এক ব্যর্থ কিংবদন্তির ট্রফি জয়

তিনি জার্মানির মিডফিল্ডের সবথেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হতেন। তবে ইনজুরি আর ভাগ্য যেন কখনো সহায় হয়নি তার জন্য।

সাল ২০২৪, আরও একবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মার্কো রিউস। এবারও যেন হতাশার লেখনী লেখা হলো রিউসের গল্পে। রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হারল। মার্কো রিউসের পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই যেন বিষাদময় হাহাকার।

১৯৮৯ সালের ৩১ মে ওয়েস্ট জার্মানির ডর্টমুন্ডে তার জন্ম। তার ফুটবলের যাত্রা শুরু হয় বোরোশিয়া ডর্টমুন্ডের ইয়ুথ একাডেমির মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি আরো কিছু জার্মান ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। তবে, ২০১১/১২ মৌসুমে তিনি ডর্টমুন্ডে ফিরে আসেন। এর পরেই শুরু হয় রিউসের ডর্টমুন্ডের যাত্রা।

ডর্টমুন্ডের হয়ে এই জার্মান মিডফিল্ডার দুইটি ডিএফবি পোকাল এবং তিনটি ডি এফ এল সুপারকাপ জিতেছেন। তবে, তার এই লম্বা ক্যারিয়ারে তিনি খুব কাছাকাছি গিয়েও লিগ শিরোপা কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়েছেন বারবার।

তিনি বলতে গেলে তার পুরো ক্যারিয়ারই অতিবাহিত করেছেন ডর্টমুন্ডে। তিনি ডর্টমুন্ডের হয়ে ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত মোট ২৯৪ টি ম্যাচ খেলেছেন এবং গোল করেছেন ১২০ টি। তিনি জার্মানির মিডফিল্ডের সবথেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হতেন। তবে ইনজুরি আর ভাগ্য যেন কখনো সহায় হয়নি তার।

এতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় হওয়ার পরেও পুরো ক্যারিয়ারে তার ট্রফি কেবিনেট মোটামুটি খালি। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে থাকতে পারতো তার ছোঁয়া। কিন্তু, ইনজুরির কারণে এই শিরোপাটিও অধরাই রয়ে গেলো।

অবশেষে ডর্টমুন্ড ছেড়ে হলিউডের ঘরে পদার্পণের পর ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জিতেছেন রিউস। এল এ গ্যালাক্সির হয়ে জিতে নিলেন মেজর লিগ সকার লিগ শিরোপা।

একসময় তার প্রতিভার বদৌলতে তাকে দলে ভেড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল ইউরোপের ক্লাবগুলো। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্নের এবং প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলো উঠেপড়ে লেগেছিল তাকে দলে নেওয়ার জন্য। তবে তার ঘরের ক্লাব ডর্টমুন্ডের প্রতি তার অশেষ ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধের শিকড়ে যেন আটকে গিয়েছিলেন তিনি।

তার সতীর্থ অনেকেই ডর্টমুন্ড ছেড়ে ইউরোপের অনেক শীর্ষ ক্লাবগুলোতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তারা সফলতাও পেয়েছেন অসংখ্য। তবে মার্কো রিউস রয়ে গেলেন তার ভালোবাসার টানে। তার ডর্টমুন্ডের প্রতি ভালোবাসাই যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য।

তার প্রতি ডর্টমুন্ডের ভক্তদের ভালোবাসা কোনো শিরোপার চেয়ে ছোট ছিল না। তার বিদায়ী ম্যাচে সিগনাল ইদুনা পার্ক কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। হাজারো ভক্তের কণ্ঠে একসাথে ধ্বনিত হয়েছিল, ‘মার্কো রিউস’ নামটি।

ফুটবল দুনিয়ায় রিউসের নাম থেকে যাবে এক দায়িত্ববান সৈনিকের মতো, যিনি ক্লাবের প্রতি ভালোবাসার কারণে নিজের স্বপ্নকে ত্যাগ করেছিলেন। তার গল্প হয়তো ট্রফির নয়, কিন্তু এটি এক অনন্য উদাহরণ যে ফুটবলে ভালোবাসা, আত্মত্যাগ এবং আনুগত্যই শেষ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় জয়।

Share via
Copy link