বাস্তবতায় ম্লান স্বপ্নের সম্ভাবনা

ক্রিকেট প্রতিভার খনি হল ভারত। দেশটাতে জন্ম হয়েছে বেশ কিছু নামজাদা ক্রিকেটারের। অনেক কিংবদন্তি ক্রিকেটারই ভারতের হয়ে আলো কেড়েছেন যুগ ‍যুগ ধরে। আবার অনেকে সম্ভাবনা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু, স্বপ্নটাকে ছুঁতে পারেননি।

তন্মধ্যে রাহুল লক্ষ্মণ সাঙভি একজন। জন্মেছিলেন ১৯৭৪ সালের তিনি সেপ্টেম্বর। ছিলেন একজন বাঁ-হাতি স্পিনার। আরও ভালো করে বললে অর্থোডক্স স্পিন বোলিংয়ের বিরল শিল্পের অধিকারী ছিলেন।

তাঁর গুরু ছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি স্পিনার বিষাণ সিং বেদি। বেদির সরাসরি নজরদারিতে হাতেখড়ি হয়েছে তাঁর। লাইন, লেংথ, বল টার্নের ক্ষমতা সবকিছুই এই কিংবদন্তির কাছ থেকে শিখেছিলেন তিনি। যদিও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে গুরুদক্ষিণা দিতে ব্যর্থ হন সাঙভি।

১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে খেলেছেন দিল্লীর হয়ে। হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে খেলার সময় মাত্র পনেরো রান দিয়ে আটটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। সাঙভি তাঁর এই দারুণ স্পেল দিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধাদের হতবাক করে দিয়েছিলেন। যা প্রায় দুই দশক পর্যন্ত তাঁর সেই পারফরম্যান্স এই ধরনের ফরম্যাটে যেকোনো বোলারের জন্য সেরা স্পেল ছিল। যে পুরনো বিশ্ব রেকর্ড পরবর্তীতে ২০১৯ সালে শাহবাজ নাদিম ভাঙতে সক্ষম হয়েছিলেন।

১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে তার অভিষেক হয়। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাঙভির সেরা পারফরম্যান্সটি ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে এসেছিল। সেদিন তিনি আট ওভার বোলিং করে ২৯ রানের বিনিময়ে তিনটি উইকেট নিয়েছিলেন।

তাঁর এই স্পেল ভারতকে জয়লাভ করতে সাহায্য করেছিল। দারুণ বোলিং প্রতিভার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও সাঙভি মাত্র দশটি ওয়ানডেতে ভারতের জার্সিতে মাঠে নেমেছিলেন। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই একই বছরে তিনি তার সর্বশেষ ওয়ানডেটি খেলেছিলেন।

মুষ্টিমেয় ওডিআই খেলার পর, সাঙভি দিল্লি এবং উত্তর অঞ্চলের ঘরোয়া ম্যাচে মনোযোগ  দেন। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন, অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছিলেন। তার সেই কঠোর পরিশ্রম প্রতিফলিত হয়েছিল মাঠের পারফরমেন্সে। শীঘ্রই রাহুল লক্ষ্মণ সাঙভি জাতীয় টেস্ট দলে খেলার জন্য ডাক পেয়ে যান।২০০১ সালের এক মার্চ ইডেন গার্ডেনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র টেস্টটি খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।

জীবনের প্রথম ও শেষ টেস্টে তিনি দুইটি উইকেট শিকার করেছিলেন ও ব্যাট হাতে মাত্র দুই রান করতে পেরেছিলেন। সেই টেস্টে অস্ট্রেলিয়া ভারতকে দশ উইকেটে হারানোর পর, সাঙভিকে টেস্ট দল থেকে বাদ দেয়া হয়। মাত্র একটা টেস্ট দেখেই সাঙভির সামর্থ্যটা কি করে বুঝে ফেলা গেল? – এমন প্রশ্ন করা যেতেই পারে। সাঙভি কি করতে পারতেন, সেটা আদৌ ভারতীয় ক্রিকেট জানতেই পারেনি।

অথচ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারটা স্বল্প ও মোটামুটি জৌলুসহীন হলেও তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারটা বেশ দারুণ ছিল। তাঁর প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে ৯৫ ম্যাচে তিনি ২.৮৯ ইকোনমিতে  মোট ২৭১ টি উইকেট নিয়েছেন। যেখানে তিনি ১২ বার ফাইফার নিয়েছেন এবং দশ উইকেট নিয়েছেন দুইবার। কিন্তু আফসোস তাঁর এই বোলিং নৈপুণ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এসে মিইয়ে গিয়েছে।

ক্রিকেটাঙ্গনে খেলা ছেড়ে দেয়ার পরেও ক্রিকেট সম্পর্কিত কোন কিছুতেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়টা কাটাতে চান বেশিরভাগ ক্রিকেটারই। রাহুল লক্ষ্মণ সাঙভিও এর ব্যতিক্রম পথে হাঁটেননি। খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার শেষে তিনি দিল্লীর নির্বাচক এবং মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এত কাজের ভিড়ে হয়তো নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব আক্ষেপ করার সময় হয় না তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link