ফেরাটা কতটা সুখকর কিংবা স্বস্তির হলো, তা নাহয় এখনো প্রশ্নের বেড়াজালেই বন্দী থাক। তবে ওয়ানডে দলপতির ব্যাট হাতে রানখরা, বিশ্বকাপের বছরে ফর্মহীনতা— ঠিকই টিম ম্যানেজমেন্টকে ভাবাচ্ছিল।
টিম ম্যানেজমেন্টের সেই চিন্তক অস্থিরতার পারদ হয়তো কমাতে পারেননি তামিম ইকবাল। তবে নিজেকে বলার মতো কিংবা নিজের বিশ্বাসকে পোক্ত করার জন্য ঠিকই একটি ইনিংস খেললেন তিনি। নয় মাস পর অবশেষে পেলেন ফিফটির দেখা।
তামিমের অবশ্য ফিরে পাওয়ার শুরুর গল্পটা বেশ নড়বড়েই হয়েছিল। জশ লিটলের বলে খোঁচা মেরে ক্যাচ দেন দ্বিতীয় স্লিপে থাকা অ্যান্ড্রু বালবার্নির হাতে। কিন্তু আইরিশ এ অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত সহজ ক্যাচটি আর লুফে নিতে পারলেন না। নিজে আক্ষেপে পুড়লেন, হতাশায় ভাসালেন জশ লিটলকেও। ঐ ক্যাচটি তালুবন্দী হলেই যে টাইগার কাপ্তান ফিরে যেতে পারতেন মাত্র ১ রানে।
বলা হয়ে থাকে, বড় ব্যাটাররা সুযোগ পেলেই কাজে লাগান। তামিম ইকবালের সামনে তাই তখন বড় ব্যাটার হয়ে ওঠার মঞ্চ প্রস্তুত। একই সাথে, নিজেকে ফেরানোর তাগিদটাও বুঝি অনুধাবন করলেন তিনি। এরপরের দৃশ্যপটেই সাবলীল তামিমের ব্যাটে নয়নাভিরাম শটের দৃশ্য।
জশ লিটলে ওয়াইডার ডেলিভারিতে একটু লাফিয়ে উঠে ব্যাটে বলে দারুণ টাইমিংয়ে দারুণ এক চার। এরপর মার্ক অ্যাডায়ারের ওভারে গিয়ে কভার ড্রাইভে মারলেন আরো একটি চার। ব্যাস। দারুণ ইনিংস খেলার একটা মোমেন্টাম সেখানেই পেয়ে যান তামিম ইকবাল।
যদিও তাঁর খেলাটা সহজ করে দিয়েছিল অপর প্রান্তের ব্যাটাররাই। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান শান্ত এ দিনও শুরুটা করেছিলেন দারুণ সব শটে। তবে শেষ পর্যন্ত নিজের ইনিংসটা দীর্ঘ করতে পারেননি। ব্যক্তিগত ৩৫ রানে ধরা দেন এ ব্যাটার।
শান্তর পর লিটন দাস বেশ কিছুদিন পর চারে নেমে দারুণ শুরু করেছিলেন। তবে তিনিও উইকেটে থিতু হয়েই উইকেট দিয়ে এসেছেন। ফিরেছেন ৩৫ রানে। তবে এ দুই ব্যাটারের সাথে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ঠিকই নিজের ইনিংসের ভিত গড়ে ফেলেন তামিম ইকবাল।
অন্যদের যাওয়া আসার মিছিলে বাঁহাতি এ ওপেনার ছিলেন ব্যতিক্রম। সময় বুঝে ব্যাটিং করেছেন ঠিকঠাক। বাজে বলগুলোকে অবলীলায় তাঁর উইলো দিয়ে করেছেন বাউন্ডারি ছাড়া।
আর এর মাঝেই ব্যক্তিগত অর্ধশতকেও পৌঁছে যান তামিম ইকবাল। জশ লিটলের করা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে শট খেলে থার্ডম্যান দিয়ে চারের মাধ্যমে তিনি তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৬তম ফিফটি।
২০২২ সালের আগস্টে, হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন তামিম। মাঝে ৯ ইনিংসে ৭ বারই অবশ্য দুই অঙ্ক পেরিয়েছিলেন, একবার ছিলেন অপরাজিত। সেই অপরাজিত ৪১ রানই ছিল এই নয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর।
ফিফটি পূরণের পর স্বাভাবিকভাবেই তামিমের উপরে আরো দায়িত্ব বেড়ে যায়। কারণ ততক্ষণে নেই ৪ উইকেট। এমতাবস্থায় তিনিই একমাত্র উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটার। তাই কিছুটা দেখেশুনেই ইনিংস সংহত করার দিকে মনযোগ দিয়েছিলেন তিনি। তবে আইরিশ বোলারদের উপর ঠিক সেই ভাবে চড়াও হতে পারছিলেন না। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি। ধৈর্য্যচ্যূতি ঘটে তামিমের।
জর্জ ডকরেলের ওপর চড়াও হতে গিয়ে উঠে এসেছিলেন ডাউন দ্য উইকেটে। কিন্তু বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি। লাইন মিস করে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ ওঠে শর্ট থার্ডম্যানে ক্রেইগ ইয়াংয়ের কাছে।
অ্যান্ড্রু বালবার্নির মতো এবার আর ভুল করেননি ক্রেইগ ইয়াং। রীতিমত নিজের খামখেয়ালিপনায় নিজের উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন তামিম ইকবাল। টাইগার অধিনায়কের ইনিংস শেষ হয় ৮২ বলে ৬৯ রান করে। যেখানে ছিল ৬ টি চারের মার।
৬৯ রানের এমন ইনিংস দিয়ে তামিম কি তবে পুরনো ফর্মে ফিরলেন? এমন ইনিংসে কিছুটা স্বস্তি তামিমকে অবশ্যই দিয়েছে। তবে বাস্তবতা বলছে, ম্যাচের অমন সময়ে উইকেট ছুঁড়ে এসে এক প্রকার দলকে বিপদেই ফেলে এসেছেন তিনি। তাছাড়া, একবার জীবন পেয়েও বোধহয় এমন দিনে তামিমের বড় ব্যাটার হয়ে ওঠা হলো না।
প্রায় ১৭ বছরের ক্যারিয়ারসমৃদ্ধ কোন বড় ব্যাটারই বা এমন দিনে ৮১ বল খেলে পরের বলেই উইকেট খুইয়ে দিয়ে আসবেন! প্রশ্ন কিংবা বিস্ময়ে মোড়ানো আক্ষেপ, তামিমের ক্ষেত্রে যেন কোনটিরই সদুত্তর নেই।
তামিম পেরে ওঠেননি। ফেরাটা তাই তাঁর পরিপূর্ণ হলো না। হয়তো আত্মবিশ্বাসহীনতার বলয় থেকে এখনো তিনি বের হতে পারেননি। ফিফটির দিনেও তাই তিনি আজ একরাশ আক্ষেপ আর সীমাহীন এক চিন্তার নাম।
বিশ্বকাপের বছরেই যে তিনি বারবার হারিয়ে যান। এবারেও সেই হারিয়ে যাওয়ার পুনরাবৃত্তি। অতীতের বিশ্বকাপের তিক্ত অভিজ্ঞতার বৈসাদৃশ্য এবারের বিশ্বকাপে ঘটাতে পারবেন তো তামিম? প্রশ্নটা থেকেই যায়।ট