টেনিস মূলত ব্যক্তিগত খেলা। এখানে ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে বড় কিছুই হতে পারেনা।
কিন্তু তার ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকা খুজতে গেলে আপনি হতাশ হবেন। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ র্যাংকিং আট। কখনো গ্র্যান্ড স্লাম ফাইনালেও ওঠেননি। মোদ্দা কথা, অর্জন বলতে কিচ্ছু নেই। তারপরও তিনি ছিলেন সুপার স্টার!
শত মানুষের নিদ্রাহীনতার কারণ ছিলেন তিনি। গুগলে রেকর্ড পরিমান খোজা হতো তার ছবি। কোনো কিছু না জিতেও তিনি ‘রানী’ ছিলেন। তিনি আনা কুর্নিকোভা।
ডাবলসে ঘরে তুলেছেন দু’টি গ্লান্ডস্ল্যাম শিরোপা। ডাবলসে আনা কুর্নিকোভার সঙ্গী ছিলেন টেনিস গ্রেট মার্টিনা হিঙ্গিস। মার্টিনা হিঙ্গিসের সাথে জুটি বেধে ১৯৯৯ এবং ২০০২ সালে জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা এবং ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে ডাব্লুউটিএ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাও জিতেছিলেন তিনি।
টেনিস ক্যারিয়ারের সময় কিংবা টেনিস ক্যারিয়ারের শেষের পর কখনই সে তাঁর নিজের টেনিস ক্যারিয়ারের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেননি। তিনি ক্যারিয়ার জুড়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তাঁর সৌন্দর্যের জন্য। ক্যারিয়ার জুড়ে তাঁর পাওয়া এন্ডোর্সমেন্ট এবং ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়া সবই তাঁর রুপের গুণে।
আন্না কুর্নিকোভা এসেছিলেন এক স্পোর্টিং পরিবার থেকে। আনা কুর্নিকোভার বাবা ছিলেন একজন রেসলার এবং তার মা ছিলেন একজন দৌড়বিদ। আর আনা কুর্নিকোভা সৎ ভাই অ্যালান ছিলেন যুব ওয়ার্ল্ড গলফ চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন। স্পোর্টিং পরিবার থেকে আসার কারণে টেনিস খেলার জন্য পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে টেনিস বয়সে হাতেখড়ি হয় আনা কুর্নিকোভার। তখন তিনি খেলতেন শখের বসে। সেই সময়ে তাঁর পরিবারের কেউ ভাবতে পারেননি তিনি টেনিসে তাঁর নিজের ক্যারিয়ার গড়তে যাচ্ছেন। ১৯৮৯ সালে মাত্র আট বছর বয়সে সদস্য হন স্পার্টাক টেনিস ক্লাবের।
এখান থেকেই নিজের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় আনা কুর্নিকোভার। পরের বছরে বিশ্বের টেনিস স্কাউটদের নজর কাড়েন আনা কুর্নিকোভা। মাত্র ১০ বছর বয়সে চুক্তি করেন নিক বোলেটরিসের টেনিস একাডেমির সাথে। আর এর ফলেই রাশিয়া ছেড়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের ব্রাডেনটন শহরে।
বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে বেশ সফল ছিলেন আনা কুর্নিকোভা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে তিনি জেতেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপ এবং ইতালিয়ান ওপেনের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট। এছাড়াও সবচেয়ে কম বয়সী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে জিতে নেন ফেড কাপের শিরোপা। বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলার সময় খুব দ্রুতই বিভিন্ন সাফল্যে কারণে খুব দ্রুতই সাফল্যের সিড়ি বাইতে শুরু করেন আনা কুনিকোভা।
বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে বেশ ভালো খেলার কারণেই বড়দের টুর্নামেন্টে বেশ তাড়াতাড়িই নাম লেখান আনা কুনিকোভা। কিন্তু সেখানে কোনো সাফল্য পেতে পারেননি তিনি। ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মত এটিপি র্যাংকিয়ে শীর্ষ ২০-এর তালিকায় আসেন তিনি। তখনকার নাম্বার ওয়ান মার্টিনা হিঙ্গিসকে হারিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন তিনি।
এরপর আর হৈচৈ ফেলানোর মত আর কিছুই করতে পারেননি তিনি। এরপর তিনি হৈচৈ ফেলেছেন শুধু গ্ল্যামারস জগতে। টেনিস ক্যারিয়ারে তাঁর সর্বোচ্চ অর্জন ছিলো উইম্বলডন টেনিসের সেমিফাইনাল খেলা। এছাড়া আর কোনো সাফল্য নেই। আর এটিপি র্যাংকিয়ে তাঁর সর্বোচ্চ অর্জন আট নাম্বার পজিশনে উঠে আসা।
যেখানে টেনিসের শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়দেরই নিজেদের পরিচিতি বাড়াতে বেশ কষ্ট করতে হয় সেখানে শীর্ষ ১০ এর একদম নিচের দিকের খেলোয়াড়দের নিজের পরিচিত বাড়াতে হিমশিম খেতে হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই দিক থেকে বেশ ব্যতিক্রম ছিলেন আনা কুর্নিকোভা। নিজের সৌন্দর্য্য দিয়ে ঘুম নষ্ট করেছেন হাজারো পুরুষের। এই কারণেই সহজেই বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে পেরেছিলেন তিনি।
গুগলের মতে তিনি হলেন বিশ্বের শীর্ষ নারী ক্রীড়াবিদ যাকে কিনা গুগলে সবচেয়ে বেশি বার খোঁজা হয়েছে। এইসবের পাশাপাশি নিজের প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন আনা কুনিকোভা। তাঁর সাথে প্রেমে সম্পর্ক ছিলো হকি খেলোয়াড় পাভেল বুরে এবং সার্জেই ফেদেরোভের। এছাড়াও সংগীত শিল্পী ইগলেসিয়াসের সাথেও সম্পর্ক ছিলো তাঁর।
টেনিস ক্যারিয়ার শেষ করার পর নিজেকে গ্ল্যামারাস জগতের সাথে জড়ান তিনি। মাত্র ১০ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসার পর থেকে সেখানেই স্থায়ী আবাস গড়েন তোলেন তিনি। ক্যারিয়ার শেষের পর আমেরিকাতেই গ্ল্যামারস জগতের সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের টিভি শো দ্যা বিগগেস্ট লুজার প্রোগ্রামের ১২তম মৌসুমে ট্রেইনার হিসেবে ছিলেন আনা কুনিকোভা। এরপরের মৌসুমে তাঁকে আর দেখা যায় নাই।
টেনিস ক্যারিয়ার শেষের পর গ্ল্যামারাস জগতের সাথে সাথে তিনি চ্যারিটি কাজের সাথেও যুক্ত হন। টেনিস ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানোর পরও টেনিসের সাথে সাথে যুক্ত থাকার জন্য তিনি যোগ দেন সেন্ট লুইস এসেসে অফ ওয়ার্ল্ড টিম টেনিসের সাথে। এখানে এখনো ডাবলস টেনিসের সাথেই যুক্ত আছেন তিনি।
টেনিসের সাথে গ্ল্যামারাস অনেক দ্রুতই পেয়ে যাওয়ায় টেনিস ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতে পারেননি তিনি।