বেশ কিছুদিন ধরে লংগার ভার্শনে বাংলাদেশের প্রধাণ স্পিনার তিনি। সম্প্রতি তিন ফরম্যাটেই বিসিবির চুক্তি পেয়েছেন। তিনিও নিজেকে তিন ফরম্যাটের উপযুক্ত করতে অ্যাকশন বদলানোর কাজ করছিলেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সাথে। কিছুটা ভেট্টোরির অ্যাকশনেই নতুন চেষ্টা করছিলেন।
খেলা ৭১-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তাইজুল ইসলাম জানালেন, নতুন অ্যাকশন এখনই মাঠে চেষ্টা করবেন না। আপাতত আগের অ্যাকশনেই বল করবেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফেরা, সাকিব আল হাসানের সাথে জুটি এবং তিন ফরম্যাটসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার।
অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলবেন ,কতটা রোমাঞ্চিত?
– আমার কাছে মনে হয় এটাই একটা বাস্তব পরিস্তিতি। এটা সময়ের ব্যাপার। অনেক দিন ধরেই আমরা ক্রিকেটের বাইরে। শুধু আমাদের দেশে না। গোটা বিশ্বেই একই অবস্থা। যারা ক্রিকেটে ফিরছে তারা অনেক দিন পরেই ফিরছে। আমরাও ফিরবো। অনেক দিন পর খেলবো। সেখান থেকে দেখা যায় যে একটু রোমাঞ্চিত।
এই দীর্ঘ বিরতিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কতটা মিস করেছেন?
– না, আসলে মিস তো সব সময়ই করি; যখন খেলা থাকেনা তখনও করি। এখন লম্বা সময় শুধু আমাদের দেশ না, পুরো বিশ্বেরই একই অবস্থা ছিলো। আমরা ১০ মাস হলো মাঠের বাইরে। এটা আসলে দুঃখজনক ব্যাপার ক্রিকেটের জন্য; যে কোন ইভেন্টের জন্যই আর কি। তারপরও এটা হতাশা জনক বিষয় এতো দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা।
এটা তো আপনার জন্য নিশ্চয় নতুন অভিজ্ঞতা না। এক সময় শুধু টেস্টই খেলেছেন আপনি। বাংলাদেশ তো বছরে বেশী টেস্ট পায়না। একটা টেস্টের পর আরেকটা টেস্ট খেলতে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে আপনাকে?
– আসলে খেলা চলতে চলতে যখন গ্যাপ হয়, তখন কঠিন হয়ে যায় পারফরম করা। আপ-ডাউনটা বেশী হয় তখন। দেখা যায়, ঐ সময় জাতীয় দলের খেলা না থাকলেও অন্য খেলা থাকে। বিসিএল থাকে, জাতীয় লীগ থাকে, ডিপিএল বা আরো টুর্নামেন্ট থাকে। হয় তো টেস্ট থাকেনা। কিন্তু কোন না কোন খেলার ভিতর থাকি। কিন্তু এই গ্যাপে সেটাও হয়নি। আমার কাছে দুইটা দুই ধরণের অভিজ্ঞতা।
দীর্ঘ দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামবে বাংলাদেশ, এটা ক্রিকেটারদের মানসিকতায় কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে?
– মানসিকতায় কতটুকু প্রভাব ফেলবে, সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। কারণ আমরা ইতিমধ্যে দুইটা টুর্নামেন্ট খেলে ফেলেছি। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা খুব যে বড় ধাক্কা হবে তা না।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ঘোষণা করেছে যেখানে নেই প্রথম সারির ক্রিকেটাররা। সিরিজে কি বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখবেন?
– আমি অবশ্যই চাই বাংলাদেশ ভালো করুক। আমাদের ক্রিকেটাররা ভালো খেলকু। তার মানে, আমরা রিলাক্স থাকবো এবং জিতে যাবো এমন নয়। তাদের সম্পর্কে আমাদের তেমন আইডিয়া নেই। আর তারা যে এমন কোন ক্রিকেটার পাঠাচ্ছে যে কোন দিন ক্রিকেটই খেলেনি, এমন তো না। তারা তাদের ঘরোয়া লিগে পারফরম করেই দলে এসেছে। মূল দল আসলে যে রকম ভাবতাম এখনও সেরকমই ভাবাটা গুরুত্বপূর্ণ।
সব সংস্করণে খেলতে চান বলে নিজের অ্যাকশন বদলে ফেলার চেষ্টা করেছেন। কতটুকু সফল হয়েছেন?
– না, না, অ্যাকশন বদলে ফেলাটা আমি যে ফাইনাল করে ফেলেছি তা কিন্তু না। আমি শুধু দেখতে চেয়েছে যে আসলে কি হয়। অ্যাকশন পরিবর্তন করলে কি হতে পারে, না করলে কি হবে সেটা একটু দেখা আর কি। সবাই কিছু না কিছু পরিবর্তন করে। আমিও সেরকম কিছু চেস্টা করেছি আরকি। কিন্তু (আর্ন্তজাতিক) আগের অ্যাকশনেই বল করবো।
টেস্টে আপনার বড় শক্তি, লাইন-লেংথে টানা বল করে যাওয়া ও ফ্লাইটের বৈচিত্র। অ্যাকশন পরিবর্তন করার চেস্টা করতে গিয়ে সেখানে কি কোন প্রভাব পড়েছিলো?
– টেস্ট ক্রিকেট আলাদা একটা ক্লাসিক জায়গা। এখানে সব সময় আপনি আপনার সেরাটাই করতে চাইবেন আরকি। অনেকেই অনেক কিছু চেষ্টা করে। আমিও সেরকম কিছুই করছিলাম। নতুন কিছু করা যায় কিনা। আরো নতুন কিছু বলতে বৈচিত্র। আসলে একই রকম জিনিস দিয়ে লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা কঠিন। আমি আসলে জানতাম না আমার আগের অ্যাকশনেই আরো ভালো কিছু হতে পারে। এটা করতে গিয়ে বুঝেছি।
এই সিরিজে ভেট্টোরি আসছে না। শোনা গিয়েছিলো ভেট্টোরি আসলে টপ-স্পিন ভালো ভাবে রপ্ত করবেন। এটার কাজ কত দূর?
– করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। একটা জিনিস তো দুই চার দিনে ঠিক হবে না। করতে করতে যখন ম্যাচের ভিতরও করবো তখন কাজ হবে। সব ফরম্যাটে খেলার জন্য ও বাইরের দেশে এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যেনো বেশী সফল হতে পারি এটার জন্যই একটু কাজ করা।
ভেট্টোরির আগে সুনীল যোশির সাথে কাজ করেছেন। যোশির সময় শুধু টেস্ট নিয়ে ভাবতেন, আর এখন ভাবনা জুড়ে সব ফরম্যাট। দুজনের সাথে কাজের পার্থক্য ছিলো কোন?
– দুজনই বড় প্লেয়ার ছিলো। দুজনই ভালো কোচ। আমি সুনীল যোশির সাথে কাজ করছি লাইন লেংথ সহ মূলত টেস্টের বিষয় নিয়ে। তখন আমি শুধু টেস্টেই ছিলাম। কিভাবে ভালো স্পেল করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করেছি। আর ভেট্টোরির সাথে আমি কাজ করেছি সব ফরম্যাট কিভাবে খেলা যায় সেটা নিয়ে।
বিসিবি কিন্তু আপনাকে তিন ফরম্যাটের চুক্তিতেই রেখেছে। তাহলে কি এখন তিন ফরম্যাট খেলার জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছেন?
– হয়তো আমি সাদা বলে অনেক ম্যাচ খেলতে পারি নাই। কিন্তু আগের থেকেই আমি চেস্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু পারতেছিলাম না। আমাকে তো সাদা বলে নিজকে প্রমাণ করতে হবে। সাদা বলে ভালো কিছু করতে পারলে সুযোগটা পাবো। সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সাকিব আল ফিরছেন; সাকিব থাকলে তাইজুলের ভূমিকা এবং সাকিব না থাকলে তাইজুলের ভূমিকার ভিতর কি কোন পার্থক্য থাকে?
– আসলে এটা পার্টনারশিপের একটা বিষয়। আপনি যখন একটা ম্যাচ খেলতে যাবেন আপনার প্রতিটা স্পেল কিন্তু একই রকম হবে না। কখনো আমার ভালো হবে, সাকিব ভাইয়ের খারাপ হবে; যদিও সাকিব ভাইয়ের খারাপ কমই হয়। আবার আমার খারাপ হলে, আরেক জনের ভালো হবে। আসলে বোলিংটা জুটি বেঁধে হয়। একজন রান চেক দিচ্ছি, আরেক জন উইকেট নিচ্ছি। যখনই খেলি, যার সাথেই খেলি জুটি বেঁধে করতে হয়। তবে সাকিব ভাই থাকলে সুবিধা হয়। চাপটা নিজের কাছে কম আসে আর কি।