আগের ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় অনবদ্য পারফরম্যান্স করেও দলকে জেতাতে পারেননি তানভির ইসলাম। আজও বড় পুঁজি এনে দিতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। তবে ছোট পুঁজি নিয়ে আজও বল হাতে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন এই স্পিনার। কিন্তু আজ আর মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয়নি তাঁকে।
তাঁর বোলিং নৈপুণ্যেই ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের তৃতীয় রাউন্ডের দ্বিতীয় ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে ১০ রানে হারিয়ে এবারের আসরের প্রথম জয় তুলে নিয়েছে শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। দুই ওভারের প্রথম স্পেলে কোন রান না দিয়ে তিন উইকেট শিকার করেন তানভির ইসলাম। আর উইকেট শূন্য দ্বিতীয় স্পেলে দুই ওভারে ৮ রান দেন তিনি।
তবে ১৩৮ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নামা শেখ জামালকে প্রথম ধাক্কা দিয়েছিলেন হাসান মুরাদ। আগের দুই ম্যাচে দলকে দারুণ শুরু এনে দেওয়া মোহাম্মদ আশরাফুলকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার। মুরাদের প্রথম শিকার হয়ে ৪ রান করে আশরাফুল ফিরে যাওয়ার পরের ওভারেই দৃশ্যপট আসেন তানভির ইসলাম।
উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর তানভির ইসলামের প্রথম শিকারে পরিণত হন সৈকত আলী। মাহিদুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৯ রান করে ফিরে যান এই ওপেনার। দলীয় ১৩ রানে দুই ওপেনার ফিরে যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন নাসির হোসেন ও ইলিয়াস সানি।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৫৮ রান। এই জুটিতে যখন জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল শেখ জামাল তখনই বাজে শট খেলতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন দারুণ খেলতে থাকা নাসির হোসেন। ফর্মে ফেরার আভাস দিয়ে এই ব্যাটসম্যান ফিরে যান ২১ বলে ২৮ রান করে।
নাসির ফিরে যাওয়ার পরের ওভারে তানভির ইসলামের জোড়া আঘাতে ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় শেখ জামাল। ইনিংসের নবম ওভারের প্রথম বলে ১ রান করে নুরুল হাসান সোহান তানভিরকে ফিরতি ক্যাচ দেওয়ার পর চতুর্থ বলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান তানভির হায়দার।
এরপর এক প্রান্ত আগলে রাখা ইলিয়াস সানি রান আউটের ফাঁদে পড়লে জয়ের আশা শেষ হয়ে যায় শেখ জামালের। সানির ব্যাট থেকে আসে ২৫ বলে ৩০ রান। তবে শেষের দিকে মোহাম্মদ এনামুল হক ১৩ বলে ১৯ রান করলেও সেটা শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে।
১ বল বাকি থাকতেই ১২৭ রানে অল আউট হয়ে ১০ রানে ম্যাচ হারে শেখ জামাল। শাইনপুকুরের বোলারদের ভিতর তানভির ইসলাম তিনটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া হাসান মুরাদ দুটি ও একটি করে উইকেট পেয়েছেন ইফতেখার ও সুমন খান।
এর আগে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাবকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার সাব্বির হোসেন ও তানজিদ হাসান। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন যোগ করেন ৫৪ রান। তবে ভালো শুরু করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি দুজনের কেউই।
জিয়াউর রহমানের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সাব্বির হোসেন। ২৩ বলে ২০ রান করে সাব্বির ফিরে যাওয়ার এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান। এনামুল হকের গুড লেংথের বল সোজা ব্যাটে খেলতে গিয়ে ৩১ বলে ৩৪ রান করে ফিরে যান তিনি।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন জিয়াউর রহমানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরে গেলে চাপে পড়ে শাইনপুকুর। ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৫১ রান যোগ করে বিপর্যয় সামাল দেন তৌহিদ হৃদয় ও রবিউল ইসলাম।
তবে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও এই সময় রানের গতি বাড়াতে পারেনি শাইনপুকুর। ৩০ বলে মাত্র ২৮ রান করে এবাদত হোসেন প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান তৌহিদ। তবে সঙ্গী হারালেও শেষ পর্যন্ত উইকেটে থেকে দলকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন রবিউল ইসলাম।
২৬ বলে ৩৪ রান করে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটসম্যান। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে শাইনপুকুর। শেখ জামালের বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন এবাদত হোসেন ও জিয়াউর রহমান। আর বাকি উইকেটটি পেয়েছেন এনামুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব: ১৩৭/৫ (ওভার: ২০; সাব্বির- ২০, তানজিদ- ৩৪, তৌহিদ- ২৮, রবিউল- ৩৪*, মাহমুদুল- ১, সুমন- ৯, রবিউল- ৫*) (এবাদত- ৪-০-৩৭-২, জিয়াউর- ৪-০-১৬-২, এনামুল- ৩-০-১৭-১)
শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব: ১২৭/১০ (ওভার: ১৯.১; সৈকত- ৯, আশরাফুল- ৪, নাসির- ২৮, সানি- ৩০, নুরুল- ১, তানভির- ০, শুভ- ১৫, জিয়াউর – ৯, এনামুল- ১৯) (তানভির- ৪-২-৮-৩, হাসান- ৪-০-৩৪-২)
ফলাফল: শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব ১০ রানে জয়ী।