‘ড্রামাটাইজেশন’ – শব্দটার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় নাটকীয়ভাবে কোন কিছু উপস্থাপন করা। গেল দুইদিনে তামিম ইকবাল, মেহেদী হাসান মিরাজরা যা করলেন তা এই শব্দের নিশ্চিতভাবেই অন্তর্ভূক্ত। তারা এক স্পর্শকাতর বিষয়কে নিয়ে একটা নাটক সাজিয়েছেন। পেছনের কারণ মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের বানিজ্যিক প্রচারণা।
তারা শতভাগ সফল মানুষকে আকর্ষিত করতে। সে বিষয় নিয়ে দ্বিধা নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিম ইকবাল যখন লাইভে এলেন, তখন রীতিমত মানুষের ঢল নেমেছিল সেই লাইভ ভিডিও-তে। তাতেই অবশ্য বোঝা যায় তামিমদের নিয়ে ঠিক কতটা আগ্রহী বাংলাদেশের মানুষ।
মানুষের সেই আবেগের জায়গাকে পুঁজি করেই তামিম, মিরাজ, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা করে ফেললেন এক প্রচারণা। যা ‘নেভেটিভ মার্কেটিং’ – এর অংশও বটে। নেতিবাচকতার একটা বিষবাষ্প ছড়িয়ে মানুষের মনোযোগ কেড়ে নেওয়ার কাজটাই করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সেই সকল ক্রিকেটাররা।
তারা যা করলেন তাতে করে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ঠিক কোথায় গিয়ে ঠেকল- তা হয়ত এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। দলের অন্দরমহলের কোন্দল তো এখনও চলমান। ঠিক সে সময়টায় মানুষের মনে উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে তামিমরা করে ফেললেন একটা বিজ্ঞাপন।
অথচ এই বিজ্ঞাপনে নিয়মিত দেখা যায় বলে সাকিব আল হাসানকে শুনতে হয় গঞ্জনা। তিনি কোন জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গসংগঠনের বিজ্ঞাপনেও সামনে এলে দেশজুড়ে বয়ে যায় সমালোচনার ঝড়। সাকিবকে ডাকাও হয় ‘শো-রুম আল হাসান’। তিনি অর্থের জন্যেই এসব বিজ্ঞাপনে অংশ নেন। সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাকিব সাধারণ বিজ্ঞাপনের অংশ হয়েও তিরস্কারের শিকার হন। তামিম, মিরাজ, মুশফিকরা অন্তত এই দফা সমালোচনার শিকার হওয়ার মতই কাজ করেছেন বলা চলে। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যকার সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞাপনের প্লট সাজানো সৃজনশীলতার চরম বিপর্যয়ই বলা যায়। অথচ ভিন্ন কোন পন্থাতে এই খেলোয়াড়দের ব্যবহার করেই হতে পারত দারুণ কোন প্রচারণা।
এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ঠিক যতটা দায়ী, ঠিক সমপরিমাণ কিংবা কোন কোন ক্ষেত্রে তার থেকেও বেশি দায়ী সেই ক্রিকেটাররা। তাঁদের একটা ‘ক্লিন ইমেজ’ অন্তত রয়েছে। সাকিব আল হাসানের মত বিতর্কের সাথে অন্তত তাদের প্রতিনিয়ত ওঠা-বসা নেই। সেই ইমেজও নিশ্চয়ই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।
তাছাড়া এই ধরণের অবান্তর নাটকীয়তা তাদের গ্রহণযোগ্যতাকেও নিম্নগামী করে। দর্শক, সমর্থকদের একটা মহল তো ইতিমধ্যেই বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করছেন তামিম-মিরাজদের। এমনকি তামিম ইকবাল নিজেও সেটা আন্দাজ করতে পেরেছেন। নিজের লাইভে এসেই তিনি বলেছেন, ‘মানুষ আমাকে গালায়ে উড়ায় ফেলতেসে’।
সে কথা তিনি হাসতে হাসতেই বলেছেন। অর্থাৎ তিনি আগে থেকেই অবগত ছিলেন যে- তারা যে নাটকের মঞ্চায়ন করেছেন তাতে করে নেতিবাচক আবহের সৃষ্টি হবে। সেটা জেনেও তামিমরা সে বিজ্ঞাপনের মুখ হয়েছেন। তাতেই বোঝা যায় নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে অন্তত বাংলাদেশের ক্রিকেটে। দায় গণমাধ্যমেরও কম নয়। বিতর্কিত সেই কল রেকর্ড সম্প্রচার করে তাঁরাও নেতিবাচকতার ভাগিদার হয়েছে।
বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান ও ক্রিকেটার সকলেই জানেন বাংলাদেশের মানুষের আবেগের সাথে মিশে গেছে ক্রিকেট। সাধারণ দর্শকরা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জানতে চান নতুন তথ্য। সেটাকেই পুঁজি করেছে বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান। আবেগকে পুঁজি করে নিজেদের ব্যবসার প্রচারণা করেছেন। আবেগকে পুঁজি করে প্রসার ঘটিয়েছেন। সাধারণ মানুষের এই আবেগকে সস্তা বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়েছে। তাতে করে দর্শকদের ভালবাসা ও আবেগকে খাটো করা হয়- সেটা তামিমরা বোঝেন তো?