ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে

ভদ্রলোকের নাম স্টুয়ার্ট বিনি। সবশেষ দশকে অন্তত বাংলাদেশের খেলা নিয়মিত অনুসরণ করে থাকলে তাঁকে না চেনার কোনো কারণ নেই। না, তিনি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার নন। ছবিতেই তো তা স্পষ্ট! কিন্তু তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো অর্জনটা এসেছিল এই বাংলাদেশের বিপক্ষেই। যদিও ভারতীয় কিংবা বাংলাদেশি নেটিজেনদের মতে স্টুয়ার্ট বিনির ক্যারিয়ারে একমাত্র অর্জন হলো মায়ান্তি ল্যাঙ্গার!

২০১৪ সালে বিনির সেই ‘বীভৎস’ স্পেলটা বাংলাদেশি সমর্থক হিসেবে নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যেতে চাইবেন। কিন্তু ‘স্টুয়ার্ট বিনি’ নামটা শোনা মাত্রই তা বারবার মনে পড়ে যাবে আপনার। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটে না৷ মাত্র ৪ রান খরচায় ৬ উইকেট তুলে নেওয়ার সেই দুর্বিষহ স্মৃতিটা একেবারে মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পেলে গাঁথা যা চাইলেও কোনোদিন ভুলে যাওয়া সম্ভব না।

১০৬ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করে সেদিন বাংলাদেশের জেতাটা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু দুপুরে এক পশলা বৃষ্টির পর সন্ধ্যায় মিরপুরের ড্যাম্প উইকেটে চলে বিনির বোলিং-ঝড়। তাতেই শেষ ৮ রান তুলতে ৭ উইকেট হারায় বাংলাদেশ৷ অলআউট হয় ৫৮ রানে।

সেইসাথে ম্লান হয়ে যায় মাত্র ১৯ বছর বয়সে অভিষিক্ত তাসকিনের ২৮ রানে ৫ উইকেট পাওয়ার আগুনে বোলিং স্পেলটা। বিনির সেই স্পেলটা আজীবন তাড়া করবে বাংলাদেশকে।

তবে, মাত্র ২৩ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো বিনির পারফরম্যান্স ওই একটাই বললে ভুল হবে। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে তাঁর এক ওভারে ৩২ রান দেওয়ার ঘটনাটাও কী এত সহজে ভুলে যায়, বলুন!

অবশ্য একটা সময় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) বেশ কার্যকরী ছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি। রাজস্থানের হয়ে প্রায়ই শেষদিকে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতেন তিনি। ভুল না করে থাকলে সেটা ২০১৩ আইপিএলের কথা। ওই মৌসুমে রাজস্থানের প্লে অফে খেলার পেছনে অবদান ছিল তাঁর।

তখন প্রায়ই মিডল অর্ডারে নেমে ১৫০+ স্ট্রাইকরেটে রান তুলতেন তিনি৷ যদিও পুরো আইপিএল ক্যারিয়ারের পরিসংখ্যান তাঁর পারফরম্যান্সের অধারাবাহিকতারই সাক্ষ্য দেয়। ওহ হ্যা, এর আগে তিনি নিষিদ্ধ ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগও (আইসিএল) খেলেছেন।

একটা ঘটনা বলে বকবকটা শেষ করি। শুরুর দিকে স্টুয়ার্ট বিনিকে আমি তাঁর নিজস্ব পরিচয়েই চিনতাম। নাম স্টুয়ার্ট বিনি, খেলেন রাজস্থানের হয়ে, এমন। যদিও অধিকাংশ মানুষ তখন তাঁকে তাঁর বাবার পরিচয়েই চিনতেন। তো বরাবরের মতোই বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেওয়া তাঁর পারফরম্যান্সটা দেখেছিলাম এলাকার টঙে বসে।

সেখানে এক বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক নিয়মিত আমাদের সাথে খেলা দেখতেন। তিনিই সর্বপ্রথম স্টুয়ার্ট বিনিকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন ’৮৩ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য রজার বিনির ছেলে হিসেবে।

আজ স্টুয়ার্ট বিনি সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। কিন্তু ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করার পরেও আজ তিনি পরিচিত হচ্ছেন রজার বিনির ছেলে হিসেবে। আজকের দিনেও তাঁর কীর্তি উল্লেখ কর‍তে গিয়ে কেবল টেলিভিশন উপস্থাপক মায়ান্তি ল্যাঙ্গারকে তাঁর জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার ব্যাপারটাকে সামনে তুলে আনছেন অনেকে। ব্যাপারটা দু:খজনক হলেও দায়টা তাঁরই। তিনিই যে তেরঙ্গার হয়ে মানুষের মনে চিরস্থায়ী হবার মতো কিছু করে দেখাতে পারেননি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link