মার্শের ‘মাস্টারক্লাস’

এ বারের বিশ্বকাপে রান তাড়ায় একবারই তিনশো পেরোনো লক্ষ্যের দিকে ছুটেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর সে যাত্রায় ম্যাচ হারের তিক্ত স্বাদটাও নিতে হয়েছিল অজিদেরই। তাই বাংলাদেশের দেওয়া ৩০৭ রানের লক্ষ্যটা মোটেই সহজ সাধ্য ছিল না ওয়ার্নারদের জন্য। বরং শঙ্কার কালো মেঘ জমেছিল শুরুতেই হেডের উইকেট হারানোর পর।

কিন্তু প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর তাণ্ডব চালানোর ব্যাটনটা এ দিন ম্যাক্সওয়েল যেন আগেই দিয়ে রেখেছিলেন মিশেল মার্শের হাতে। আগের ম্যাচে যেভাবে আফগান বোলারদের উপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল, এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে তাসকিন, মুস্তাফিজদের কোনো সুযোগ না দিয়ে অনায়াসেই জয়ের নায়ক বনে গিয়েছেন মিশেল মার্শ।

১৩৮ বলে ১৭৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন এ ব্যাটার। বিশ্বকাপে রান তাড়ায় যে ইনিংসটির অবস্থান এখন ম্যাক্সওয়েলের ২০১ রানের ইনিংসের পরেই। শুধু তাই নয়, এর আগে বিশ্বকাপের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন নম্বরে নেমে শুধু রিকি পন্টিং আর স্টিভেন স্মিথেরই সেঞ্চুরির কীর্তি ছিল। এবার তৃতীয় অজি ব্যাটার হিসেবে তিন নম্বরে নেমে সেঞ্চুরির কীর্তিতে নিজের নাম লেখালেন মার্শ।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এ দিন মার্শ তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ছাপ রেখেছিলেন ইনিংসের শুরু থেকেই। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে মাহেদী হাসানকে তিন চারে রানের খাতা খুলেন মিশেল মার্শ। হেড দ্রুত ফিরলেও তাই পুনেতে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে এরপর থেকেই।

আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে মার্শ পঞ্চাশ পেরিয়ে যান দ্রুতই। মুস্তাফিজের বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৩৭ বলে ৫০ পূর্ণ করেন অজি এ ব্যাটার। আর এমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই ১৫ ওভারে শতরান টপকে যায় অস্ট্রেলিয়া। ট্রাভিস হেড ইনজুরিতে থাকাকালীন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ইনিংস শুরুর দায়িত্বটা ছিল মার্শের কাঁধেই।

ওপেনিংয়ে নেমে চলতি বিশ্বকাপে একটি সেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১২১ রানের ইনিংস। হেড ফেরার পর স্বাভাবিকভাবেই ওপেনিং থেকে তাঁকে নেমে যেতে হয়েছে তিনে। তবে এখানে তিনি মানিয়ে নিলেন দুর্দান্ত ভাবেই। ক্যারিয়ার সেরা ১২১ রানের ইনিংসকেও এবার ছাপিয়ে গেলেন। তিনি নেমে পেলেন বড় ইনিংসের দেখা।

অবশ্য সাবলীল ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে গেলেও শতক ছুঁতে কিছুটা হিমশিমই খেয়েছেন এ ব্যাটার। ৯৯ রানে দাঁড়িয়ে টানা ৪টি বল ডট দিয়েছিলেন মার্শ। এরপর নাসুম আহমেদের বলে কাভারে সিঙ্গেল নিয়ে অবশেষে শতক পূর্ণ করলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে যেটি তাঁর দ্বিতীয় শতক এবং ক্যারিয়ারের ক্যারিয়ারে তৃতীয়।

৮৭ বলে সেঞ্চুরি পূরণ করা মিশেল মার্শ এরপর হয়ে ওঠেন আরো বিধ্বংসী, আরো প্রতিরোধ্য। সেঞ্চুরির পর দেড়শো ছুঁতে খেলেন মাত্র ৩০ টি বল। এরপর দেড়শো রানের ইনিংসটিকে তিনি টেনে নিয়ে যান ১৭৭ রানের ইনিংসে। যে ইনিংস খেলার পথে ১৭ চারের পাশাপাশি মার্শ হাঁকিয়েছেন ৯ টি ছক্কা। আর অজি এ ব্যাটারের এমন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের দেওয়া ৩০০ পেরোনো লক্ষ্যও অজিরা টপকে যায় ৩২ বল হাতে রেখেই।

১৯৮৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মিশেল মার্শের বাবা জিওফ মার্শ। বাবার করা সেই দুই সেঞ্চুরির পুনরাবৃত্তি এবার পুত্র মিশেল মার্শ ঘটালেন ২০২৩ বিশ্বকাপে এসে। পিতা-পুত্রের এমন অর্জনের পর মার্শ পরিবারের এবার চোখ ২০২৩ বিশ্বকাপ জয়ের দিকে।

যদিও বাবার মতো মিশেল মার্শও বিশ্বকাপ জিতেছেন। তবে ২০১৫ বিশ্বকাপ জয়ের পথে সেবার ছিল না মার্শের কোনো সেঞ্চুরি। দুই সেঞ্চুরিতে এবারের আসরে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটানো মার্শ তাই এ আসরেও নিশ্চিতভাবেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিকে চোখ রাখছেন।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link