সিনেমার রসদে জীবনের গল্প
রীতিমত যেন এক সিনেমার গল্প। না সিনেমা তো জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত। তাহলে হয়ত রিঙ্কু সিংয়ের জীবনটা হতে পারে কোন এক ব্যবসা সফল সিনেমার রশদ। কি নেই তাঁর গল্পে? সংগ্রাম, কষ্ট, প্রত্যাখান, হতাশা এবং শেষমেশ সফলতা। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে তিনি যেন নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই যেন জীবনের সব বাঁক দেখে ফেলেছেন নতুন এই তারকা।
রীতিমত যেন এক সিনেমার গল্প। না সিনেমা তো জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত। তাহলে হয়ত রিঙ্কু সিংয়ের জীবনটা হতে পারে কোন এক ব্যবসা সফল সিনেমার রশদ। কি নেই তাঁর গল্পে? সংগ্রাম, কষ্ট, প্রত্যাখান, হতাশা এবং শেষমেশ সফলতা। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে তিনি যেন নতুন নতুন সব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সেই যেন জীবনের সব বাঁক দেখে ফেলেছেন নতুন এই তারকা।
এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বেশ কিছু সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়দের উত্থান হয়েছে। সেই উত্থানের তালিকায় উপরের দিকেই অবস্থান রিঙ্কু সিংয়ের। দুই বারের আইপিএল শিরোপা জয়ী কলকাতা নাইট রাইডার্সের এবারের মৌসুমটা কেটেছে দারুণ বাজে ভাবে। প্লে-অফের আশা শেষ দলটির।
তবে এই নিরাশার মাঝেও নতুন এক আশার নাম যেন রিঙ্কু সিং। ইতোমধ্যেই রিঙ্কু সিং তাঁর সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়ে ফেলেছেন। তাঁর ক্যামিও ইনিংসগুলো খুব মনে ধরেছে কলকাতা সমর্থক থেকে শুরু করে কর্তাদের। তাছাড়া কলকাতার সদ্য সাবেক হওয়া কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামও প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাঁকে। তবে রিঙ্কু সিংয়ের গল্পের শুরুটা এখান থেকেই নয়।
অতি সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন তিনি। আলিগরে জন্ম তাঁর। হতদরিদ্র বাবার ছেলে। ক্রিকেটকে ভালবেসে ফেলেছিল। আর সে প্রেম থেকে যেন উঠবারই নাম নেই। তবে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে স্থান হয়েছিল রিঙ্কুর। ২০১৭ সালে সবাই হয়ত ভেবেছিল রিঙ্কুর অন্তত তাঁর বাবার মুখ উজ্জ্বল করবেন। তবে না সে সুযোগটা আর পাওয়া হয় না।
পাঞ্জাবের হয়ে বেঞ্চে বসেই কাটিয়ে দেন তিনি। তবে এর পরের বছর নিলাম থেকে তাঁকে কিনে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। খরচ করে ৮০ লাখ রুপি। তবে নাইটদের হয়েও নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ খুব একটা যেন মিলছিলওই না। যেটুকুনও মিলেছিল তাও যেন পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারেননি রিঙ্কু। সে জন্যে তাঁকে নিয়ে কত সমালোচনা। তবে রিঙ্কু যনে অপেক্ষা করছিলেন হিরো হবার।
তিনি এমন কোন একটা খারাপ সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন, যখন মধ্যমণি হয়ে মাঝে মধ্যেই দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাবেন। সেটাই যেন হয়ে গেল আইপিএলে পঞ্চদশ আসর। তবে এই আসরেও কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁকে দলে নেওয়ায় সমালোচনা কম হয়নি। ৫৫ লাখ টাকাও যেন জলে গেছে কলকাতার এমনটাই মত ছিল সবার। তবে সে মতের বিপরীতে গিয়ে কি করে সবার প্রশংসার পাত্র হতে হয় তা রপ্ত করা শেষ রিঙ্কুর।
তবে এর আগে ইনজুরির সাথে লড়াই করার সাথে সাথে বঞ্চনার সাথেও লড়াই করে গেছেন রিঙ্কু। তাঁর পরিবারের এমন অবস্থা যে তাঁরা বাবা রীতিমত খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন রিঙ্কুর ইনজুরির কথা শুনে। রিঙ্কু বলেন, ‘ক্রিকেট থেকে দূরে থাকায় আমার তেমন ভাললাগছিল না। আমার বাবা ২-৩দিন কোন খাবার খায়নি আমি তাঁকে বুঝিয়েছি যে এটা সামান্য একটা ইনজুরি এটা ক্রিকেটেরই অংশ। আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, তাই যখন এমন কিছু হয় তখন তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’
রিঙ্কুর পরিবারে তিনি একাই উপার্জন করেন। এই একটা বাক্যে বোঝা যায় তিনি ঠিক কতটা চাপ নিয়ে নিজেকে প্রমাণের জন্যে নেমেছিলেন এবারের আইপিএলে। এর আগে অবশ্য উত্তর প্রদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সফলতার দেখা পেয়েছিলেন তরুণ এই ক্রিকেটার। এরপরই যেন নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করেন। তিনি এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন যে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন হাতে ‘৫০’ লিখে।
আর সে ম্যাচেই তিনি করেছিলেন ২৩ বলে ৪৩ রান, ছিলেন অপরাজিত। ঠিক কতটা আত্মবিশ্বাসী হলে এমন কাজ করা যায়। এই আত্মবিশ্বাসের জন্যে অবশ্য কলকাতা ফ্রাঞ্চাইজির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই পারেন রিঙ্কু। কেননা কলকাতা তাঁর উপর ভরসা রেখে তাঁকে আবার দলের ভিড়িয়েছে। তবে তাঁর প্রতিদানও যে একেবারেই দিচ্ছেন না রিঙ্কু বিষয়টা তেমনও নয়।
এই যে যেই ম্যাচের মধ্য দিয়ে কলকাতার এবারের আইপিএল মিশন সে ম্যাচটাই হতে পার উদাহরণ। সে ম্যাচের নিশ্চয়ই সবচেয়ে বড় খবর প্রোটিয়া ব্যাটার কুইন্টন ডি ককের ১৪০ রানের ধ্বংসজজ্ঞ চালানো ইনিংস। তবে সে ম্যাচের শেষের দিকে কলকাতার পক্ষে পাল্লা ভারি করেই ফেলেছিলেন রিঙ্কু সিং। শেষ ওভারে জয়ের জন্যে কলকাতার প্রয়োজন ছিল ২১ রান।
মার্কাস স্টোয়িনিসের প্রথম তিন বলে রিঙ্কু দুই ছক্কা ও এক চারে তুলে ফেলেন ১৬ রান। জয় তখন আর ছিল মাত্র পাঁচ রান দূরে। এভিন লুইস একহাতের দূর্দান্ত ধরা ক্যাচটাই ম্যাচের পুরো ফলাফল বদলে দেয়। তবুও মাত্র ১৫ বলের রিঙ্কুর করা ৪০ রানটাই প্রমাণ করে ঠিক কতটা সামর্থ্য রয়েছে তাঁর। এখন রীতিমত সমালোচনা বদলে হয়ে গেছে প্রশংসায়।
রিঙ্কু নিজের এই অবস্থান নিজ হাতে গড়ে নিয়েছেন। নিজের একাগ্রতা আর আত্মবিশ্বাসী মনোভাব দিয়ে। তাঁর হার না মানা অদম্য শক্তির তাঁকে আজ বানিয়েছে চর্চার বিষয়। তাঁর ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা নিশচয়ই অনেকটা দূর নিয়ে যাবে তাঁকে।