দম্ভ নয়, নম্রতা আকড়ে ধরতে হবে সুরিয়াভানশিকে

সুরিয়াভানশি এখন প্রয়োজন, সঠিক দিকনির্দেশনা। তার ক্রিকেটীয় স্কিল ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি, চারিত্রিক স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকেও নজর দেওয়া উচিত।

ক’দিন বাদেই বয়স হবে ১৫। অর্থাৎ কৈশরের গণ্ডি এখনও পেরুতে পারেননি বৈভব সুরিয়াভানশি। এই মুহূর্তেই তিনি বনে গেছেন আলোচনার খোরাক। দুর্ধর্ষ ব্যাটার হিসেবে নিজের সুখ্যাতি ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি সর্বত্র। কিন্তু চারিত্রিক গুণাবলিতে তাকে হতে আরও সংযত, নতুবা অকাল ঝড়ে মুখ থুবড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সম্প্রতি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তার ব্যক্তিগত বেশ রুঢ় এক অভিব্যক্তি, সুরিয়াভানশির জন্য রীতিমত অশনি সংকেত। ফাইনালের মঞ্চ। চিরপ্রতিদ্বন্দী ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি। হাই অকটেন ম্যাচ। সামান্য স্ফুলিঙ্গ বনে যেতে পারে বিস্ফোরণের কারণ। তেমনটিই ঘটল পাকিস্তান শিবিরে। প্রতিপক্ষের সেরা ব্যাটার সুরিয়াভানশিকে আউট করে বাঁধ ভাঙা উল্লাসে মেতে ওঠে পাকিস্তান শিবির।

কিন্তু সেই উচ্ছ্বাসের একটা পর্যায়ে ক্ষেপে যান সুরিয়াভানশি। পাকিস্তানের এক ফিল্ডারের ছোঁয়ায় তার ব্যাট পড়ে যাওয়াতেই মূলত আর মেজাজ সংবরণ করতে পারেননি সুরিয়াভানশি। এরপর রেগে গিয়ে পাকিস্তানি ফিল্ডারদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তোমাদের অবস্থান আমার জুতোর নিচে।’

ক্রিকেট ময়দানে এর থেকেও বিরুপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সুরিয়াভানশিকে। স্লেজিংয়ের প্রবল স্রোত বারবার তার ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে দিতে চাইবে। তখনও কি তিনি মেজাজ হারাবেন? অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ওই ঘটনার পর, অবশ্য তার ব্যাট থেকে দূর্দান্ত এক ইনিংসও এসেছে। ২২৬ স্ট্রাইকরেটে ১৯০ রান করেছেন তিনি বিজয় হাজারে ট্রফিতে।

পারফরমেন্স নিয়ে সংশয় নেই। সামর্থ্য আর প্রতিভা নিয়েও কোন দ্বিধা নেই। স্রেফ সুরিয়াভানশির পা রাখতে হবে মাটিতে। প্রতিপক্ষের সৃষ্টি করা দমবন্ধকর পরিস্থিতির মাঝেও তার মাথা ঠান্ডা থাকা চাই। নতুবা, সেই ফুটন্ত মস্তিষ্ক তার পারফরমেন্সেও প্রভাব ফেলতে সময় নেবে না। প্রতিপক্ষের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধাশীলও হওয়া প্রয়োজন।

মাঠে আগ্রাসন থাকা প্রয়োজন। সেই আগ্রাসন প্রকাশিত হতে হবে ব্যাটের ঝঙ্কারে। যত দ্রুত এই বিষয়টি উপলব্ধী করতে পারবেন সুরিয়াভানশি, ততই তার জন্য মঙ্গল। এহেন দাম্ভিকতায় পরিশ্রমের ইচ্ছেশক্তিও বিনষ্ট হতে পারবে। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রতিভাবার অকাল পতনের উদাহরণ কম নেই, স্রেফ পরিশ্রম বিমুখতার কারণে।

অতএব সুরিয়াভানশি এখন প্রয়োজন, সঠিক দিকনির্দেশনা। তার ক্রিকেটীয় স্কিল ডেভেলপমেন্টের পাশাপাশি, চারিত্রিক স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকেও নজর দেওয়া উচিত তার কোচ, তার পরিবার ও খোদ ভারতীয় ক্রিকেট কর্তাদের। এমন প্রতিভা ঝড়ে যাক, সে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই কেউ করে না।

লেখক পরিচিতি

রাকিব হোসেন রুম্মান

কর্পোরেট কেরানি না হয়ে, সৃষ্টি সুখের উল্লাসে ভাসতে চেয়েছিলাম..

Share via
Copy link