দিলস্কুপ, স্কুলমাঠ থেকে বিশ্ব ময়দানে

সহজে বাউন্ডারি তুলে নেয়ার জন্য একটা বুদ্ধি বের করে ফেললো ছেলেটা। উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেয়া যায় এমন একটি শট আবিষ্কার করে ফেললো। উইকেটরক্ষক বন্ধুর মাথার উপর দিয়ে কত বাউন্ডারিই না মেরেছেন তিনি। স্কুলের মাঠের টেপ টেনিসের ক্রিকেট ডিঙিয়ে এই শট তিনি খেলা শুরু করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। না, এখানে পিছনের  মাঠ ছোট ছিল না। তবে  ততদিনে স্কিলটা ওই কব্জিতে চলে এসেছিল। এবার শুধু স্কুলের বন্ধুরাই না, পুরো ক্রিকেট দুনিয়া জানলো ওই শটটার নাম দিলস্কুপ।

স্কুলের মাঠটার পিছনের অংশ বেশ খানিকটা ছোট ছিল।

তাই সহজে বাউন্ডারি তুলে নেয়ার জন্য একটা বুদ্ধি বের করে ফেললো ছেলেটা। উইকেটরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে দেয়া যায় এমন একটি শট আবিষ্কার করে ফেললো।

উইকেটরক্ষক বন্ধুর মাথার উপর দিয়ে কত বাউন্ডারিই না মেরেছেন তিনি। স্কুলের মাঠের টেপ টেনিসের ক্রিকেট ডিঙিয়ে এই শট তিনি খেলা শুরু করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। না, এখানে পিছনের  মাঠ ছোট ছিল না। তবে  ততদিনে স্কিলটা ওই কব্জিতে চলে এসেছিল।

এবার শুধু স্কুলের বন্ধুরাই না, পুরো ক্রিকেট দুনিয়া জানলো ওই শটটার নাম দিলস্কুপ।

হ্যাঁ, ঠিক ধরে ফেলেছেন। আমরা বলছি তিলকারত্নে মুডিয়ানসেলাগে দিলশানের কথা। একনামে সবাই যাবে দিলস্কুপ দিলশান বলে চিনবেন।

দিলশানের বাইশ গজে নামা মানে যেন এক উৎসব। বোলার যতই গুড লেন্থে বল করুক না কেন, দিলশান মানে পা টা একটু পিছনে নিয়ে অফ সাইড দিয়ে বল সীমানা পারা করে দেয়াই তার কাজ। দিলশানের ব্যাটিং প্রতিটা ক্রিকেটপ্রেমীর জন্য  চোখের শান্তি। যেন একটা ম্যাজিক শো চলছে। যা অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে মানুষ। যেই শো-তে ডিফেন্স বলে কোনো শব্দ নেই। তিনি শুধু বোঝেন – অ্যাট্যাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স।

দিলশান এমন একজন ব্যাটসম্যান যিনি কোনো ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের মধ্যে পড়েন না। তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন, একেবারে আলাদা একজন ব্যাটসম্যান।

১৯৯৯  সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে রাজকীয় অভিষেক হলেও ধরে রাখতে পারেননি সেই ধারাবাহিকতা। ফলে অনেকদিন দলের বাইরেও ছিলেন। তবে আবার ফিরে এসেছেন। যেভাবে চ্যাম্পিয়নরা ফিরে আসেন।

২০০৩ সালে আবার যখন ফিরলেন তখন তিনি অপ্রতিরোধ্য। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে তিন টেস্টে করলেন ৩৫৬ রান। তারপর থেকে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে শুরু হয় হয় এক নয়া ইতিহাস।

বিশেষ করে ২০০৯ থেকে যখন নিয়মিত ওপেন করা শুরু করলেন তখন থেকে তার ব্যাট যেন তরবারি। শুধু ওই বছরই করেন ১১টি আন্তর্জাতিক শতক। সে বছরই আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকার টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন। তিনিই শ্রীলঙ্কার একমাত্র ব্যাটসম্যান যার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই রয়েছে সেঞ্চুরি। এছাড়াও শ্রীলঙ্কার চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে স্পর্শ করেন এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের মাইল ফলক। ২০০৯ সালটা দিলশানের জীবনের সেরা বছর নি:সন্দেহে।

২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। দুই সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটি মিলিয়ে করে ছিলেন পাঁচশো রান। দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনাল অবধি।

অবে তার ওয়ানডে ব্যাটিং নিয়ে অনেক আলোচনা হলেও তিনি সমানভাবেই দ্যুতি ছড়িয়ে গেছেন টেস্ট ক্রিকেটেও। এছাড়াও একজন বোলার দিলশান সব সময়ই আলোচনার বাইরে। হয়তো সেটা তার ব্যাটিং প্রতিভার তীব্রতার জন্যই। দিলশানকে বলা যায় ‘অলরাউন্ডার অব অলরাউন্ডার্স’।

তিনি একধারে ব্যাটিং-বোলিং করতেন এবং উইকেট কিপিংও করতেন এই তারকা ক্রিকেটার। মাঠে তার উপস্থিতি, সব সময় মুখে লেগে থাকা হাসি দর্শকদের কাছে যেন এক মুগ্ধতার সৃষ্টি করতো।

সব মিলিয়ে দিলশান এক ক্রিকেটীয় প্যাকেজ। যাকে বিশ্ব ক্রিকেট, কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমী আজীবন মনে রাখবে দিলস্কুপ নামে।

২০১৬ সালে শেষ আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তারে আগে ৮৭ টেস্টে ৫৪৯২ রান ও ৩৯ উইকেট সংগ্রহ করেছেন। ৩৩০ ওয়ানডেতে ১০ হাজার ২৯০ রান এবং ১০৬ উইকেটের মালিক তিনি। ৮০টি টি-টোয়েন্টিতে ১৮৮৯ রান ও ৯ উইকেট আছে তার।

সম্প্রতি অবসর ভেঙে ফিরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ায়; ভিক্টোরিয়ার গ্রেড ক্রিকেটে। সেখানে প্রথম ম্যাচেই ৪২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ব্যাপারটা ভোলেননি। তবে এখানে তার আসল ভূমিকা কোচের। বাচ্চাদের ব্যাটিং শিখাচ্ছেন। তো বাচ্চারা কী শিখতে চাইছে?

দিলশান হেসে বলেছেন, ‘ওরা ব্যাটিং শিখতে খুবই আগ্রহী। সবাই নতুন কিছু শিখতে চায়। ওরা সবাই প্রথমেই এসে বলে দিলস্কুপ শিখতে চাই।’

বুঝতে পারছেন, দিলশানের ব্র্যান্ডিংটা কেমন!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...