রোমাঞ্চকর শুরুর শেষটা সাদামাটা

মুলতানে টেস্ট ম্যাচের আগে নিজের টেস্ট ক্যাপটা হাতে পেলেন তৌফিক উমর। রোমাঞ্চের মহাসাগরের অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন পাকিস্তানের তরুণ ব্যাটার। ২০০১ সালে তখন তাঁর বয়স তো কেবল তখন বিশ। তরুণ ক্রিকেটার, শিরা-ধমনীয়র সবখানেই যেন ধাবমান আগ্নেয়গিরির লাভা। তবে সকল স্নায়ুচাপের উর্ধ্বে উঠে তিনি দমন করেছিলেন।

মুলতানে টেস্ট ম্যাচের আগে নিজের টেস্ট ক্যাপটা হাতে পেলেন তৌফিক উমর। রোমাঞ্চের মহাসাগরের অথৈ জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন পাকিস্তানের তরুণ ব্যাটার। ২০০১ সালে তখন তাঁর বয়স তো কেবল তখন বিশ। তরুণ ক্রিকেটার, শিরা-ধমনীয়র সবখানেই যেন ধাবমান আগ্নেয়গিরির লাভা। তবে সকল স্নায়ুচাপের উর্ধ্বে উঠে তিনি দমন করেছিলেন।

তৌফিক নিজের উপর আসা সকল চাপ সেদিন দমন করেছিলেন। তিনি সেদিন বাংলাদেশের বোলারদেরও দমন করেছিলেন। নিজের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকানোর থেকে আনন্দের আর কি-ই বা হতে পারে। তিনি সেটা করে দেখেছিলেন। সদ্যই টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া একটা দলের বোলারদের আত্মবিশ্বাসের দেয়ালে সপাটে হাতুড়ি পেটা করেছিলেন তৌফিক উমর।

নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্যে পাহাড়সম রান টপকানোর একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছিল গোটা পাকিস্তান দল। আর সে পাহাড়সম রানের ভিত গড়ে দিতে সহয়তা করেছিলেন ২০ জুন ১৯৮১ সালে পাকিস্তানের লাহরে জন্ম নেওয়া তৌফিক উমর। তিনি খেলেছিলেন ১০৪ রানের অনবদ্য এক ইনিংস। দুই ইনিংস মিলিয়েও মুলতানের সে টেস্টে পাকিস্তানের এক ইনিংসের রান টপকাতে পারেনি টেস্ট ক্রিকেটের নবাগত দল বাংলাদেশ।

সেখান থেকেই শুরু তৌফিক উমরের পথ চলা। দীর্ঘ একটা পথ তিনি পাড়ি দিয়েছেন পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে। ১৩ বছরের এক যাত্রায় অনেক সুখ স্মৃতির কারিগর থেকে শুরু করে সাক্ষীও তিনি। তাঁর ব্যাটিং দক্ষতার প্রশংসা যেন ছিল পুরো পাকিস্তান জুড়েই। তৌফিক নিজের ব্যাটার সত্ত্বার বলেই টিকে ছিলেন জাতীয় দলে। ব্যাটটা দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে যেত।

অধিকাংশ ক্রিকেটারদেরই প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের ব্যাটিং গড়টা আন্তর্জাতিকে তুলনায় বেশি থাকে। তবে সেদিকটায় খানিকটা ভিন্ন পথের সারথি তৌফিক উমর। নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে তাঁর টেস্টে ব্যাটিং গড় ৪৫ এর আশেপাশে ঘোরাঘুরি করত। যদিও ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে সেই গড় ক্রমশ নিম্নগামী হয়েছে। তবে সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটারদের একজন হিসেবেই বিবেচিত হতেন তিনি।

তবে এই ব্যাটার সত্ত্বার ফাঁক গলিয়ে তিনি মাঝে মাঝেই বনে যেতেন একজন দারুণ অফ-স্পিন বোলার। তবে সে দিকটা আন্তর্জাতিক ঘরোয়া খুব একটা বিকশিত হয়নি কখনোই। সেখানটায় তিনি ‘পার্টটাইমার’ হিসেবেই করেছেন বিচরণ। অথচ ‘লিস্ট-এ’ ক্যারিয়ারে ‘ফাইফার’ রয়েছে তৌফিকের নামের পাশে। এখানেই শেষ নন। তিনি যেন ছিলেন দু:সময়ের কাণ্ডারি।

উইকেটরক্ষকের দস্তানা হাতেও তিনি নেমে গিয়েছেন। এমন বহু নজির রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ২০০৩ সালের দিকে একদফা তিনি পাকিস্তানের তৎকালীন উইকেটরক্ষক রশিদ লতিফের ইনজুরিতে দস্তানা হাতে দাঁড়িয়ে যান উইকেটের পেছনে। যখন যেভাবে প্রয়োজন তৌফিক হাজির হয়ে যেতেন সে বেশেই। তবুও খুব একটা দীর্ঘায়িত হয়নি তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার।

২২টি ওয়ানডে আর ঠিক তাঁর দ্বিগুণ টেস্ট ম্যাচেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। এই সময়ে তাঁর দুই প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই করেছেন বড় অংকের রান। কাকতালীয়ভাবে এই দুই দলই আফ্রিকা মহাদেশের। তিনি টেস্টে ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। এই ছয় ম্যাচে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৭৩০ রান। গড়টাও দারুণ, ৬০.৮৩। দুইটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি দ্বিগুণ সংখ্যক হাফ সেঞ্চুরিও করেছেন তিনি।

অন্যদিকে, সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁর প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। তাঁদের বিপক্ষে ২৬০ রান করেছেন ছয় ম্যাচে। তিন খানা হাফ সেঞ্চুরির বদৌলতে। সেখানে তাঁর গড় ছিল ৫২ এর ঘরে। ক্যারিয়ারটা একটানা হয়ে উঠতে পারেনি। শেষের দিকে আসা-যাওয়ার মাঝে ছিলেন। আরও কয়েকটা টেস্ট খেলার আক্ষেপ নিয়েই তিনি ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।

হয়ত লাল বলের ক্রিকেটে তিন হাজার রানের মাইল ফলক পার করতে না পারার আক্ষেপটা নিশ্চয়ই তাঁকে পোড়ায়। তৌফিক উমর নিশ্চয়ই সে আক্ষেপের সাথেই মনে করেন নিজের ফেলে আসা ক্রিকেটীয় দিনগুলোর কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link