১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ বিভিন্ন কারণেই অন্য আসর থেকে ব্যতিক্রমী ছিল। আর এই ব্যতিক্রমী বিশ্বকাপে ব্যতিক্রমী একটি কাজ করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক মার্টিন ক্রো। স্পিনার দীপক প্যাটেলকে দিয়ে বোলিং শুরু করেছিলেন তিনি। তাঁর এই ভিন্নধর্মী চিন্তা দারুণভাবে কাজে লাগে। অন্য দেশ তো বটে, স্পিন খেলে অভ্যস্ত ভারতও সেবার নতুন বলে স্পিনারের বিপক্ষে বেশ নড়বড়ে ছিল।
নতুন বলের সুইং কাজে লাগানোর জন্য পেস বোলারদের ব্যবহার করা ক্রিকেটের পুরোনো পন্থা। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, যেখানে উইকেট তোলার চেয়ে রান আটকানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে স্পিনারদের শুরুর দিকে ব্যবহার করাটা এখন বহুল ব্যবহৃত কৌশলে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সাদা কোকাবুরা বলে তেমন সুইং বা সিম থাকে না।
আর তাই ১৯৯২ সালে স্পিনারদের দিয়ে বোলিং শুরু করানো বিরল কিছু হলেও এখানকার সময়ে এমন দৃশ্য নিয়মিত দেখা যায়। ভালভাবে লক্ষ্য করলে এখন দেখা যায়, প্রতিটি দলে এখন স্পেশালিস্ট স্পিনার থাকে টি-টোয়েন্টির পাওয়ার প্লে-তে বোলিং করার জন্য।
শুরুর ছয় ওভার অর্থাৎ পাওয়ার প্লে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। মাত্র দুইজন খেলোয়াড় ত্রিশ গজের বাইরে থাকায় দ্রুত গতিতে রান তোলার দিকে মনোযোগী হতে হয়। একদিকে ব্যাটারদের লক্ষ্য থাকে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার, অন্যদিকে বোলাররা চায় শুরু থেকে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রায় সব দল নতুন বলে এখন স্পিনারদের ব্যবহার করা শুরু করেছে। এই যেমন ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মঈন আলী পাওয়ার প্লে-তে বোলিং করেছেন। নতুন বলে এই অফ স্পিনারের পারফরম্যান্স ইংলিশদের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল। পুরো আসরে তাঁর ইকোনমি ছয়ের নিচে ছিল এবং পাওয়ার প্লে-তে এগারো ওভার বল করে মাত্র একটি ছয় হজম করেছিলেন।
এছাড়া বিশ ওভারের এই খেলায় আফগানিস্তানের হয়ে মুজিবুর রহমান, শ্রীলঙ্কার মাহিশ থিকসানা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের আকিল হোসেন, পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমরা প্রায় নতুন বলে বোলিং করে থাকেন। তবে ইনিংস শুরুর দিকে স্পিনারদের ব্যবহার করার জন্য বেশি পরিচিত বাংলাদেশ। গত দুই বছরে নাসুম আহমেদ এবং শেখ মাহেদী নিয়মিত পাওয়ার প্লে-তে বল করেছেন। এছাড়া সাকিব আল হাসান তো অনেক আগে থেকেই এমন কাজ করে আসছেন।
২০২১ সাল থেকে শুরুর ছয় ওভারে বাংলাদেশের স্পিনাররা অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করেছে। অবশ্য মুজিবুর রহমান, আকিল হোসেনরাও যথেষ্ট ইকোনমিক্যাল বোলিং করে থাকেন নতুন বলে। ফিল্ড রেস্ট্রিকশনের সময় বোলিং করা সত্ত্বেও এই সব স্পিনারদেরই বোলিং ইকোনমি আট এর কম।
এছাড়া একটা সময় রবিচন্দ্রন আশ্বিন, সুনীল নারাইন, স্যামুয়েল বদ্রি নিয়মিত নতুন বল হাতে তুলে নিতেন। বলাই বাহুল্য, প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে কোন ভুল হয়নি তাঁদের।
গত দুই বছরে গড়ে পাওয়ার প্লে-তে ২৫ শতাংশ ওভারে স্পিনাররা বল করেছেন যা পূর্বের তুলনায় বেশি। এছাড়া ৭১ শতাংশ ইনিংসে কমপক্ষে এক ওভার স্পিন বল ব্যবহার করা হয়েছে। মজার ব্যাপার যে, এইসময় স্পিনাররা ওভার প্রতি সাত রান খরচ করেছেন। অন্যদিকে পেসাররা পাওয়ার প্লে-তে ৭.৩১ ইকোনমিতে বল করেছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পিন কতটা কার্যকর হবে। কেননা স্বাভাবিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার পিচ পেস সহায়ক হয়ে থাকে। তবে পরিসংখ্যানে মিলেছে ভিন্ন ইঙ্গিত। গত এক বছরে অস্ট্রেলিয়াতে শুরুর ছয় ওভারে স্পিনারদের ইকোনমি যেখানে ৭.৩১ সেখানে ফাস্ট বোলাররা ওভার প্রতি ৭.৪৬ রান খরচ করেছেন।
পাওয়ার প্লে-তে স্পিনাররা সাধারণত একটু জোরে বল করে থাকেন, ফলে ব্যাটাররা শট খেলার জন্য পর্যন্ত জায়গা পাননা। একইভাবে একটা বল শেষ হওয়ার পর দ্রুত অন্য বল মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত হতে হয় বিধায় ব্যাটসম্যানরা ঠিকমত ভাবার সময় পান না। স্ট্যাম্প টু স্ট্যাম্প বোলিং করাটাই মূলত নতুন বলে স্পিনারদের সফল হওয়ার মূল রহস্য।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পাওয়ার প্লে লড়াইয়ে নতুনত্ব যোগ করেছে স্পিন বোলিং। ধীরে ধীরে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণের শুরুর দিকে আরো কার্যকরী হয়ে উঠছেন স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে স্পিনের উপর অধিনায়কের ভরসা বেশি হলে অবাক হওয়ার তাই কোন কারণ থাকবে না।