নীরবে ছুটে চলা তানভীর

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের গত আসরেও তিনি ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। আর এবারো এখন পর্যন্ত তিন নাম্বার অবস্থানেই। তাঁর থেকে কম উইকেট পেয়েও অনেকে খবরের শিরোনাম হন, তাঁদের নিয়ে মাতামাতি হয়, প্রতিভাবান তকমা পান। তবে তানভীর ইসলামকে নিয়ে এমন আলোচনা কখনোই হতে দেখা যায়না। অবশ্য এসব তানভীর থোরাই কেয়ার করেন। বল করবেন, রান দিবেন না, উইকেট নিবেন এটাই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স বিপিএলের ইতিহাসের অনত্যম শক্তিশালী ও গোছানো দল। প্রতিবারই দলটা দেশী ও বিদেশী তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে গড়া হয়। ফলে আলোটা তাঁদের দিকেই থাকে সবসময়। এবারো যেমন লিটন দাস, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা আছেন। এখন আবার সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলরাও চলে এসেছেন।

ফলে কাকে রেখে কার দিকে তাকাবেন। এমনই একটা দলে নিজের কাজটা করে যান তানভীর ইসলাম। প্রায় প্রতি ম্যাচেই তাঁর অবদান থাকেন। কখনো কিপ্টে বোলিং করে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেন। আবার উইকেট নেয়াতেও তাঁর জুড়ি মেলা ভার।

শুরুতেই যেমন বলা হচ্ছিল। গত মৌসুমে সাকিবের সাথে যৌথভাবে তিনি ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। দুজনেই নিয়েছিলেন ১৬ টি উইকেট। এমন একটা মৌসুম কাটানোর পরেও সেভাবে নজরে আসেননি। এমনকি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও তাঁকে কখনো বিশেষ ভাবে পরিকল্পনায় রাখেনি।

এবারো চিত্রটা অনেকটা একইরকম। বিপিএলের এই আসরেও তিনি কুমিল্লার সফলতম বোলার। দলটার হয়ে সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট আছে তাঁর ঝুলিতে। তারচেয়ে বেশি উইকেট নেয়া স্পিনার বলতে আছেন শুধু নাসির হোসেন। আরো অবাক করে তানভীরের ইকোনমি রেট। এই বিপিএলে তিনি ওভারপ্রতি খরচ করেছেন মাত্র ৬.০৭ রান। ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে নিজের প্রথম ম্যাচেই তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।

এরপর পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই করেছেন ধারাবাহিক বোলিং। তাঁর কিপ্টে বোলিং ম্যাচে অনেকটাই এগিয়ে দেয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের। তবে এরজন্য বিশেষ কিছুই পাওয়া হয়না তানভীরের। না কখনো মানুষের প্রশংসা পেয়েছেন, না কখনো নির্বাচকদের নজড়ে আসতে পেরেছেন। তবুও নিজের কাজটা প্রায় প্রতি বছরই করে যাচ্ছেন তানভীর।

আজও যেমন ইনিংসের শুরুতেই রংপুর রাইডার্সকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিলেন তানভীর। পরপর দুই উইকেট নিয়ে কুমিল্লাকে দেখিয়েছেন সহজ জয়ের পথ। এর আগে আগে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা করতে পেরেছিল ১৭৭ রান। সর্বোচ ৪৭ রানের ইনিংস এসেছিল লিটন দাসের ব্যাট থেকে।

তবে জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দিশেহারা রংপুর রাইডার্স। কেননা পাওয়ার প্লেতে বোলিং করেই রংপুরের দুই উইকেট তুলে নেন তানভীর। এরপর আর কখনো ম্যাচে ফিরতে পারেনি দলটা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে নুরুল হাসান সোহানের দল।

তানভীর নিজের প্রথম তিন ওভারে মাত্র ১৩ রান খরচ করে পেয়েছেন দুই উইকেট। এবারো হয়তো আসর শেষে তিনি সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের একজন হবেন। এখন পর্যন্ত তিনি সেই পথেই হেঁটে যাচ্ছেন। তবে টুর্নামেন্ট শেষে কী তানভীরের জীবনে আদৌ কোন পরিবর্তন আসবে? এই পারফর্মেন্সের জন্য বাড়তি নজর কী তিনি পাবেন? সেটা তানভীর পান আর না পান, তাঁর ছুটে চল জারি থাকুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link