কাতালানদের গল্প মোটামুটি আমরা জানি। তাদের স্বাধীনতাকামীতা, জাতিগত পরিচয় নিয়ে গর্ব এবং দলে কাতালানদের প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারটা সবাই কমবেশী জানেন। কিন্তু এই জাতিগত পরিচয়ের প্রশ্ন এলে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের আশেপাশেও কেউ নেই।
নিজ জাতিসত্ত্বার বাইরের ফুটবলারদের দলে খেলায় না এমন একটি ক্লাব হলো অ্যাথলেটিক বিলবাও। লা লিগার সফলতম ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনার পরেই সফল ক্লাব হলো অ্যাথলেটিক বিলবাও।
স্পেনের মূলত দুইটি স্বাধীনতাকামী অঞ্চল রয়েছে। একটি হলো কাতালুনিয়া এবং অপরটি বাস্ক অঞ্চল। বাস্ক অঞ্চল শুধু স্পেনে নয়, ফ্রান্স জুড়েও এদের অবস্থান রয়েছে।
বাস্ক অঞ্চলের ফুটবল দল শুধু অ্যাতলেটিক বিলবাও নয়। এদের পাশাপাশি রয়েছে রিয়াল সোসিয়াদাদ, এইবার, ওসাসুনার মত ক্লাব। কিন্তু একই অঞ্চলের অন্য ক্লাবের সাথে অ্যাতলেটিক বিলবাও ক্লাবের কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। কারণ নিজ জাতিসত্তা ব্যতীত অন্য জাতিসত্তার ফুটবলারদের দলে ভিড়ায় না।
১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠত হয় বাস্ক ক্লাব অ্যাথলেটিক বিলবাও। তারা যেহেতু স্পেনের স্বাধীনতাকামী অঞ্চলের মধ্যে একটি তাই তারা ফুটবলের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে। তারা ১৯১২ সালে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে ক্লাবে জন্মসূত্রে বাস্ক কিংবা বাস্ক অঞ্চলে বসবাসকারী না হলে সে ক্লাবে খেলতে পারবে না। তারা পরবর্তীতে এই নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনে।
নীতিতে পরিবর্তন করে তারা নিয়ম করে যেসব ফুটবলার বাস্ক জাতিগোষ্ঠীর নয় কিন্ত বাস্ক অঞ্চলে ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছে তারাও অ্যাতলেটিক বিলবাওতে খেলার যোগ্য। কিন্তু এই নিয়ম কোচ কিংবা কোচিং দলের কোনো সদস্যের জন্য বিবেচিত হয় না।
অ্যাথলেতিক বিলবাও এর এই নিয়ম সাধারণত ইউরোপিয়ান ফুটবলে দেখা যায় না। তাদের এই জাতিভেদ নীতি অনেক ক্ষেত্রেই প্রশংসা কুড়িয়েছে। কিন্তু প্রশংসার পাশাপাশি দূর্নামও পোহাতে হয়েছে এর জন্য।
আরেক বাস্ক ক্লাব রিয়াল সোসিয়াদাদও এই নিয়ম মেনে চলেছিলো। কিন্তু ১৯৮৯ সালে এই নিয়ম থেকে সরে আসে।
জাতিগত নিয়মের বেড়াজালে থেকেও বিলবাও স্পেনের ইতিহাসের সেরা ক্লাব গুলোর একটি। জাতিগত নিয়মের কারণে অনেকেই বিলবাওয়ের নিয়মকে বর্ণবাদী নিয়ম বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। বাস্ক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ জণগণ না থাকায় ইনাকি উইলিয়ামস বিলবাওয়ের প্রথম এবং একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ ফুটবলার। যিনি কিনা জন্মসূত্রে একজন বাস্ক নাগরিক। তার পিতা মাতা দুইজনই আফ্রিকা থেকে এসে স্পেনের বাস্ক অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই ইনাকি উইলিয়ামস বড় হওয়া এবং ফুটবলের হাতে খড়ি। বিলবাওয়ের পরিবর্তিত নীতির কারণেই তিনি হতে পেরেছেন বিলবাওয়ের ইতিহাসসের অংশ।
ইনাকি উইলিয়ামস ছাড়াও আরো দুইজন ব্যতিক্রমী ফুটবলারকে অ্যাতলেটিক বিলবাওয়ে দেখা গিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন কেনান কোদ্রো। তার বাবাও ছিলেন একজন ফুটবলার। তিনি ১৯৯১-৯২ সালে রিয়াল সোসিয়াদাদে যোগ দেন। বাস্ক অঞ্চলে থাকাকালীন সময়ে জন্মগ্রহন করায় বসনিয়া-হার্জেগোভিনার জাতীয়তা থাকা সত্ত্বেও খেলতে পেরেছিলেন বিলবাওয়ের হয়ে। আয়মেরিক লোপার্তে; বাস্কের ফ্রান্স অঞ্চলে জন্ম নেয়া ফুটবলার। যেহেতু বাস্ক অঞ্চল স্পেন এবং ফ্রান্স জূড়ে অবস্থিত তাই ফ্রান্সের জাতীয়তা হওয়া সত্ত্বেও খেলছেন সোসিয়াদাদের হয়ে।
অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের সমর্থকগোষ্ঠী দলের প্রতি প্রচুর অনুগত। তারা শিরোপাহীন একটি মৌসুম কাটাতে রাজি রয়েছে, কিন্তু তারা প্রিয় ক্লাবে বাস্ক অঞ্চলের বাইরের কোনো ফুটবলারকে দেখতে রাজি নয়। সমর্থকরা চান না তাদের প্রিয় দলের নিয়মের পরিবর্তন ঘটুক। এছাড়াও বাস্ক অঞ্চলের লোকজন অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মাধ্যমে নিজেদের স্বাতন্ত্র্যতার পরিচয় তুলে ধরে।
মজার ব্যাপার হলো, ক্লাবের প্রেসিডেন্ট এই নিয়মের পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু তারা তাদের অহমবোধ বাঁচিয়ে রাখতে চায় বলে, এই নিয়মের কোনো পরিবর্তন করে না।
ফুটবলার বাছাইয়ের এতো কঠোর নিয়ম মেনে চলার পরও তারা স্পেনের ইতিহাসে তৃতীয় সেরা ক্লাব। আর একক ক্লাব হিসেবে বিলবাও স্পেন জাতীয় দলে সবচেয়ে বেশি ফুটবলার সরবরাহ করে থাকে।