শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত হওয়ায় আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ খুশি হয়েছি। কোটি টাকা খরচ হতো এই সফরে, তার পরও টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি যথেষ্ট হতো না নিশ্চিতভাবেই। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলার মানে নেই। নিজেদের অর্থ দেদার খরচ করে তো নয়-ই।
সামনে একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হবে, ঘরোয়া ক্রিকেট শুরুর আয়োজন চলছে, স্থগিত হওয়া প্রিমিয়ার লিগ আবার শুরু করে পরে নতুন মৌসুমেরটাও করার চেষ্টা করা হবে, খুবই আশার কথা। জাতীয় দলের জোড়াতালি দেওয়া সফরের চেয়ে এসব বরং ভালো।
কোনো একটি ব্যাপারে বিসিবির বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত ঠিক হওয়া, কোনো ক্ষেত্রে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বেশির ভাগ কথার সঙ্গে একমত হওয়ার সুযোগ খুব বেশি আসে না। এবার সেই বিরল ব্যাপারই হয়েছে।
প্রকাশ্যে বিসিবির সমালোচনা, পাপন ভাইয়ের সমালোচনা নানা সময়েই করে আসছি। বাধ্য হয়েই, যৌক্তিক কারণেই। আমার চেয়ে বেশি প্রকাশ্য সমালোচনা আমার চারপাশে মনে হয় না আর কেউ করে। তাই প্রশংসা যেখানে প্রাপ্য, সেটা করতেও কোনো সমস্যা নেই। করোনাভাইরাস বিপর্যয়ের শুরু থেকে শ্রীলঙ্কা সফর স্থগিত করা এবং সামনের পরিকল্পনা নিয়েও বিসিবির নানা পদক্ষেপ দারুণ প্রশংসনীয়।
সরকারী সিদ্ধান্তে সব বন্ধ হওয়ার আগেই গত মার্চে দেশে ক্রিকেট বন্ধ করা হয়েছে। যা সময়োপযোগী ছিল। লকডাউনের সময়টায় ক্রিকেটারদের মানসিক স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার খবর রাখতে অ্যাপ চালু করা হয়েছে। ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের নিয়ে অনলাইনে নানা সেশন করা হয়েছে। ক্রিকেটারদের যারা ঘরে বসে ফিটনেসের কাজ করতে সমস্যায় পড়েছেন, তাদের ঘরে ঘরে ফিটনেসের সরঞ্জাম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
অনেক চ্যারিটিও করেছে বিসিবি এ সময়। চ্যারিটিগুলোর দু-একটি নিয়ে যদিও আপত্তি করা যায়, তবে কঠিন এই সময়ে মানবিক দিক থেকে সেসব আপত্তি উপেক্ষা করা যায় অনায়াসেই।
সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে, তা হলো দেশে ক্রিকেট ফেরানোর যে পথ ধরে বিসিবি এগিয়েছে এবং এগোচ্ছে। একটা সময় দেখলাম আমাদের ক্রিকেটারদের কেউ কেউ অস্থির হয়ে উঠছে মাঠে ফিরতে। তার চেয়েও ভয়াবহ ছিল, অনেক মিডিয়া কেবল কিছু নিউজ করতে হয় বলেই নিউজ করে গেছে, কেন ক্রিকেটারদের অনুশীলন শুরু হচ্ছে না। অথচ তখনও অবস্থা বেশ বাজে। তাছাড়া তখন সামনে কোনো সিরিজ নেই, খেলা নেই। কোচিং স্টাফদের আসার উপায় নেই। অনুশীলন শুরুর সঙ্গে জীবন-জীবিকার ব্যাপারও নেই। তার পরও অতি উৎসাহী ছিলেন অনেকে। যাহোক, গুরুত্বপূর্ণ হলো, সে সব চাপে বিসিবি কর্তারা এলোমেলো হননি, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি।
এমনকি গত ১৯ জুলাই যখন ব্যক্তিগত অনুশীলন শুরু হলো ক্রিকেটারদের, তখনও বিসিবি বলেছে, তারা ক্রিকেটারদের নিরুৎসাহিত করছে অনুশীলন করতে, কিন্তু যারা তার পরও করতে চায়, তাদের জন্য যথাসম্ভব আদর্শ ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। খুবই সেন্সিবল সিদ্ধান্ত ছিল সেটি।
এরপর ধাপে ধাপে ক্রিকেটারদের সংখ্যা বাড়া, তাদের সূচি করে দেওয়া, একক অনুশীলন থেকে ২-৩ জন করে, পরে গ্রুপ ধরে করা। কোভিড পরিস্থিতিতে বোর্ডের পরিকল্পনাগুলো দারুণ ছিল। যদিও স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাপনা, জৈব-সুরক্ষা বলয় ব্যবস্থাপনায় টুকটাক কিছু ঘাটতি-ফাঁক ছিল, তবে সেটি স্বাভাবিকই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ওসব শতভাগ সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স, মেডিকেল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাই বড় ধন্যবাদ পেতেই পারে।
এরপর শ্রীলঙ্কা সফর। লঙ্কানদের শর্ত মেনে এখন সফরে গেলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতো। আগে আমরা অনেকবারই দেখেছি, বিদেশ সফরে আমাদের প্রস্তুতির ঘাটতি থেকে যায়, প্র্যাকটিস সেশন ও ম্যাচ পর্যাপ্ত পাই না। গত নভেম্বরেই ভারত সফরে গোলাপি বলে যথেষ্ট অনুশীলন ছাড়া, প্র্যাকটিস ম্যাচ ছাড়া খেলতে রাজি হয়ে গেছে বিসিবি। এবার বিসিবি এখানে কোনো আপোস করেনি, পাপন ভাই বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, এটা আনন্দময় বিস্ময়।
আরও দুই সপ্তাহ ক্যাম্প চলবে, নিবিড়ভাবে কাজ করা যাবে। এরপর একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হবে, হয় কর্পোরেট হাউজগুলিকে নিয়ে কিংবা জাতীয় দল-এইচপি-অনূর্ধ্ব ১৯ নিয়ে, এই ভাবনাও ভালো। এরপর পারিপার্শ্বিকতা অনুযায়ী প্রিমিয়ার লিগ, অন্যান্য লিগ, জাতীয় লিগ – সবই দারুণ সেন্সিবল।
যদিও এসব নরম্যালই হওয়ার কথা, তাদের দায়িত্বই এগুলো। কিন্তু এই দেশের বাস্তবতায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দায়িত্ব পালন করাও বড় ব্যাপার। গত ৬ মাসের জন্য অন্তত, ধন্যবাদ বিসিবি।
– ফেসবুক থেকে