Social Media

Light
Dark

আসেনি ‘শুভ’দিন

পর্যাপ্ত সুযোগ কি পেয়েছিলেন? – এই সহজবোধ্য প্রশ্নটার উত্তর মেলানোটাই হয়ত বড্ড কঠিন ব্যাপার!

একপ্রান্তে এক যুগের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিংয়ে খেলছেন তামিম ইকবাল খান। এই দীর্ঘ যাত্রায় ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হয়েছেন অনেকেই। জুনায়েদ সিদ্দিকী, জিয়াউর রহমান, ইমরুল কায়েস থেকে এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, লিটন দাসরা খেলেছেন তামিমের সাথে। এই তালিকায় আরও এক নাম শামসুর রহমান শুভ।

লম্বা সময় ধরেই বাংলাদেশের ওপেনার সংকট ছিল। তামিমের সাথে লম্বা সময় ধরে খেলবে এমন সম্ভাবনা দেখালেও সেটি বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি কেউই। ঠিক তেমনি সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটের মঞ্চ আলোকিত করে জাতীয় দলের সাজানো বাগানে পা দিয়েছিলেন শামসুর রহমান।

২০০৯ সালে গায়ে জড়ান ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় তারকার তকমা। ঘরোয়া লিগে মোহামেডানের হয়ে ১৫ ইনিংসে ৪৮.৩৫ গড়ে ৬৭৭ রান করে তাক লাগিয়ে দেন ২০ বছর বয়সী এই তারকা। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ডাক পেলেন; কিন্তু অভিষেকের অপেক্ষায় প্রহর গুনলেও সুযোগ পাননি। এরপর ঘরোয়া লিগে টানা কয়েক মৌসুম দুর্দান্ত পারফর্ম করলেন। জাতীয় দলেও আলো ছড়াবেন এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা থেকেই সুযোগ দেওয়া হল শুভকে।

অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেকটা আরও আগে। ২০০৫ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অন্যতম সেরা একজন ছিলেন তিনি। পার্ট টাইম উইকেটরক্ষক হিসেবেও বেশ পরিচিত এই ওপেনার।

৩১ অক্টোবর, ২০১৩। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে অভিষেক। প্রথম ম্যাচে করলেন ২৫ রান। ঠিক পরের ম্যাচেই নিজের সামর্থ্যের জানান দিলেন শুভ। ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিলেন দলকে। শুভর ব্যাটে চড়ে ওই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ধরাশায়ী করে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির হাতছানি থাকলেও মাত্র ৪ রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরেন তিনি!

পরের সিরিজে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে খেলেন ৪৯ বলে ৬২ রানের ঝড়ো ইনিংস। ওই সিরিজেই টি-টোয়েন্টি জার্সিও গায়ে জড়ান তিনি। তবে অভিষেকে গোল্ডেন ডাকে আউট হয়ে হতাশ হয়ে ফিরেন তিনি। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেখা পান মেইডেন টি-টোয়েন্টি ফিফটি।

পর পর দুই সিরিজে শুভর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মনেই হচ্ছিল লম্বা সময়ের জন্য বাংলাদেশের ওপেনিং সংকট কাটতে যাচ্ছে। কিন্তু সেই ভাবনাটা স্বপ্ন অবধি রয়ে গেল। পরের সাত ম্যাচে দুই অঙ্কের দেখা পান মাত্র ২ ম্যাচে। ব্যাস, দল থেকে বাদ পড়লেন।

২০১৪ সালে টেস্ট অভিষেক। ঘরোয়া ক্রিকেটের ধারাবাহিকতা জাতীয় দলেও ধরে রাখবেন সেটাই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এখানেও তিনি ব্যর্থ। নিজের খেলা দ্বিতীয় টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেন সেঞ্চুরি। সাদা পোশাকে অর্জনের খাতাটা এখানেই বন্ধ। ২০১৩ সালে জাতীয় দলে আসা আর ২০১৪ সালে বাদ পড়া – বছর খানেকের ব্যবধানে ক্যারিয়ারের শুরু আর শেষটা দেখে ফেলেন শুভ।

তবে, প্রশ্নটা থেকেই যায় – তিনি কি পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছিলেন?

মাত্র ৬ টেস্ট খেলেছেন। এই ৬ টেস্টে ২৫.৪২ গড়ে করেছেন ৩০৫ রান। রঙিন জার্সিতে ওয়ানডে খেলেছেন ১০টি। এই দশ ম্যাচে ২৬.৬০ গড়ে ২ ফিফটিতে করেন ২৬৬ রান। টি-টোয়েন্টির পরিসংখ্যানটা আরও বাজে। ৯ টি-টোয়েন্টিতে ১০.৭৫ গড়ে মোটে ৮৬ রান। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে করেছেন ৮ হাজারের বেশি রান। লিস্ট এ ম্যাচেও সাড়ে চার হাজারের বেশ রান করেছেন তিনি।

শুভ যে সময়টায় খেলেছেন – বাংলাদেশ তখন কালেভদ্রে জয়ের দেখা পেত। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে তো করুণ দশা ছিল বাংলাদেশের। ‘পাইপলাইন’ নামক কিছু আদৌ ছিল কি-না সে নিয়েও সন্দেহ আছে। অন্তত ওয়ানডে ফরম্যাটে তার উপর আস্থা রাখলে ভাল কিছু দেখাতে পারতেন বলেও অনেকের ধারণা। কিন্তু পর পর দুই ম্যাচে দু’টি দুর্দান্ত ইনিংস খেললেও সাময়িক ব্যর্থতায় বাদ পড়লেন; ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের ফোয়ারা ছোটালেও আর সুযোগই পেলেন না তিনি।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে অবশ্যই অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু এই ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্স বিচারেই তো খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে আনা হয়। ২০১৪ সালে যখন দল থেকে বাদ পড়েন শুভর বয়স তখন মাত্র ২৬!

অর্থাৎ নিজেকে পালটে প্রত্যাবর্তনের দারুণ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু ঘরোয়া লিগ, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) বেশ ভাল খেললেও তিনি আর সুযোগ পাননি। উপেক্ষিতদের তালিকায় নাঈম ইসলাম, রনি তালুকদারদের সাথে খুব সহজেই জায়গা করে নিবেন শামসুর রহমান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link