নিজের কথাই রাখছেন না তামিম

আবারও সংবাদ সম্মেলন ও পাল্টা সংবাদ সম্মেলনের দিকেই যেন ছুটে চলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহূর্তে যা কলুষিত করেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল বাংলাদেশের বিশ্বকাপের পারফরমেন্সকে।

সে সময়ে নানামুখী কথাই ভেসে এসেছিল। সে সবের ইতি ঘটেছে বলেই সবাই ধরে নিয়েছিল। তবে নতুন করে আবারও বিতর্কের জন্ম দিলেন তামিম ইকবাল। তিনি জানালেন এই বছরই হচ্ছে না দলে ফেরা। তাছাড়া তাকে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল, এমন মন্তব্যও তিনি করেছেন গণমাধ্যমে।

সেসব তিনি করতেই পারেন। গণমাধ্যমে দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার কথা বলতেই পারেন। কিন্তু কথা হচ্ছে নতুন করে জলঘোলা করবার বিশেষ কোন প্রয়োজন কি আদোতে রয়েছে? তামিম যে নিজের কথার বৈপরীত্য ঘটাচ্ছেন সে বিষয় কি তিনি আন্দাজ করতে পারছেন?

সম্প্রতি এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি এমন কেউ নই যে আমার সহকর্মী সম্পর্কে মিডিয়াতে বলব।’ হ্যাঁ,  সেটা ঠিক তামিম সোজাসাপ্টা কাওকে দোষারোপ করেন না। তবে সেটাই যে আরও বড় সমস্যার সৃষ্টি করে তা সম্ভবত তিনি আন্দাজ করতে পারেন না। হয়ত পারেন, তবুও না বোঝার মত করেই এড়িয়ে যান।

তার বলা বক্তব্যে বেশ কিছু অন্তর্নিহিত অর্থ চাইলেই বের করা যায়। যে যার মত করে তার বলা কথার ব্যাখ্যা দিতে চাইবে। তাতে করে যা হয়, তা হচ্ছে বিভ্রান্তি। এই বিভ্রান্তির কারণে দলের অন্দরমহলের পরিবেশ নষ্ট হয়। দলের মধ্যে থাকা খেলোয়াড়দের পারস্পরিক বিশ্বাসের জায়গাটা হয় বিনষ্ট। সর্বোপরি দল হারায় মনোবল।

গেল বছর হুট করেই তামিমের অবসর কাণ্ড বেজায় প্রভাব ফেলেছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মনোবলে। সে কথা দলের খেলোয়াড়রা অস্বীকার করতে চাইলেও, সেই ঘটনার পরদিন বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের শরীরি ভাষায় ছিল তা স্পষ্ট।

এমন একটা ঘটনার আবারও পুনরাবৃত্তি হয়ত ঘটতে পারে। তাতে করে প্রভাবিত হতে পারে আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স। আর তো মোটে মাস তিনেক বাকি। প্রথমবার যখন ঘটা করে তামিম মিডিয়ার সামনে এলেন তখনও যে বিশ্বকাপের বাকি ছিল মোটে তিন মাস।

সে যাই হোক। বিশ্বকাপের জন্য বাংলাদেশ দল দেশ ছাড়ার পর এক ভিডিও বার্তার শেষে তামিম অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘আমাকে ভুলে যাইয়েন না’। তামিম নিশ্চিতভাবেই চান তাকে যেন কেউ ভুলে না যায়। তাইতো তিনি গণমাধ্যমের সামনেই থাকছেন। যেন দারুণ এক দোটানার মাঝে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তামিমকে। তবে এসব কিছুই আসলে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ভীষণ বাজেভাবে প্রভাবিত করছে।

অথচ হাজারটা সমালোচনা আর বিপরীতমুখী পরিস্থিতির বিপক্ষে গিয়ে ফিরে আসার গল্প তো বাংলাদেশের ক্রিকেটেই রয়েছে। খোদ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তার অফফর্মের সময়টায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে দল থেকে বাদ পড়েন মাহমুদউল্লাহ।

এরপর কোথাও তিনি কথা বলেননি। ছিলেন আড়ালে। নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, ফিরেছেন ঠিক বর্তমান ক্রিকেটের চাহিদা মিটিয়ে। ফিটনেসে উন্নতি এনেছেন। ব্যাট হাতে সমস্ত আঘাতের জবাব দিয়েছেন। তামিম চাইলেই তেমনটি করতে পারতেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় ও চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক হয়ে তিনি সে পথেই ছিলেন।

তবে হায় আফসোস! তিনি আবারও তার পূর্বের পথেই অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি আবারও সেই দুর্দিনের সূচনাই যেন ঘটালেন। এখন জল হয়ত গড়াবে বহুদূরে। দায় তামিম এড়িয়ে যেতে চাইবেন নিশ্চয়ই এবারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link