আগের দিনই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন, আগামী ছয় মাসে আর্ন্তজাতিক টি-টোয়েন্টি খেলবেন না। আশা করেছেন, এই সময়ে বাকীরা এতো ভালো করবে যে, তার কথা মনেই হবে না।
কথাটার ২৪ ঘন্টাও পার হলো না। তার মধ্যেই সেই তামিম ইকবাল এমন একটা ইনিংস খেলে ফেললেন যে, তার কথা মনে না করে উপায় নেই। ঘোরতর সমালোচকও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে, সেই তারুণ্যের তামিম ফিরে এসেছেন। এই তামিমকে তো আমাদের দরকার।
মাত্র ২৮ বলে করে ফেললেন ফিফটি। সেখানেও থামার কোনো লক্ষ্মণ ছিলো না। এরপর শেষমেশ ৬৪ বলে ১৪টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজিয়ে ১১১ রানে অপরাজিত রইলেন। স্ট্রাইকরেট ১৭৩.৪৩।
কিন্তু তামিম কেনো পারছিলেন না? কোনো কিছু কী তাকে চেপে ধরেছিলো? সাময়িক অবসর কী তাকে চাপমুক্ত করে দিলো?
তামিম সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০২০ সালের মার্চে; প্রায় দুই বছর আগে। এরপর থেকে গত প্রায় দুই বছর সময়ে বাংলাদেশ ২৭ টি টি-টোয়েন্টি খেলে ফেললেও তামিম এই ফরম্যাটে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট খেলেননি। কখনো ইনজুরি, কখনো ব্যক্তিগত কারণ এবং সর্বশেষ বিশ্বকাপে তরুণদের সুযোগ দিতে ছিলেন দলের বাইরে।
কিন্তু বাইরে থাকা এই পুরোটা সময় তামিম ইকবাল এবং তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টি নিয়ে আলোচনা চলেছে। একদিকে তামিম এই ফরম্যাটে আর আর্ন্তজাতিক খেলতে আপত্তি চালিয়ে গেছেন। অন্য দিকে বোর্ড সবসময় তাকে ফিরে পেতে চেয়েছে। আর এর মাঝে বিভিন্ন মাধ্যমে ছিলো তামিম ইকবালের টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে ছেড়া-কাটা করা।
তামিম গত কয়েক বছর ধরেই ঠিক টি-টোয়েন্টি ওপেনারসূলভ ব্যাটিং করতে পারছিলেন না বা করছিলেন না। এই সময়ে পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোর যে প্রত্যাশা থাকে ওপেনারের ওপর, তা তিনি পূরণ করতে পারেননি। তার স্ট্রাইকরেট কখনো কখনো এক শ-এর নিচেও নেমেছে। ফলে স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রতিনিয়ত কথা হয়েছে। আর তামিম এই স্ট্রাইক রেট নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন।
বিরক্তি প্রকাশ করলেও এটা বাস্তবতা ছিলো যে, তামিম সময়ের মত করে পারছিলেন না। এমনকি গত দুই বছরে তিনি ঘরোয়াসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যেসব টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, তাতে তার স্ট্রাইকরেট সমালোচনার বিষয় ছিলো। এই বিপিএলের শুরুতেই টানা দুই ফিফটি পেয়েছেন তামিম। তাতেও সমস্যা ছিলো স্ট্রাইক রেট।
৪৫ বলে ৫২ এবং ৪২ বলে ৫০ রান করেছিলেন তামিম। এরপর দুই ম্যাচে আবার রানই পাননি।
কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানেই অন্য এক তামিম কিভাবে ফিরে এলেন? এর একটা উত্তর হতে পারে যে, মুখে যাই বলুন, মাঠের বাইরের এতো কথা ও তৎপরতায় আসলে বিরক্ত ছিলেন তামিম। হয়তো এসব তার জন্য চাপও হয়ে দাড়িয়েছিলো। জাতীয় দল মাথায় নিয়ে পারফরম করতে পারছিলেন না হয়তো। যেই জাতীয় দলের চিন্তা চলে গেলো, সেই যেনো ফিরে এলেন তামিম ইকবাল।
সোজা কথায় চাপমুক্ত হতেই স্বরূপে তামিম।
এখন তাহলে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ হলো, চাপমুক্ত তামিমকে পাওয়া। সেটা খুব সোজা কথা নয়। তামিমকে জাতীয় দলে আসতে হলে সেই সব আলোচনা পাশে নিয়েই আসতে হবে। অনেক কথা, অনেক মিটিং হবে। আর এসব সয়ে নিয়েই খেলতে হবে। আর তেমন হলে চাপ তো থাকবেই। তাহলে চ্যালেঞ্জটা তামিম নিতে পারেন।
তিনি দেখিয়ে দিতে পারেন যে, চাপ নিয়েও তিনি এই মানের খেলাটা খেলতে পারেন। বল এখন আবার তামিমের কোর্টে।