দ্য ক্লাস অব ২০১২

অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়টাকে ধরা হয় জাতীয় দলের সাপ্লাই লাইন। সে পর্যায়ে ভাল করা খেলোয়াড়দের একটু ঘসেমেজে পরিপক্ক করেই তবে আনা হয় জাতীয় ক্রিকেট দলে। এই অনূর্ধ্ব ১৯ দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ, যা কিনা যুব বিশ্বকাপ নামেও পরিচিত। আইসিসি ধারাবাহিকভাবে বয়সভিত্তিক বৈশ্বিক সেই লড়াই আয়োজন করে আসছে বেশকিছু বছর ধরেই। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালেও অনুষ্ঠিত হয়েছিলো অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ।

সেবারের আসর বসেছিলো দ্বিতীয়বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। সেটি ছিলো যুব বিশ্বকাপের নবম আসর। ২০১২ সালের সেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো ভারত। দ্বিতীয় অবস্থানে থেকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিলো অস্ট্রেলিয়াকে। প্রায় এক দশকে এসে সেই টুর্নামেন্ট থেকে পরবর্তীতে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার বনে যাওয়াদের নিয়েই আজকের আলোচনা।

  • ট্রাভিস হেড (অস্ট্রেলিয়া)

২০১২ সালের রানার্স আপ দলের সদস্য ছিলেন ট্রাভিস হেড। সেই অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের চার বছর বাদে তিনি সুযোগ পান জাতীয় দলে। প্রথমে সুযোগ পেলেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এরপর একই বছরে খেললেন ওয়ানডে দলে। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ১৬টি ও ওয়ানডে খেলেছেন ৪২টি।

রঙিন পোশাকে অভিষেকের বছর দুই বাদে অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে উঠে আসা ট্রাভিস হেড সুযোগ পান অজিদের টেস্ট দলে। সাদা পোশাক ও ব্যাগি গ্রিন ক্যাপটি পরে তিনি ২২ বার মাঠে নেমেছিলেন। অলরাউন্ডার হলেও ব্যাট হাতে জাতীয় দলে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তিনি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে হেডের মোট রান ১৯৯৩ ও উইকেট সংখ্যা ১৩টি।

  • নাজিবুল্লাহ জাদরান (আফগানিস্তান)

বিশ্বক্রিকেটের উদীয়মান এক ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বেশ একটা সুনাম কামিয়েছে আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অত্যন্ত ভয়ংকর একটি দল তাঁরা। অন্যদিকে সদ্যই টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েই বাংলাদেশের মতো দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট খেলা একটি দলকে হারানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির।

সেই দেশে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের একজন সদস্য হয়ে ২০১২ যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। যদিও তার আগেই নাজিবুল্লাহর জাতীয় দলের অভিষেক হয়ে গিয়েছিলো। এখন পর্যন্ত সাদা বলের দুই ফরম্যাটে তিনি মোট ম্যাচ খেলেছেন ১৩৮টি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে তাঁর রান সংখ্যা যথাক্রমে ১২৩২ ও ১৬১৫।

  • বাবর আজম (পাকিস্তান)

বর্তমান সময়ে ওয়ানডেতে ব্যাটারদের তালিকায় সবার উপরে থাকা বাবর আজম খেলেছিলেন ২০১২ অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। যুব বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া বাবর আজম খুব একটা সাফল্য এনে দিতে পারেননি দলকে। কিন্তু এখন এসে তিনি হাল ধরেছেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের।

প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলকে বড় কোন শিরোপা জেতাতে। সেইজন্যে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি নিজের ব্যাটটাকেও সচল রাখছেন প্রতিনিয়ত। বাবর আজমের জাতীয় দলের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটের মধ্যদিয়ে। এক বছরের মাথায় তিনি তিন ফরম্যাটের দলেই জায়গা করে নেন। ২০টি শতকের কল্যাণে ইতোমধ্যেই বাবর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ছয় হাজারের অধিক রান করে ফেলেছেন। সংখ্যাটা ক্রমান্বয়ে অগ্রগামী।

  • ইশ সোধি (নিউজিল্যান্ড)

আধুনিক যুগের ক্রিকেটে লেগ স্পিন বোলারদের আলাদা একটা কদর কিংবা চাহিদা রয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় নিউজিল্যান্ড দলেও বেশ শক্তপোক্ত জায়গা করে নিয়েছেন ইশ সোধি। তিনিও একজন লেগ স্পিনার। ২০১২ সালের যুব বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্য হয়ে ইশ সোধি পাড়ি জমিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াতে।

বিশ্বকাপ পরবর্তী সময়ে এক বছরের মাথায় ইশ জায়গা করে নেন নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলে। এরপর থেকে একেএকে অভিষেক ঘটে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডেতে। এখন কন্ডিশন ও পিচের ধরণ বুঝে ব্ল্যাকক্যাপসদের নিয়মিত মুখ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তাঁর ঝুলিতে উইকেট রয়েছে ১৬৭টি।

  • কুইন্টন ডি কক (দক্ষিণ আফ্রিকা)

মাত্র ২৯ বছর বয়সেই টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান উইকেট কিপার ব্যাটার কুইন্টন ডি কক। ২০১২ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা সম্ভাবনাময়ী এই তরুণ ক্রিকেটার দ্রুতই জায়গা করে নেন জাতীয় দলের টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে। একই বছরের ডিসেম্বরে।

এর পর পালাক্রমে প্রোটিয়াদের হয়ে ওয়ানডে ও টেস্ট খেলতে শুরু করেন কুইন্টন ডি কক। ৫৪ টেস্ট ম্যাচ খেলে তিনি অবসর নিয়ে নেওয়ার আগে রান করেছিলেন ৩৩০০। বাকি দুই ফরম্যাট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭১৮২ রান। তিনি হয়ত রঙিন পোশাকে আরো কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাবেন কিংবা ভিন্ন কোন পরিকল্পনাও হয়ত করে রেখেছেন ডি কক।

  • নিরোশান ডিকওয়েলা (শ্রীলঙ্কা)

অবসরের হিড়িক পড়েছে লঙ্কান ক্রিকেটে। এরই মাঝে যাদের উপর ভর করে লংকান ক্রিকেট হয়ত এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন উইকেট রক্ষক ব্যাটার নিরোশান ডিকওয়েলাও। যিনি কিনা ২০১২ সালে লংকান যুব দলের একজন সদস্য ছিলেন।

অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পর তিনি প্রথম জাতীয় দলে সুযোগ পান ২০১৩ সালে। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ান নিরোশান ডিকওয়েলা। তারপর সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১২৬ ম্যাচের বিপরীতে রান করেছেন ৪৫০১।

  • হনুমা বিহারি (ভারত)

২০১২ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার বেশ পরে ভারত জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পান হনুমা বিহারি। একজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার হিসেবে ২০১৮ সালে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এখন অবধি তিনি খেলেছেন মোট ১৩টি টেস্ট ম্যাচ।

১১৩ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস নিয়ে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের মোট রান ৬৮৪। জাতীয় দলের অভিষেকের জন্যে বেশ একটা লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে হনুমা বিহারির। তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন এই দীর্ঘ অপেক্ষার ফল যেন অতিদ্রুতই শেষ না হয়ে যায়। দীর্ঘতম এক ক্যারিয়ার গড়েই হয়ত তিনি ইতি টানতে চাইবেন সময়ে দিক থেকে না হোক অন্তত অর্জনের দিক থেকে।

  • লিটন দাস (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশের টেস্ট দলে ব্যাট হাতে নিয়মিত পারফর্ম করাদের মধ্যে বর্তমানে তালিকার উপরের দিকেই থাকবেন লিটন দাস। বিগত বেশকিছু টেস্ট ম্যাচে তিনি দারুণ কিছু ইনিংস খেলেছেন যা কিনা ২০১২ সালের দেখানো সম্ভাবনার প্রতিফলন। ২০১২ সালের যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন লিটন।

তবে, নান্দনিক এই ব্যাটারের জাতীয় দলের অভিষেকটা একটু সময় নিয়েই হয়েছিলো ২০১৫ সালে। সেই বছরই তিন ফরম্যাটে অভিষেক হয় লিটনের। সদ্যই টি-টোয়েন্টি জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া লিটনের বাকি দুই ফরম্যাটে মোট রান তিন হাজারের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link