১৯৯৮ সালের অক্টোবর। অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিখ্যাত রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট। টার্নিং উইকেটে তিন রকমের তিনটা জেনুইন স্পিনার নিয়েও কিছু করতে পারেনি পাকিস্তান দল। উলটো হারতে হয়েছিল ইনিংস ব্যবধানে!
পাকিস্তানের মাটিতে ঠিক কত বছর পর অস্ট্রেলিয়া টেস্ট জিতেছিল জানেন? ৩৯ বছর! দ্যাটস হোয়াই ইট ওয়াজ ভেরি ভেরি স্পেশাল। এটার আগে তাঁদের সবশেষ জয়টি এসেছিল ১৯৫৯ সালে করাচিতে, সেই রিচি বেনোর নেতৃত্বে।
টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছিল পাকিস্তান অধিনায়ক আমির সোহেল, যেন চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে না হয়। প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের তোলা ২৬৯ রান ছিল যথেষ্ট। সাঈদ আনোয়ার ১৪৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছিলে।
এদিকে জবাব দিতে নেমে স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৬ রান তুলতেই অস্ট্রেলিয়া হারায় ৩ উইকেট, ওয়াসিম আকরামের সুইং আর মুশতাকের আহমেদের স্পিনে ধরাশায়ী মার্ক ওয়াহ, মার্ক টেলর আর জাস্টিন ল্যাঙ্গার।
অ্যান্ড হিয়ার কামস দ্য স্যাভিয়ার! দলকে বাঁচাতে আরও একবার সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ‘নার্ভলেস’ অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ। সাকলাইন মুশতাক, মুশতাক আহমেদ আর মোহাম্মদ হুসাইনদের স্পিন থ্রেট উপেক্ষা করে উপহার দেন ১৫৭ রানের এক অভাবনীয় মাস্টারক্লাস! তাঁকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছিলেন মাইকেল স্ল্যাটার, তার উইলো থেকে আসে ১০৮ রান। ওয়াহ আর স্ল্যাটারের জুটি ছিল ১৯৮ রানের।
ওয়াহকে টানা দুই প্রান্ত থেকে বল করে গেছেন দুই মুশতাক। কিন্তু, স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন ওয়াহ। তাঁদের মিড উইকেটের ওপর আছড়ে ফেলেছেন, সুইপ করেছেন, কখনো বা নান্দনিক লেট কাট করেছেন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা বাঁ-হাতি স্পিনার মোহাম্মদ হুসাইন আক্রমণে আসার পরও ম্যাচে ফিরতে পারেনি পাকিস্তান। ওয়াহ ছিলেন অবিচল।
খুব অল্প সময়ই তাঁকে ধাঁধায় ফেলতে পেরেছে পাকিস্তান। উইজডেনের ভাষায়, ‘ওয়াহর মত সামনে এগিয়ে নিতে আর কেই বা পারে?’
২৬-৩ থেকে অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৫১৩! খেলা তো ওখানেই শেষ। ম্যাকগিলের ঘূর্ণিতে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৪৫ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান! এক ইনিংস ও ৯৯ রানের ব্যবধানে জেতে অস্ট্রেলিয়া। সিরিজের পরের দু’টি ম্যাচে পেশোয়ার ও করাচিতে ড্র করে দু’দল। ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে অজিরা।
এখনকার অজি ব্যাটসম্যানরা তো সাবকন্টিনেন্টে এসে স্পিনের সামনে চোখে সর্ষেফুল দেখে। অথচ লুক অ্যাট স্টিভ ওয়াহ, র্যাংক টার্নারে কিভাবে ব্যাট করতে হয় দেখুন।
ম্যাচটা অবশ্য আরেকটা কারণে বিখ্যাত। দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ওয়াসিম আকরামের ক্যাচ নেওয়ার সুবাদে উইকেটরক্ষক হিসেবে ৩৫৬ তম ডিসমিসালের মালিক হন ইয়ান হিলি। তখন তিনি রডনি মার্শকে ছাপিয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের কীর্তি গড়ে ফেলেন।