন্য প্রথমবার সুযোগ চলে আসে। একদিনের ক্রিকেটে নিয়মিত সদস্যই হয়ে যান জিম্বাবুয়ে দলে এরপর ভালো পারফরমেন্স দেখিয়ে, ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে ১৮ টি উইকেটও তুলে নেন। এরপরেই ইংলিশ কাউন্টির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে যান, শেষপর্যন্ত আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ও স্বপ্নের বোলিং পাকিস্তান সিরিজে।
বছর খানেক আগেই এই সাড়ে ৬ ফুটের কাছাকাছি লম্বা পেসারকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তৎকালীন জিম্বাবুয়ের প্রধান কোচ হিথ স্ট্রিক আর তাঁর তত্ত্বাবধানে মুজারাবানি অস্ত্রে শান দিয়েছিলেনও চমৎকার। একবছর কাউন্টি ক্রিকেট খেলার পর আরো পরিণত হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে এসেছেন জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এই তরুণ তুর্কি।
পেসটা তাঁর বরাবরই ছিল, তুনে তার সাথে যুক্ত করেছেন চমৎকার স্লোয়ার বল, যা দিয়ে পাকিস্তান কে কুপোকাত করলেন ঐতিহাসিক এই জয়ের দিনে। সিমটা বরাবরই সোজা রেখে বলটা করেন মুজারাবানি, আর তাঁর পেস ও অ্যাকশনের জন্য জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট মহলে ‘জিম্বাবুয়ের রাবাদা’ নামে ইতিমধ্যেই পরিচিতি লাভ করেছেন তিনি।
টাটেন্ডা টাইবুর ক্রিকেট একাডেমি থেকে উঠে এসে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ও তারপরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন ময়দানে পা রেখে ধীরে ধীরে আরো পরিণত হওয়া মুজারাবানি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ‘আশীর্বাদ’ হয়ে বোলিং বিভাগকে অদূর ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে পারেন কিনা ক্রিকেট জগতের চোখ থাকবে তারই ওপরে।